হার্টবিট ডেস্ক
গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস হল অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণময় অধ্যায়।আপনি জানেন যে আপনি গর্ভবতী কিন্তু আপনার চারপাশের বিশ্বে দৃশ্যত আপনি সেটা নন বলেই মনে হয়।আপনি ক্যালেন্ডারের দিকে তাকিয়ে দিন গুণতে থাকেন,আপনি আপনার খাদ্যাভ্যাসের দিকে সতর্ক দৃষ্টি বজায় রাখেন এবং নিজের মধ্যে বিস্তৃত হতে দেখেন ক্রমশ বেড়ে ওঠা শারীরিক পরিবর্তন-গুলি এবং এগুলি ছাড়াও আপনি অনুভব করতে শুরু করেন আপনার দেহের অভ্যন্তরে আরেকটি প্রাণের অস্তিত্বকে।মনোযোগ দিন! এই সময়েই গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের বৃদ্ধির সাথে সাথে গর্ভপাতের মত ও অন্যান্য আরও নানা জটিল সমস্যার ঝুঁকির সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায়।গর্ভস্থ ভ্রূণ তার প্রাথমিক অবস্থা থেকে ক্রমশ পরিবর্তিত হয়ে আরও উন্নত ভ্রূণে পরিণত হয় এবং আপনি সেই সময়ে কিছু আন্দোলন অনুভব করতে পারেন।শরীরের বিভিন্ন অংশের বিকাশ হতে শুরু হয় এবং যৌনাঙ্গ-গুলিরও পরিবর্তন ঘটতে থাকে।
3 মাস গর্ভবতীকালীন লক্ষণ-গুলি
আপনার গর্ভাবস্থার তৃতীয় মাসে আপনি আপনার দেহে নিম্নলিখিত পরিবর্তন এবং লক্ষণ-গুলিকে লক্ষ্য করতে পারবেন।
1. মর্নিং সিকনেস
গর্ভাবস্থার তৃতীয় মাসে গা গোলানো ও বমির মাত্রা শীর্ষে পৌঁছায় এবং বেশীর ভাগ গর্ভবতী মহিলারাই প্রথম ত্রৈমাসিকের শেষের দিক থেকে এই সকল উপসর্গ-গুলি কাটিয়ে বেড়িয়ে আসে।
2. অবসাদ
গর্ভাবস্থা হরমোনের কারণে আপনি ক্লান্তি ও তন্দ্রাচ্ছন্ন বোধ করতে পারেন।ভ্রূণে অত্যাবশ্যক পুষ্টি সরোবরাহের কারণে শরীরে অতিরিক্ত রক্তের প্রয়োজন হয়,তার ফলে শরীরে রক্ত চাপ ও রক্ত শর্করার মাত্রায় প্রভাব পড়ে।Advertisements
3. মূত্রাশয় নিয়ন্ত্রনের ক্ষতি
যেহেতু এই সময়ে শরীর গর্ভাবস্থাকালীন হরমোন hCG উৎপন্ন করে,রক্তের পরিমাণে ঢেউ আসে যা মূত্রাশয়কে চাপ দেয়।বৃদ্ধিপ্রাপ্ত জরায়ুও মূত্রাশয়ের উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং তার ফলে প্রায়ই ঘন ঘন মূত্র ত্যাগের ইচ্ছে প্রকাশ পেতে থাকে।
4. কোষ্ঠকাঠিন্য
উচ্চ প্রোজেস্টেরণ মাত্রা হজম প্রক্রিয়ার মাত্রাকে ধীর গিতি সম্পন্ন করে তোলে।Advertisements
5. যোনির স্রাব
উচ্চ ইস্ট্রোজেনের মাত্রার কারণে সার্ভিক্স এবং যোনির দেওয়ালে প্রসারণ ঘটায় যার ফল-স্বরূপ ঘোলাটে সাদা রঙের মিউকাস ভ্যাজিনা থেকে নির্গত হয় যা কোনও রকম সংক্রমণকে যনির অভ্যন্তরে প্রবেশের ক্ষেত্রে বাঁধার সৃষ্টি করে।
6. পায়ে খিল ধরা বা খেঁচুনি
