হার্টবিট ডেস্ক
দেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ ভাগ এর কাছাকাছি থাইরয়েড সমস্যায় ভুগছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি (বিইএস)।
আজ বুধবার (২৫ মে) দুপুরে রাজধানীতে হোটেল সোনারগাঁওয়ের বল রুমে বিশ্ব থাইরয়েড দিবসে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়।
বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি (বিইস) জানায়, দেশের বিপুল জনগোষ্ঠি থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত। এদের অর্ধেকের বেশি জানে না যে, তারা থাইরয়েড সমস্যায় ভুগছেন। বাংলাদেশে থাইরয়েড সমস্যার সকল ধরণকে এক সাথে হিসেব করলে তা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ ভাগ এর কাছাকাছি হবে। ভারতের অবস্থা অনেকটা এমনই। প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলাদের প্রায় দুই শতাংশ এবং পুরুষদের প্রায় ০.২ শতাংশ হাইপারথাইরয়েডিজম রোগে ভোগে।
থাইরয়েড গ্রন্থির গুরুত্ব তুলে ধরে বিইএস জানায়, গলার সামনের দিকে থাইরয়েড গ্রন্থি অবস্থিত। এটি দেখতে প্রজাপতি সাদৃশ এবং এটি ট্রাকিয়া বা শ্বাসনালিকে প্যাঁচিয়ে থাকে। যদিও এটি একটি ছোট গ্রন্থি, কিন্তু এর কার্যকারীতা ব্যাপক। থাইরয়েড গ্রন্থি কর্তৃক নি:সৃত হরমোন মানব পরিপাক প্রক্রিয়ায় অন্যতম ভূমিকা পালন করে।
ভ্রণ অবস্থা থেকে আমৃত্যু থাইরয়েড হরমোনের প্রয়োজন অপরিহার্য। এ হরমোনের তারতম্যের জন্য শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি, শরীর মোটা হওয়া, ক্ষয় হওয়া, নারীদের বিভিন্ন সমস্যা, ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা, হার্টের সমস্যা এবং চোখ ভয়ঙ্করভাবে বড় হয়ে যেতে পারে। বন্ধ্যত্বের অন্যতম কারণ হিসেবে থাইরয়েড হরমোনের তারতম্যকে দায়ী করা হয়। শারীরিক কার্যক্ষমতা সঠিক রাখার জন্য নির্দিষ্ট মাত্রায় এ হরমোন শরীরে থাকা একান্ত জরুরি।
বিইস’র পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে ৩.৯ শতাংশ থেকে ৯.৪ শতাংশ হারে হাইপারথাইরয়েডিজম থাকতে পারে। এছাড়া প্রায় ৭ শতাংশ মহিলা ও পুরুষ সাবক্লিনিক্যাল হাইপারথাইরয়েডিজমে ভুগে থাকেন। নবজাতক শিশুদেরও থাইরয়েডের হরমোন ঘাটতি জনিত সমস্যা হতে পারে। এই হার দশ হাজার নবজাতকের মধ্যে ২ থেকে ৮ শতাংশ হতে পারে।
বাড়ন্ত শিশুরাও থাইরয়েড হরমোন ঘাটতিতে ভুগতে পারে। এ সময় থাইরয়েডের হরমোন ঘাটতি হলে শিশুদের দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। পরবর্তী সময়ে দৈহিক বৃদ্ধির সমতা আনয়ন করা গেলেও মেধার উন্নতি করা সম্ভব হয় না।
থাইরয়েড ক্যান্সারের রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধির দিকে। বাংলাদেশের সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও গলগন্ড রোগীদের ৪.৫ শতাংশ এর কাছাকাছি থাইরয়েড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হয়।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের বেশিরভাগ স্কুলগামী শিশু এবং গর্ভবতী মায়েদের আয়োডিনের অভাব রয়েছে। আয়োডিন শরীরে অতি প্রয়োজনীয় থাইরয়েড হরমোন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অথচ সারা পৃথিবীতে এখনও ২,০০০ মিলিয়ন লোক আয়োডিনের অভাবে ভুগছেন।
বাংলাদেশে দীর্ঘদিন থেকেই থাইরয়েড রোগীরা চিকিৎসা পেয়ে আসছেন। এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ এ হরমোন জনিত রোগটির প্রধানত চিকিৎসা দিয়ে থাকে।
এদিকে বিশ্ব থাইরয়েড দিবসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ‘গর্ভাবস্থায় থাইরয়েড চিকিৎসার’ গাইডলাইন প্রকাশ করছে বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি (বিইএস)।
এসময় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব সাইফুল হাসান বাদল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, বিইএস প্রধান পৃষ্ঠপোষক অধ্যাপক ডা. মো. ফারুক পাঠান, বিএমএ সাধারণ সম্পাদক ডা.মো. এহতেসামুল হক চৌধুরী, ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক এ কে আজাদ খান, ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ, বিইএস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. এস এম আশরাফুজ্জামান, প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট অধ্যাপক ডা. মো. হাফিজুর রহমান, ভাইস প্রেসিডেন্ট ডা. ফারিয়া আফসানা, অধ্যাপক ডা.ফিরোজ আমিন, সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহজাদা সেলিম, মেম্বার সেক্রেটারি ডা. মারুফা মুস্তারি, বিএসএমএমই’র এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এমএ হাসানাত, গাইনোকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. বেগম নাসরিন প্রমূখ। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে খ্যাতিমান চিকিৎসকরা অংশগ্রহণ করেন।
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সাল থেকে সারাবিশ্বে থাইরয়েড দিবস পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশে সরকারি পর্যায়ে দিবসটি উদযাপিত না হলেও থাইরয়েড রোগ সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো গত কয়েক বছর ধরেই দিবসটিকে যথাযথভাবে পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করে আসছে। তাই প্রতিবারের মত বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি (বিইএস) এ বছরও বিশ্ব থাইরয়েড দিবস উদযাপন করছে। দেশের সকল মানুষের কাছে থাইরয়েড সমস্যা জনিত প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো পৌঁছে দেওয়াই বিইএস-এর মূল উদ্দেশ্য।
Discussion about this post