ডা. মনোজ দাশ
করোনায় প্রধানত ফুসফুস ও শ্বাসনালি আক্রান্ত হয়। করোনাভাইরাসজনিত রোগে চোখের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। চীনের চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. লি প্রথম ‘চোখ ওঠা বা কনজাংটিভাইটিস’ দেখে একটি মহামারি আসছে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছিলেন। তিনি চোখ ওঠা রোগীর সংস্পর্শে এসে করোনায় আক্রান্ত হন এবং মৃত্যুবরণ করেন।
চীনে যখন প্রথম করোনা মহামারি দেখা দেয়, তখন একটি গবেষণায় ৩৮ শতাংশ করোনা রোগীর ‘চোখ ওঠা’র প্রমাণ পাওয়া যায়। করোনার রোগীদের চোখ পরীক্ষা করে (চোখের কনজাংটিভাল সোয়াব) ১৮ শতাংশ কনজাংটিভাল করোনাভাইরাস পাওয়া যায়। এরপর থেকে চক্ষু চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী এবং জনসাধারণকে চোখের মাধ্যমে সংক্রমণ প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করা হয়। চিকিৎসাকর্মী ও চিকিৎসকদের গ্লাস পরার পরামর্শ দেওয়া হয় এবং স্লিটল্যাম্পে রোগীদের পরীক্ষার সময় যন্ত্রের সঙ্গে একধরনের শিল্ড ব্যবহারের কথা বলা হয়। এটা করার ফলে ভালো ফল পাওয়া যায়। করোনায় আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যাঁদের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যায়, তাঁদের মধ্যে চোখের উপসর্গ,
জটিলতা ও সমস্যাগুলোও বেশি মাত্রায় দেখা যায়।
করোনায় চোখের উপসর্গ
করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ১৪ দিনের মধ্যে এসব উপসর্গ দেখা দেয় এবং ১৪ দিন পর্যন্ত উপসর্গগুলো থাকতে পারে।
- চোখের পানি কমে গিয়ে চোখ শুষ্ক (ড্রাই আই) হয়ে যেতে পারে। মাস্ক সঠিকভাবে ব্যবহার না করলে এটি বেশি হয়। প্রায় ১৬ শতাংশ রোগীর এ সমস্যা হতে পারে।
- চোখ লাল ও ফুলে যেতে পারে। ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে এমনটি হতে পারে।
- পানি পড়া ও চোখ জ্বলা অনুভূত হতে পারে। ১২ দশমিক ৮ শতাংশ রোগীর এ উপসর্গ দেখা দেয়।
- চোখ চুলকানো বা চোখের মধ্যে ময়লা আছে এমন অনুভূত হতে পারে। প্রায় ৯ দশমিক ৬ শতাংশ রোগীর এটা হতে পারে।
- প্রায় ৩১ দশমিক ৬ শতাংশ রোগীর চোখে ব্যথা হয়। কিছু ক্ষেত্রে চোখের ব্যথার সঙ্গে দৃষ্টিশক্তি কমে যায়।
করোনায় চক্ষু জটিলতা
চোখে কিছু গুরুতর জটিলতা দেখা দিতে পারে। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের ব্যক্তিরা এ ক্ষেত্রে ঝুঁকিতে থাকেন। উল্লেখযোগ্য গুরুতর সমস্যা ও ঝুঁকিগুলো হচ্ছে:
- চোখের ‘ইউভিয়া’ নামের অংশে প্রদাহ হতে পারে। এই রোগে চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়াসহ আরও কিছু সমস্যা হতে পারে।
- ডায়াবেটিসে রেটিনায় রক্ত জমা ও রেটিনার বয়সজনিত ক্ষয় বেড়ে যেতে পারে। এতে দৃষ্টিশক্তি অনেক কমে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।
- চোখের নার্ভে (অপটিক নার্ভ) প্রদাহ হতে পারে। এটাও চোখে বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে।
প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
- করোনাকালে গ্লাস পরতে হবে। কনটাক্ট লেন্স পরা যাবে না। কসমেটিক ব্যবহার করা ঠিক নয়। বালিশের কভার, তোয়ালে, রুমাল বারবার পরিবর্তন করতে হবে।
- উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে। সাধারণভাবে একটি অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ দিনে ৪ বার ১৪ দিন এবং আর্টিফিশিয়াল টিয়ার ড্রপ একই নিয়মে এক মাস ব্যবহার করতে হবে।
- রোগীকে ১৪ দিন পর চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে পরামর্শ নিতে হবে।
লেখক: চক্ষু বিশেষজ্ঞ ওসার্জন, সিএসএস চক্ষু হাসপাতাল, খুলনা
Discussion about this post