.ডা. গোবিন্দচন্দ্র দাস,অ্যালার্জি ও ইমিউনোলজি বিভাগের প্রধান,
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
আবহাওয়ার পরিবর্তনে বা শীতের শুরুতে শিশুদের হাঁপানির প্রকোপ বাড়ে। এ সময় শিশুদের বাড়তি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।
এ বিষয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বলেন, সাধারণত অ্যালার্জির সমস্যার কারণে অ্যাজমা দেখা যায়। আর শীতের শুরুতে শিশুরা হাঁপানির ঝুঁকিতে থাকে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শে চললে একে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
কেন হয়?
বিভিন্ন রোগজীবাণুর সংক্রমণে শ্বাসনালির ভেতরের স্তরে প্রদাহ বা …ইনফ্লামেশন… হয়ে ফুলে ওঠে।l
শ্বাসনালির চার পাশের মাংসপেশি সংকুচিত হয়, ফলে বাতাস চলার পথ সরু হয়ে যায়। l
উত্তেজক পদাথের্র প্রভাবে শ্বাসনালির গ্রন্থি থেকে প্রচুর মিউকাস জাতীয় আঠালো কফ নিঃসৃত হয়ে শ্বাসনালিতে জমা হয়। ফলে বাতাস চলাচলের পথ আটকে দেয়।l
অ্যাজমা সাধারণত বংশগত রোগ। তবে কারও কারও বেশ কিছু কারণে হাঁপানির আক্রমণ শুরু হতে পারে। যেমন বাড়িঘরের ধুলা-ময়লা, উৎকট গন্ধ বা স্প্রে, সিগারেট বা অন্যান্য ধোঁয়া, পরাগ বা ফুলের রেণু, পশুপাখির পালক, লোমশ খেলনা, ছত্রাকের স্পোর, আবহাওয়ার পরিবর্তন, ঠান্ডা লাগা, বিশেষ কিছু খাদ্য, কিছু কিছু ওষুধ, শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত কোনো কোনো রাসায়নিক পদার্থ, শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম প্রভৃতি। আজকাল দূষিত বাতাস গ্রহণের জন্য শিশুদের মধ্যে হাঁপানির প্রকোপ দিন দিন বেড়েই চলেছে।
লক্ষণ কী?
বুকে আঁটসাঁট, দম বন্ধভাব অর্থাৎ ফুসফুস ভরে দম নিতে না পারা। শ্বাস নিতে ও ছাড়তে কষ্ট অনুভব করা, বুকের ভেতর বাঁশির মতো সাঁই সাঁই শব্দ হওয়া, ঘন ঘন শুষ্ক কাশি হাঁপানির লক্ষণ। এছাড়া গলার নিচের অংশ এবং দুই পাঁজরের নিচের ও মধ্যবর্তী অংশ শ্বাস নেওয়ার সময় ভেতরে ঢুকে গেলে, চিত হয়ে শুয়ে থাকতে না পারলে, ঘুম থেকে উঠে বসে থাকতে হলে, সর্দি লাগার পর শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে বুঝতে হবে এগুলো হাঁপানির লক্ষণ। এসব উপসর্গ সাধারণত রাতে বেড়ে যায়।
হাঁপানির চিকিৎসা
সাধারণত দুই ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হয়। দ্রুত আরামদায়ক ওষুধ বা ব্রঙ্কোডাইলেটর, যা শ্বাসনালির সংকোচন রোধ করে দ্রুত শ্বাসকষ্ট কমিয়ে দেয়।
শ্বাসনালির প্রদাহ নিরাময় ওষুধ দেওয়া হয়। প্রতিষেধক ওষুধগুলো ধীরে ধীরে কাজ করে এবং শ্বাসনালির সংকোচন ও প্রদাহ থেকে শ্বাসনালিকে রক্ষা করে। প্রতিষেধক ওষুধগুলো হাঁপানিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ওষুধের পাশাপাশি ভ্যাকসিন দিয়ে রোগীকে দীর্ঘদিন সুস্থ রাখা সম্ভব হয়।
প্রতিরোধ:
শীতে ঠান্ডা লাগা থেকে দূরে থাকতে হবে।
পুরোনো কাপড় পরার আগে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। কাপড়ে ধুলা-ময়লা যাতে না থাকে, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে
হাঁপানি আক্রান্ত শিশুর বাবা-মায়ের ধূমপান করা উচিত নয়। কারণ সিগারেটের ধোঁয়াও শিশুর উত্তেজক হিসেবে অ্যাজমার কারণ হতে পারে।
শিশুর হাঁপানির ওপর খাবারের প্রভাব আছে কি না, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যদি দেখা যায় বিশেষ কোনো খাবার খেলে শিশুর হাঁপানির আক্রমণ হয়, তবে ওই সব খাবার শিশুকে খেতে দেওয়া যাবে না।
শিশুকে সব সময় পরিষ্কার থাকতে উৎসাহিত করুন। ওকে ধুলাবালু, জীবজন্তু, লোমশ খেলনা দিয়ে খেলতে বারণ করুন,
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শিশুকে সাধারণ ব্যায়াম করতে উৎসাহিত করুন।
চিকিৎসকের পরামর্শমতো চললে এবং চিকিৎসা করালে হাঁপানিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। অনেক দিন ধরে নিয়মিত চিকিৎসা করালে শিশুর হাঁপানির লক্ষণ একেবারে চলে যাবে, বড়জোর দিনের বেলায় সামান্য লক্ষণ দেখা দিতে পারে। কোনো কষ্ট ছাড়াই রাতের বেলায় শান্তিতে ঘুমাতে পারবে। কখনো লেখাপড়ার সমস্যা হবে না। শারীরিক কাজকর্মে কোনো ব্যাঘাতও হবে না।
কিছু কথা: হাঁপানি ছোঁয়াচে রোগ নয়। এটি সর্দি-কাশির মতো নয়, একজনের হলে অন্যজনের মধ্যে ছড়াবে না। অ্যাজমা আক্রান্ত মায়ের বুকের দুধ খেলে শিশুর অ্যাজমায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই।
শিশু স্কুলে গেলে তার হাঁপানির সমস্যা শিক্ষককে জানান, শিশুর হাঁপানির লক্ষণগুলো নিয়ে শিক্ষকের সঙ্গে আলোচনা করুন। স্কুল বা ভ্রমণের সময় শিশুর প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সঙ্গে রাখুন।
Discussion about this post