ডাঃ এম দেলোয়ার হোসেন ,এমবিবিএস, ডিটিসিডি, এমডি (বক্ষব্যাধি)
জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা।
হাঁপানি একধরনের দীর্ঘমেয়াদি ফুসফুস ও শ্বাসনালীর প্রদাহ। এই রোগে শ্বাসনালী সঙ্ক ুচিত হয়ে যায়, যা চিকিৎসায় পুনরায় আগের অবস্থানে ফিরে আসে। এ ধরনের রোগের শ্বাসনালী অতি সংবেদনশীল থাকে, তাই কোন অ্যালার্জিক বস্তুর সংস্পর্শে এলে সহজেই শ্বাসনালী চিকন হয়ে যায় এবং কাশি ও শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এটি কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়। তবে বংশানুক্রমে অতিবাহিত হতে রোগে ভুগছে।
রোগের লক্ষণ :-
সাধারনত কমবয়সী ছেলেমেয়েরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। প্রথমত কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ অনুভব করা, নাক দিয়ে পানি পড়া , চোখ লাল হয়ে যাওয়া , চোখ চুলকানো , শরীর চুলকানো এসব উপসর্গ দেখা দেয়। কোনো কোনো রোগীর ক্ষেত্রে পারিবারিক ইতিহাস অর্থাৎ পারিবারের ইতিহাস অর্থাৎ পারিবারের অন্যান্য সদস্য আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস থাকে।ADVERTISEMENTEPORT THIS AD
রোগী য়খন অতিমাত্রায় আক্রান্ত হয় তখন বুকে চিকন বাশির মতো শব্দ শোনাযায়, রোগী ঠিকমতো ঘুমাতে পারে না। সাধারণ রাতে এবং ভোরবেলায় লক্ষণগুলো বেশি পরিলক্ষিত হয়। কোনো কোনো রোগী সারা বছর ভালো থাকে, কিন্তু ঋতু পরিবর্তনের সময় য়েমন শীতের শুরুতে বা গরমের শুরুতে আক্রান্ত হয়ে থাকে। কোনো কোনাে রোগী বিশেষ ধরনের খাবার খেলে বা পরিবেশে গেলে শ্বাসকষ্ট ও কাশি অনুভব করে। একেক রোগীর লক্ষণ একেক রকম হয়। কারো শ্বাসকষ্ট বেশি থাকে আবার কারো শ্বাসকষ্ট কম থাকে; কিন্তু কাশি , চোখ চুলকানো , নাক দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি বেশি থাকে(Atopic Indiviual) .
হাঁপানির প্রকারভেদ:
হাঁপানি বিভিন্ন রকমের হয়। যেমন- Persistent Asthma (স্থায়ী অ্যাজমা), Intermittent Asthma(কিছু দিন ভালো থাকে আবার কিছু দিন শ্বাসকষ্ট থাকে), Cough Varient Asthma (কাশি কাশি থাকে), Exercise Induced Asthma(ব্যায়াম করতে গেলে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়),Seasonal Asthma (শুধু ঋতু পরিবর্তনের সময় শ্বাসকষ্ট শুরু হয়), Drug Induced Asthma (বিশেষ ধরনের ঔষধ খেলে শ্বাস কষ্ট শুরু হয়) Occupational Asthma(সাধারনত কর্ম ক্ষেত্রের পরিবেশের জন্য হয়) ।
রোগের কারণ:
প্রকৃত কারণ এখনও অজানা । তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে Genetic Factor কাজ করে থাকে, যা বংশ পরিক্রমায় অতিবাহিত হয়। কোনো কোনো রোগী কিছু কিছু সংবেদনশীল বস্তুর সংস্পর্শে গেলে বা খেলে () শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন। যেমন-
অ্যালার্জেন (Allergen) : ফুলের রেণু, গাছের শুকনো পাতা, ঘাস, তীব্র সুগন্ধি, আতর পারফিউম, পাখির পালক, বিড়াল, কুকুর, ইঁদুরের পশম, তেলাপোকা ইত্যাদি।
কিছু খাবার (Food) : গরুর গোশত, চিংড়ি মাছ, ইলিশ মাছ, হাঁসের গোশত, কিছু সামুদ্রিক মাছ , হাঁসের ডিম ইত্যাদি।
কিছু (Irritant) যেমন: সিগারেটের ধোঁয়া, কাঠ কয়লার ধোঁয়া, খড়কুটার ধোঁয়া, রান্নার তীব্র গন্ধ, মশার কয়েল , গাড়ির ধোঁয়া ইত্যাদি।
কিছু ওষুধ যেমন- কিছু ব্যাথার ঔষধ এসপিরিন (Aspirin), B-Bloker ইত্যাদি।
রোগ নির্ণয়:
অ্যাজমা নির্ণয়ে খুব বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হয় না। ইতিহাস থেকেই এই রোগ নির্ণয় সম্ভব। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। যেমন- এক্স-রে, অ্যালার্জির পরীক্ষার (Ig-E) কাশির পরীক্ষার (Sdutum for Esoinophil Count) এবং ফুসফুসের কার্যক্ষমতার পরীক্ষা (Spirometry) ইত্যাদি। অ্যাজমা শুধু ছোটদের রোগ নয়, যে কোন
বয়সেই এই রোগ হতে পারে। তবে 40 বছরের বেশী বয়সী রোগীদের শ্বাসকষ্ট হলেই অ্যাজমা চিন্তা করা ঠিক নয়। 40 বছর বয়সের লোকদের সাধারনত COPD (Chronic Obstructive
Pulmonary Disease) বেশী হয়। এদের ধুমপার করার ইতিহাস থাকে। অ্যাজমা ও COPD- এর মধ্যে পার্থক্যে করা জরুরি। কেননা এদের চিকিৎসার ধরন আলাদা। COPD অ্যাজমার চেয়ে
বেশি মারাত্মক। সাধারণত কোনো লোক দৈনিক 20টি করে সিগারেট পান করলে 10 বছরের মধ্যে COPD হতে পারে। গ্রামের মহিলা যারা ধোঁয়ার রান্না করেন, তাদেরও COPD হতে পারে।
অ্যাজমা ও COPD কিভাবে পার্থক্যে করেবেন ?
