হার্টবিট ডেস্ক
স্মার্ট ফোনে সুরক্ষা অ্যাপ ডাউনলোড করে প্রয়োজনীয় তথ্যের পাশাপাশি কোনো শারীরিক জটিলতা আছে কি না তা জানিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। যাদের স্মার্টফোন বা ইন্টারনেট নেই, তারা যাবে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে।
করোনার টিকার জন্য অনিশ্চয়তা কাটল। ৭০ লাখ টিকা দেশে আসা সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
দেশে টিকা আসার আগেই প্রয়োগের বিষয়ে নীতিমালা চূড়ান্ত হয়ে গেছে। আগেই জানানো হয়েছে, অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে টিকা পেতে আগ্রহীদের।
এই নিবন্ধনের জন্য তৈরি হয়েছে ‘সুরক্ষা’ নামে অ্যাপ। এতে নিজের নাম ও তথ্য নিবন্ধন করা যাবে বৃহস্পতিবার থেকে। এটা অবশ্য পরীক্ষামূলক।
পরীক্ষায় উৎরে গেলে ২৫ জানুয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করা হবে অ্যাপটি। আর পরদিন থেকে শুরু হবে আনুষ্ঠানিক নিবন্ধন।
টিকাদান কর্মসূচি শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই নিবন্ধন কার্যক্রম চলমান থাকবে।
যে প্রক্রিয়ায় নিবন্ধন
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, সুরক্ষা অ্যাপে জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে।
ফোন ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, নাম, জন্মতারিখের পাশাপাশি কোনো শারীরিক জটিলতা আছে কি না, পেশা কী- তাও জানাতে হবে।
স্মার্ট ফোনে ইন্টারনেট সংযুক্ত করে অ্যাপটি ডাউনলোড করা যাবে।
অ্যাপে তথ্য দিলে টিকার আপডেট সম্পর্কে গ্রহীতাদের এসএমএসের মাধ্যমে জানানো হবে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ টিকা বিতরণ করতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে। কারা আগে টিকা পাবেন, সেই অগ্রাধিকারের তালিকাটি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন থেকেও সংগ্রহ করা যাবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ‘সুশৃঙ্খলভাবে টিকা দিতে অনলাইনে নিবন্ধন করা হচ্ছে। অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধনের কারণে সব তথ্য সার্ভারে সংরক্ষিত থাকবে। কারা কোন সময়ে টিকা পাবেন তাও অ্যাপের মাধ্যমে জানা যাবে।’
একেকজনকে টিকা দেয়া হবে দুটি করে। খুরশীদ আলম জানান, প্রথম ডোজ দেয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ কবে দেয়া হবে সেটা এসএমএসের মাধ্যমে জানানো হবে।
যাদের স্মার্টফোন বা ইন্টারনেট নেই?
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, যাদের মোবাইল বা ইন্টারনেট সুবিধা নেই তারা ইউনিয়ন পরিষদ বা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে গিয়ে নিবন্ধন করবে।
এ সময় সঙ্গে এনআইডি নম্বর নিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে বিধবা বা বয়স্কভাতা পান এমন তালিকাও সংগ্রহ করে দেখা হবে।
টিকা দেয়ার আগে নিবন্ধন নিয়ে সারাদেশে ব্যাপক প্রচারও চালানো হবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম বলেন, ‘করোনার টিকা প্রয়োগের কর্মসূচি স্বচ্ছতার সঙ্গে বাস্তবায়নের জন্য সুরক্ষা প্লাটফর্ম নামে অ্যাপ বানিয়েছি। এই কাজে আইসিটি বিভাগের সঙ্গে বেসিস ও এটুআই যুক্ত আছে। অ্যাপটি আমাদের নিজস্ব জনবল বানিয়েছে। এজন্য আমাদের কোন অর্থ ব্যয় হয়নি।’
টিকা আসবে কোত্থেকে, কী পরিমাণ লাগবে?
ভারত থেকে আসা টিকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির প্রধান কার্যালয়, কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (সিএমএসডি) এবং রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির নিজস্ব সংরক্ষণাগারে রাখা হবে।
এসব টিকা ওয়াক ইন কুলে (ছোট ঘরের মধ্যে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণ) রাখা হয়। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে এক সঙ্গে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করা হবে।
দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে টিকাদান কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে।
সেই হিসেবে দেশের প্রায় আট থেকে নয় কোটি মানুষকে টিকাদানের লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে ভারতের সিরাম থেকে আসবে তিন কোটি ডোজ, ভারত সরকারের উপহার হিসেবে আসছে ২০ লাখ ডোজ, আবার সারা বিশ্বে ন্যায্যতার ভিত্তিতে টিকা বিতরণে আন্তর্জাতিক জোট কোভ্যাক্স থেকে পৌনে সাত কোটি টিকা পাওয়ার কথা রয়েছে। এর বাইরে অন্যান্য দেশের সফল টিকা আমদানির চেষ্টাও অব্যাহত রয়েছে।
তবে টিকা কার্যক্রমের বাইরে থাকবে পাঁচ থেকে ছয় কোটিরও বেশি মানুষ। এর কারণ, জটিল রোগে আক্রান্ত, গর্ভবতী ও ১৮ বছরের নিচে কাউকে টিকা না দেয়ার সিদ্ধান্ত। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালাতেই এই বিষয়টি রয়েছে।
বাংলাদেশে মধ্যে ৫০ লক্ষাধিক গর্ভবতী রয়েছেন। আর অপ্রাপ্তবয়স্কদের সংখ্যা মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ৩৭ শতাংশ। প্রবাসে আছেন আরও এক কোটির বেশি মানুষ।
ক্যান্সারে আক্রান্ত, ক্যান্সারের চিকিৎসা নিচ্ছেন এমন ব্যক্তি, করোনায় আক্রান্ত এবং যাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা একেবারেই নেই, তাদেরকেও এই মুহূর্তে টিকা দেয়া হবে না।
Discussion about this post