এই অবস্থায় রাত্রি বালায় পায়ে তীব্র যন্ত্রণা করা বা খিল ধরে যাওয়া সাধারণ একটা ব্যাপার হতে পারে।এই অস্বস্তি কাটিয়ে ওঠার জন্য আপনার খাদ্য তালিকায় পটাশিয়াম এবং আয়রণের সংযজন এবং কিছু সাধারণ যগ-ব্যায়াম করার প্রয়োজন হতে পারে।Advertisements
7. পিঠে এবং তলপেটে ব্যাথা
হরমোনের মাত্রা পরিবর্তনের ফলে,জরায়ুর প্রসারণ এবং লিগামেন্ট এবং টেন্ডনের কারণে পিঠে এবং তলপেটে যন্ত্রণা হয়ে থাকে।আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে পূর্বে পরামর্শ করে কিছুটা কম প্রভাব যুক্ত ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন।
8. মেজাজ খিঁচিয়ে থাকা
হরমোনের পরিবর্তন আপনার শরীরের মধ্যে একটা মানসিক ভাবে রোলকোস্টারের যাত্রার কারণ হয়ে উঠতে পারে এবং আপনি নিজের মধ্যে দুঃখজনিত আবেগ ও খুব কম গতিতে খুশি এবং আনন্দিত হতে পারার অনুভূতি উপলব্ধি করতে পারেন।Advertisements
9. মাড়ি থেকে রক্তপাত
হরমোনের মাত্রার পরিবর্তনের ফলে মাড়ি থেকে রক্তপাত এবং প্রদাহও ঘটে থাকে।
10. অম্বল বা গলা-বুক জ্বালা
ক্রমবর্ধমান জরায়ুর প্রসারণের ফলে পেটের উপরে চাপ পড়ে যার ফলে বিপাকীয় ক্রিয়ার গতি কিছুটা ধীর হয়ে যায়।পেটের উপরে চাপ বাড়ার কারণে অ্যাসিড বা অম্বল বাড়তে থাকে এবং তা ক্রমশ উপরের দিকে উঠতে থাকে যে কারণে গলা-বুক জ্বালা করতে থাকে। নিয়মিত একই সময়ে এবং কম পরিমাণে খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।Advertisements
11. স্থায়ীভাবে ফুলে ওঠা শিরা
জরায়ু প্রসারিত হওয়ার ফলে এটি রক্তবাহী নালীকে সংকুচিত করে এবং রক্ত সঞ্চালনের গতিকে কমিয়ে দেয়।এর ফলে আপনার পায়ের শিরা ফুলে ওঠে।আপনার বেড়ে ওঠা ওজনও সংবহন তন্ত্রের উপর ওতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে,সেটিও ভেরিকোস ভেইন্সের বা স্থায়ী ভাবে ফুলে ওঠা শিরার অন্যতম একটা কারণ।
12. রক্ত জমাট বাঁধা
রক্তের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার ফলে নাকের রেখা বরাবর শুষ্কতা বেড়ে যায় সেই কারণে নাসিকা অঞ্চলে ফুলে ওঠে এবং প্রদাহ হতে দেখা যায় যা নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ হয়ে ওঠে।Advertisements
13. খাবারের প্রতি তীব্র ইচ্ছে
এই সময়ে কিছু মায়েদের মধ্যে এটা ভীষণ সাধারণ ভাবেই আশা করা যায় যে কিছু খাবারের প্রতি তাদের লালসা প্রবল হয়ে ওঠে অথবা কিছু খাবারের প্রতি এমনকি সেই সকল খাবারের গন্ধের প্রতিও তাদের অনিহা ক্রমশ বাড়তে থাকে।
এই সকল উপসর্গ-গুলি নিয়ে ভয় পাওয়ার বিশেষ কিছু নেই যেহেতু এগুলি সবই প্রাকৃতিক পদ্ধতিরই অংশ বিশেষ।
