হার্টবিট ডেস্ক
খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে জন্ডিসে আক্রান্ত স্বামীকে নিয়ে হাসপাতালে এসে শয্যা না পেয়ে গত কয়েক দিন ধরে হাসপাতালের বারান্দার মেঝেতে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন এক রোগী দম্পতি।
তাদের পাশে বৃহস্পতিবার এসেছে আরও এক রোগী। তারাও চিকিৎসা নিচ্ছেন একই ভাবে।
খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে এমন চিত্র এখন প্রতিদিনের। ৫০০ শয্যার এ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে রোগী ভর্তি থাকেন প্রায় সাড়ে ১২শরও বেশি।
কিডনী,হার্ট এর সমস্যা ইত্যাদি নানা প্রকারের জটিলতা নিয়ে প্রতিদিন রোগী আসছেন হাসপাতালে।কিন্তু তাতে দেখা যায় শয্যার কোনো ব্যবস্থা নেই।
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া থেকে আসা নাসির শেখের কোমরে সমস্যা। তিনিও সিট না পেয়ে মেঝেতে শয্যা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখানে ঠিক মতো ডাক্তার ও নার্স আসে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিদিন তারা আসেন, চিকিৎসা সেবাও দেন। সমস্যা একটাই সিট পাই না।
রোগীর স্বজনরা জানান, হাসপাতালে এসে যারা শয্যা না পান তাদের অনিবার্য ঠাঁই হয় মেঝে কিংবা বারান্দায়। এভাবে চিকিৎসা সেবা কতটুকু মেলে তা সহজেই বোঝা যায়। এতো রোগীর চিকিৎসা দিতে ডাক্তার-নার্স-স্টাফরা হিমশিম খাচ্ছেন।
শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে খুমেক হাসপাতালের বহির্বিভাগের টিকিট কাউন্টার ও ডাক্তারদের চেম্বারের সামনে দেখা গেছে রোগীর দীর্ঘ লাইন। স্বল্প জায়গায় বাড়তি রোগীর পদচারণায় নিশ্চিত হচ্ছে না শারীরিক দূরত্ব কিংবা স্বাস্থ্যবিধি। তার ওপর রয়েছে করোনার টিকা নিতে আসা হাজারও মানুষের ভীড়। হাসপাতালে বেড খালি না থাকায় শত শত রোগীকে বারান্দায় শয্যা পেতে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে। সেখানে প্রচণ্ড গরম, নেই ফ্যানও। ফলে রোগীদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। তারপরও সেখানে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিদিনই হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়ছে। জ্বর, ঠাণ্ডা ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী বেশি। আবহাওয়ার পরিবর্তন হওয়ার কারণে শিশু ও বয়স্করা অসুস্থ হচ্ছেন। করোনা কাটিয়ে এখন অনেকটাই স্বাভাবিক খুমেক হাসপাতাল। করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে কমেছে রোগী। অন্যদিকে সাধারণ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। করোনার সময় এই সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা পাওয়াই কঠিন হয়ে পড়েছিল।
হাসপাতালের বহির্বিভাগ এবং জরুরি বিভাগ সবখানেই সাধারণ রোগীর চাপ বেশি। মেডিসিন, সার্জারি, অর্থোপেডিক, গাইনি সব বিভাগেই ধারণ ক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি রোগী। বেড সঙ্কুলান না হওয়ায় শত শত রোগীর ঠাঁই মিলছে মেঝেতে।
হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান খুমেক হাসপাতালটি দীর্ঘদিন যাবতই চলছে জনবল সঙ্কটের মধ্য দিয়ে। হাসপাতালে ৫০০ বেডের বিপরীতে শনিবার বিকেল পর্যন্ত রোগী ভর্তি ছিলেন সাড়ে ১২শ। এমন অবস্থায় জনবল সঙ্কটে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতালের চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টরা।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ডা. মো. রবিউল হাসান বলেন, হাসপাতালের শয্যা ৫০০টি, রোগী ভর্তি আছেন সাড়ে ১২শ। ৫৩ শতাংশ চিকিৎসকের পদ শূণ্য। অন্যান্য স্টাফের পদ শূণ্য রয়েছে প্রায় ৭০ শতাংশের বেশি। এত কম জনবল নিয়ে শয্যার আড়াই গুণ বেশি রোগীকে সেবা দিতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি।
Discussion about this post