ডা. ফজলে রাব্বী খান
বিশ্বব্যাপী পঙ্গুত্বের অন্যতম প্রধান কারণ স্ট্রোক। গবেষণা অনুযায়ী স্ট্রোকে আক্রান্ত ৭০ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে পঙ্গুত্ববরণ করে।
বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হয় এবং তার মধ্যে ৫৫ লাখ মানুষ প্রতিবছর স্ট্রোকের কারণে মারা যায়। বাংলাদেশেও এই সংখ্যা কম নয়, বছরে প্রায় ২০ লাখ মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতি হাজারে ১১.৩৯জন লোক স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন।
আরেক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২৫ বছরের বেশি বয়সী ৪জনের মধ্যে ১জন তাদের জীবদ্দশায় স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। স্ট্রোকে যেকোনো বয়সেই আক্রান্ত হতে পারেন, তবে ৫৫ বছর পর ঝুঁকি বেশি থাকে এবং প্রতি দশকে ঝুঁকি দ্বিগুণ বেড়ে যায়। অথচ আক্রান্ত হওয়ার পর সাড়ে তিন ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে পৌঁছানো এবং সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসা শুরু করা গেলে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব। পঙ্গুত্বের ঝুঁকিও কমানো সম্ভব।
তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, শুধুমাত্র স্ট্রোকের লক্ষণগুলো ভালোভাবে না বুঝার কারণে, রোগীরা ঘরেই বিশ্রাম নেন এবং অপেক্ষা করেন ভালো অনুভব করার।
যখন একদমই কমে না তখন হাসপাতালে আসেন এবং চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। এরমধ্যে ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে যায়। আর এই উপলব্ধি থেকেই এবার বিশ্ব স্ট্রোক দিবস পালিত হচ্ছে। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়, স্ট্রোকের লক্ষণ জানুন, মিনিটেই বাঁচিয়ে দিন বহু জীবন।
স্ট্রোকের লক্ষণ কী?
স্ট্রোকের লক্ষণ সমূহ মনে রাখার সহজ উপায়—BEFAST (বি-ফাস্ট)—ব্যালেন্স, আইস, ফেস, আর্মস, স্পিস ও টাইম। অর্থাৎ শরীরের ভারসাম্য হারালে, দৃষ্টিভ্রম হচ্ছে মনে হলে, মুখের পেশি বা এক পাশ অবশ লাগলে বা বাঁকা হয়ে গেলে, বাহুতে ব্যথা বা হাতের পেশি দুর্বল হয়ে গেলে এবং কথা মুখের মধ্যে জড়িয়ে যাচ্ছে মনে হলে কোনো কালক্ষেপণ না করে দ্রুত হাসপাতালে আসতে হবে এবং চিকিৎসা শুরু করতে হবে।
অনেক সময় সুগার কমে যাওয়া, ব্রেইন টিউমার হওয়া, ইনফেকশন হওয়া বা হঠাৎ শরীরের এক অংশ দুর্বল হয়ে গেলেও স্ট্রোকের মতো মনে হতে পারে, তবে আসলে তা স্ট্রোক না। এটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য রোগীকে হাসপাতালে আসতে হবে।
চিকিৎসক দ্রুত (এক ঘণ্টার মধ্যে) নির্দিষ্ট কিছু পরীক্ষা করে দেখবেন এবং স্ট্রোক সম্পর্কে নিশ্চিত হবেন। মনে রাখবেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসা শুরু করলে জটিলতা বেশ খানিকটা কমে যাবে।
প্রতিরোধে করণীয়?
প্রতিরোধ সর্বাপেক্ষা উত্তম। যেহেতু এটা একটা লাইফস্টাইল ডিজিজ, প্রয়োজনীয় জীবনাচার না মেনে চলার জন্যই এর সম্ভাবনা বেশি তাই শুরুতেই খেয়াল রাখতে হবে দৈনন্দিন জীবনাচার যেন স্বাস্থ্যসম্মত হয়।
১। নিয়মমাফিক খাবার খাওয়া।
২। সম্পৃক্ত চর্বি যেমন; প্রাণীজ তেল, ডিমের লাল অংশ, ঘি, মাখন, অথবা জমে যায় এমন ধরনের যেকোনো তেল খাওয়া কমিয়ে দিতে হবে।
৩। পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট যেমন সয়াবিন তেল খাওয়া যাবে। মাছ এবং মাছের তেলও উপকারী।
৪। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন ভিটামিন সি, ই এবং বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ খাবার স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
৫। ধূমপান একেবারেই করা যাবে না।
৬। নিয়মিত নিয়ম করে হাটা বা হালকা দৌড়ানো।
৭। দুশ্চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করা।
৮। ডায়াবেটিসের সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণ।
৯। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা।
১০। কোলেস্টেরল কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় রাখা।
ডা. ফজলে রাব্বী খান । সেক্রেটারি জেনারেল, হেলদি লিভিং ট্রাস্ট
Discussion about this post