অ্যাজমা সাধারণত কম বয়সে আরম্ভ হয়। তবে যেকোনো বয়সেই হতে পারে। পারিবারিক ইতহাস থাকে,
রাতে বেশী হয়, ঋতু পরিবর্তনের সময় বেশি হয়। সাধারণত অ্যালার্জির সাথে সম্পর্কিত । তাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় বুকে বেশী জোরে শব্দ হয়। COPD সাধারণত 40 বছর বয়সী লোকদের হয়, তাদের ধূমপানের ইতিহাসে থাকে। তাদের সারা বছরই কিছু না শ্বাসকষ্ট থাকে। বুকের X-ray এবং Spirometry, With Reversibility Test পরীক্ষা করে অ্যাজমা এবং COPD – এর মধ্যে পার্থক্যে করা হয়।
প্রতিকার:
উদ্দেশ্যে প্রশান্তি ভরা শ্বাস আমাদের প্রয়াস। শিক্ষা, সতর্কতা ও চিকিৎসা এই মূলনীতির ওপর অ্যাজমার সাফল্য নির্ভর করে। চিকিৎসার অ্যাজমার সাফল্য নির্ভর করে। চিকিৎসায় অ্যাজমা সম্পূর্ন ভালো হবে কি না বলা মুশকিল, তবে নিয়মিত ও পিরতি চিকিৎসা নিলে ভালো থাকবে এবং স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবে। কিছু কিছু রোগী সতর্কতা অবলম্বনে এবং নিয়মিত চিকিৎসায় ভালো হয়ে যায়। তবে কে কখন ভালো হবে তা বলা যায় না। অ্যাজমার চিকিৎসার জন্য সাধারণত হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় না, তবে মারাত্মক আকার ধারণ করলে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। আমরা সাধারণত অ্যাজমার চিকিৎসার জন্য তিন ধরনের ওষুধ ব্যবহার করে থাকি। যেমন- প্রশমনকারী ওষুধ (Reliever drugs) প্রতিরোধকারী ওষুধ (Preventer drugs) প্রতিকারক ওষুধ (Protector drugs).
প্রশমনকারী ওষুধ: সালবিউটামল, অ্যামানোফইলিন, এবং ইপ্রাট্রোপিয়াস ব্রোমাইড।
প্রতিকারক ওষুধ: সালমিটেরল, বেমবিউটেরল ও থিয়োফাইলিন গ্রুপ । আরো অনেক ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
অ্যাজমার ওষুধ বিভিন্ন ফর্মে পাওয়অ হায়। যেমন- ইনহেলার , পাউডার ফর্ম , ট্যাবলেট, সিরাপ ইত্যাদি। তবে ইনহেলার ফর্মের ওষুধ ব্যবহার করা উত্তম। ইনহেলার একবার লে আর ছাড়া যায় না, ইনহেলারে (Addiction) আসক্তি হয়ে যায় ইত্যাদি। এগুলো সবই ভুল ধারণা। পৃথিবীর সব উন্নত দেশেই ইনহেলার ব্যবহার করা হয়।
ইনহেলার ঠিকমতো ব্যবহার করতে না পারলে কাঙ্খিত ফল পাওয়া যায় না। তাই ইনহেলার ব্যবহার ভালোভাবে শিখে নিতে হবে। খুব কম লোরেই সরাসরি ইনহেলার ব্যবহার করতে না পারলে বিভিন্ন ধরনের Spacer- নিতে হবে।
গর্ভবতী মায়ের অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে রাখা কুবই জরুরি। তা না হলে সন্তান ঠিকমতো বেড়ে ওঠে না যথাসময়ের আগেই গর্ভপাত ঘটতে পারে। সব ধরনের ইনহেলারই গর্ভবতী মায়েদের জন্য নিরাপদ। সব খাবারই সবার অ্যাজমা বাড়িয়ে দেয় না। এককজনের একেক রকম খাবারে অ্যালার্জি হয়। তাই শুধ ু অ্যালার্জিজনিত খাবার বাদ দিয়ে অন্য কাবার খেতে কোনো বাধা নেই। আসুন আমরা অ্যাজমাকে বুঝি, ক্ষতিকর পরিবেশ এবং খাবার থেকে দূরে থাকি, নিয়মিত ওষুধ ব্যবহার করি এবং অ্যাজমামুক্ত জীবন যাপন করি।
Discussion about this post