যকৃৎ (ইংরেজি: Liver) মেরুদণ্ডী ও অন্যান্য কিছু প্রাণীদেহে অবস্থিত একটি আভ্যন্তরিক অঙ্গ। এটি বক্ষপিঞ্জরে মধ্যচ্ছদার নিচের অংশে অবস্থিত। একে চলতি বাংলায় কলিজা বলে সচরাচর উল্লেখ করা হয়। যকৃৎ দেহের বৃহত্তম গ্রন্থি। এর ওজন দেহের মোট ওজনের (৩-৫%)।
মানবদেহের পরিপাকতন্ত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যকৃৎ। পরিপাকক্রিয়ায় মুখ্য ভূমিকা পালন করে এই অঙ্গ। এটি মধ্যচ্ছদার নিচে উদর গহ্বরের ওপরে পাকস্থলীর ডান পাশে অবস্থিত। একে কলিজাও বলা হয়। যকৃৎ মানবদেহের সবচেয়ে বড় গ্রন্থি। এর রং লালচে খয়েরি।এটি ২টি খণ্ডে বিভক্ত: ডান এবং বাম। যকৃতের ডান খণ্ডটি বাঁয়েরটির থেকে আকারে কিছুটা বড়। সাধারণত একজন সুস্থ মানুষের যকৃতের ওজন প্রায় ১.২ থেকে ১.৫ কিলোগ্রাম হয়। চারটি অম্পূর্ণ খণ্ড নিয়ে যকৃৎ গঠিত। প্রতিটি খণ্ড ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লোবিউল দিয়ে তৈরি। প্রতিটি লোবিউলে অসংখ্য কোষ থাকে। এ কোষ পিত্তরস তৈরি করে। এ ছাড়া যকৃতে বিভিন্ন রকম জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটিত হয়, তাই একে জৈব রসায়ন গবেষণাগার বলা হয়।
লিভার এর গঠন:
লিভারটি একটি অর্ধ-চাঁদের আকৃতির অঙ্গ যা মোটামুটি সোজা নীচে। এটি পেটের উপরের বাম অংশ এবং ছোট্ট অন্ত্রের প্রথম অংশের উপরে ডান অংশটি দিয়ে দেহের গহ্বরে সামান্য কাত হয়ে থাকে।
লিভারের দুটি প্রধান অংশ বা লব থাকে।
যকৃতের অংশ সমূহ:—-(১) ডান লোব, (২) বাম লোব,(৩) কডেট লোব, (৪) কোয়াড্রেট লোব।
ধমনী:-হেপাটিক ধমনী।
শিরা:-হেপাটিক শিরা, হেপাটিক পোর্টাল শিরা।
স্নায়ু:-সিলিয়াক গ্যাংলিয়া, ভেগাস।
যকৃতে পিত্তরস উৎপন্ন হয়; পিত্তরস একধরনের ক্ষারীয় যৌগ যা পরিপাকে সহায়তা করে। বিশেষত স্নেহজাতীয় খাদ্যের ইমালসিফিকেশন এর জন্য পিত্তরস প্রয়োজন। এছাড়াও যকৃৎ দেহের আরও কিছু জৈব-রাসায়নিক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
কোষের ধরন:—-দুই ধরনের কোষ দিয়ে যকৃৎ গঠিত যথা: প্যারেনকাইমাল এবং নন-প্যারেনকাইমাল। যকৃতের প্যারেনকাইমাল কোষকে হেপাটোসাইট বলে যা আয়তনের ৮০%।রক্ত প্রবাহ:—-যকৃৎ প্রধানত দুই পথে রক্ত সংবাহিত হয় যথা পোর্টাল শিরা এবং হেপাটিক ধমনী । শতকরা ৭৫ ভাগেরও বেশি রক্ত আসে পোর্টাল শিরা থেকে। অক্সিজেনের সরবরাহ দুই উৎস থেকেই নিশ্চিত হয়।
প্রতিটি লবটি আরও আট ভাগে বিভক্ত। প্রতিটি বিভাগে আনুমানিক ১০০০ টি লবুল বা ছোট লব থাকে। এই প্রতিটি লিবুলিতে একটি ছোট টিউব (নালী) থাকে যা সাধারণ হেপাটিক নালীটির দিকে প্রবাহিত হয়।শরীরের অন্যান্য অংশের সাথে তুলনা করে, লিভার এর মধ্যে রক্তের একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ প্রবাহিত থাকে – দেহের প্রায় ১৩ শতাংশ রক্ত যেকোন সময় যকৃতে থাকে।
প্রাণীদেহে বিপাকে ও অন্যান্য কিছু শারীরবৃত্তীয় কাজে যকৃত প্রধান ভূমিকা পালন করে। গ্লাইকোজেনের সঞ্চয়, প্লাজমা প্রোটিন সংশ্লেষণ, ঔষুধ বা অন্যান্য রাসায়নিক নির্বিষকরণে এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
যকৃতে পিত্তরস উৎপন্ন হয়; পিত্তরস একধরনের ক্ষারীয় যৌগ যা পরিপাকে সহায়তা করে। বিশেষত স্নেহজাতীয় খাদ্যের ইমালসিফিকেশন এর জন্য পিত্তরস প্রয়োজন। এছাড়াও যকৃৎ দেহের আরও কিছু জৈব-রাসায়নিক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
যকৃত থেকে পিত্তরস নিঃসৃত হয় যা খাদ্য পরিপাকের, বিশেষ করে স্নেহজাতীয় খাদ্য পরিপাকের, একটি অতি প্রয়োজনীয় উপাদান৷ যকৃতে ইউরিয়া তৈরি হয়। এছাড়া যকৃতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটিত হয়৷ এজন্য যকৃতকে দেহের জৈব রসায়নাগার বলে৷ যকৃত গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি কাজের মধ্যে রয়েছে:
- যকৃতে পিত্তরস তৈরী হয় যা যকৃত থেকে নিঃসৃত হয়ে পিত্তথলিতে জমা থাকে। প্রয়োজনানুযায়ী অন্ত্রে পিত্তরসের সরবরাহ ঘটে।
- রক্তের অতিরিক্ত গ্লুকোজ যকৃতে গ্লাইকোজেন রূপে সঞ্চিত হয় ৷ প্রয়োজনে লাইকোজেন ভেঙ্গে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা সঠিক রাখে ৷
- যকৃত ভিটামিন (A,D,E,K,B6 ও B12) সঞ্চিত হয়৷
- রক্তের প্লাজমা প্রোটিন যকৃতে সংশ্লেষিত হয়৷
- যকৃতে লাল রক্তকণিকার হিমোগ্লোবিন ভেঙ্গে বিলিরুবিন ও বিলিভার্ডিন সৃষ্টি হয় ৷
Discussion about this post