হার্টবিট ডেস্ক
হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয়। কিন্তু কেউ এ ধরনের রোগে আক্রান্ত আছে কিনা সেটি বুড়ো আঙ্গুলের একটি পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করা সম্ভব। এতে অনেকটাই মৃত্যুঝুঁকি এড়ানো সম্ভব।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ‘জার্নাল অব কার্ডিয়োলজি’-তে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে এমনই দাবি করেছেন চিকিৎসকরা। বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, হৃদযন্ত্র থেকে পাকস্থলী হয়ে যে ধমনীটি শরীরের নিম্নভাগের দিকে নেমে গেছে, তার মাঝ বরাবর রয়েছে একটি ফোলা অংশ।
এমনিতে এটি নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু কারও কারও ক্ষেত্রে এই অংশ বেশি মাত্রায় ফুলতে থাকে। এবং এক সময় তা ফেটে যেতে পারে। এটি হৃদযন্ত্রের সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এমনকি দ্রুত চিকিৎসা না করালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এ ধরনের রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
চিকিৎসার দিক থেকে এই সমস্যাকে বলা হয় ‘অ্যাবডোমিনাল এয়রটিক অ্যানিউরিজম’। এই সমস্যা বড় আকারে পরিণত হওয়ার আগে টের পাওয়াটা খুব মুশকিল। এবং যখন টের পাওয়া যায়, তখন রোগীকে বাঁচানোর জন্য হাতে খুব কম সময় থাকে।
ওই গবেষণায় ৩০৫ জন রোগীর ক্ষেত্রে একটি সহজ পরীক্ষার মাধ্যমে দেখিয়েছেন, ‘অ্যাবডোমিনাল এয়রটিক অ্যানিউরিজম’-এর সমস্যা অনেক আগে থেকে টের পাওয়া সম্ভব। আর সেটি হলো বুড়ো আঙুলের সাধারণ একটি পরীক্ষা।
কী ভাবে পরীক্ষাটি করবেন?
বাম হাতের বুড়ো আঙুল তালু বরাবর প্রসারিত করুন। যত দূর সম্ভব নিয়ে যান। যদি তালুর ভিতরেই আপনার বুড়ো আঙুল থেকে যায়, তা হলে উদ্বেগের কারণ নেই। কিন্তু যদি বুড়ো আঙুলের শীর্ষভাগ তালুর সীমানা অতিক্রম করে যায়, তা হলে বুঝতে হবে, আপনার ‘অ্যাবডোমিনাল এয়রটিক অ্যানিউরিজম’-এর সমস্যা থাকলেও থাকতে পারে।
কেন এমন হয়?
‘অ্যাবডোমিনাল এয়রটিক অ্যানিউরিজম’-এর সমস্যায় যারা ভোগেন, তাদের পেশি এবং হাড়ের সংযোগ স্থলগুলো শিথিল হয়ে যায়। এর ফলেই বুড়ো আঙুলটিকে তালু বরাবর টেনে অনেক দূর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যায়। কোনো ব্যথা বা অস্বস্তি হয় না।
ভবিষ্যতে বুড়ো আঙুল আর তালুর এ পরীক্ষা অনেক আগে থেকে ‘অ্যাবডোমিনাল এয়রটিক অ্যানিউরিজম’-এর পূর্বাভাস দিতে পারবে এবং রোগীর মৃত্যুর আশঙ্কা অনেকটাই কমিয়ে ফেলা যাবে বলে দাবি গবেষকদের।
এ বিষয়ে কী বলছেন চিকিৎসকরা?
ভারতের এসএসকেএম এর হৃদরোগ বিভাগের অধ্যাপক চিকিৎসক সরোজ মণ্ডলকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘অ্যাবডোমিনাল এয়রটিক অ্যানিউরিজম’ নিয়ে এত সহজ করে এখনই কিছু বলা কঠিন। আরও পরীক্ষা করেই সেটি বোঝা যাবে।
তার মতে, তালুর বাইরে বুড়ো আঙুল টেনে বের করতে পারার ঘটনা অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায়। ‘মারফান সিন্ড্রোম’ নামক সমস্যার একটি লক্ষণও এটি। সেই সমস্যা থাকলে অনেকে অতিরিক্ত লম্বা হন বা পেশি বা হাড়ের সংযোগস্থল অতিরিক্ত নমনীয় হয়ে যায়। তার মানে এটা নয়, তিনি ‘অ্যাবডোমিনাল এয়রটিক অ্যানিউরিজম’-এ আক্রান্ত।’
তবে এ চিকিৎসকের মতে, ‘অ্যাবডোমিনাল এয়রটিক অ্যানিউরিজম’ এর প্রধান কারণ ধূমপান এবং মানসিক চাপ। এই দুটি অভ্যাস ত্যাগ করতে পারলে, এই রোগের আশঙ্কা অনেকটা কমানো যেতে পারে।
Discussion about this post