গর্ভাবস্থার তৃতীয় মাসে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন গুলি
তিন মাসের গর্ভাবস্থায় পেটটি সামান্য বেড়ে উঠতে দেখা যায় যেহেতু এই সময়ে আপনার জরায়ুটি বেড়ে ওঠে আঙ্গুর ফলের আয়তনের মত।জরায়ুটি তলপেট অঞ্চলে কিছুটা উপরের দিকে ফুলে ওঠে এবং পেলভিক অঞ্চলকে ঢেকে রাখে।এই পর্যায়ে আপনি অবশ্যই স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করতে পারবেন আপনার শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তন গুলিকে।
1. স্তনের নমনীয়তা
আপনার স্তন কোমল হতে থাকে যেহেতু আপনার শরীর প্রস্তুত হতে থাকে এই সময় থেকেই আপনার সন্তাঙ্কে স্তন পান করানোর জন্য।স্তনের আকার বেড়ে ওঠে এবং অ্যারিওলা অঞ্চলটি আরো বড়ো ও কালচে হয়ে উঠতে থাকে।Advertisements
2. দৃশ্যমান প্রসারিত চিহ্ণ বা স্ট্রেচ মার্ক
আপনি আপনার স্তন এবং পেটের মধ্যে এই স্ট্রেচ মার্ক বা প্রাসারিত চিহ্ণ-গুলিকে লক্ষ্য করতে পারবেন যেহেতু আপনার ত্বকের নীচের স্তরের কলা গুলি সামান্য ফেটে যায় তার ফলে মূল ত্বকে এই গুলো দেখা যায়।
3. পেটে কালো রেখা
প্ল্যাসেন্টার দ্বারা মেলানোসাইট স্টিমুলেটিং হরমোন উৎপন্ন হওয়ার ফলে স্তন-বৃন্ত গুলি কালচে হয়ে যায় এবং এছাড়াও একটা ঘন কালচে রেখা দেখতে পাওয়া যায় তলপেটের মাঝ বরাবর থেকে আপনার পিউবিক হাড় পর্যন্ত।
4. মেজাজের অস্থিরতা এবং অবসাদ
এই ত্রৈমাসিকে মেজাজের অস্থিরতা ও অবসাদ হওয়াটা খুবই সাধারণ ব্যাপার।আপনার দেহটি বড় হতে থাকে এবং আপনার এই বৃহৎ আয়তনের সচেতনতা আরও বেশি করে বাড়তে থাকে।
5. ঘুমের বিশৃঙ্খলা
আপনি দেখবেন যে আপনার ঘুমের প্যার্টানের বৈচিত্র এসেছে এবং আপনি নিজে থেকেই মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে পড়েছেন।এর জন্য দায়ী হল আপনার হরমোনের পরিবর্তন।Advertisements
6. কামশক্তির অভাব
বেশিরভাগ মহিলাই প্রথম ত্রৈমাসিকে যথেষ্ট পরিমাণে উত্তেজনা এবং রোমান্স অনুভব করেন,যাইহোক কামশক্তি কমে যায় বা রতিক্রিয়ায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন শেষের দিকে।এটা হয়ে থাকে হরমোনের পরিবর্তন অথবা শরীরের পরিবর্তনের জন্য।গর্ভাবস্থার তৃতীয় মাসে-লক্ষণ,শারীরিক পরিবর্তন
গর্ভাবস্থার তৃতীয় মাসটি খুবই কঠিন সময়। আপনার খুব একটা বমি বমি ভাব দেখা যাবে না বা বমি হবে না তবে আপনাকে প্রায়ঃশই ডাক্তারবাবুর কাছে যেতে হবে।কিন্তু এটা খুব উত্তেজনাময় পর্যায় এবং আপনি স্বাভাবিক ভাবেই হারাতে চাইবেন না ছোট্ট স্ফীতি,উজ্জ্বল চোখ, এবং চকচকে ত্বক।প্রস্তুত হন আনুষ্ঠানিক ভাবে সুখবরটি ঘোষণা করার জন্য।
Discussion about this post