Heart যে আমাদের দেহের পাম্প মেশিন তা হয়তো এই যুগে কাউকে বলার অপেক্ষা রাখেনা। হার্টের কাজই হচ্ছে রক্ত এদিক সেদিক নির্দিষ্ট গতির মাঝে পাম্প করে ছড়িয়ে দেয়া। আর একাজের জন্যেই হার্ট বা হৃৎপিণ্ড খুব বিশেষ মাসল টিস্যু বা কলা দিয়ে গঠিত, যাকে বলা হয় Cardiac Muscle Tissue। এটি কেবলমাত্র হৃৎপিণ্ডতেই থাকে, অর্থাৎ এই টিস্যুটি একান্তই হৃৎপিণ্ডের জন্য গঠিত হয় যা হৃৎপিণ্ডের সংকোচন (contraction) – সম্প্রসারণের (extraction) কাজ করে থাকে। এই টিস্যুর আরো একটা অনন্য দিক হল এর কোষ অঙ্গ গঠনের পূর্ণ পর্যায়ে গিয়ে বিভাজন বন্ধ করে দেয়, ফলে হৃৎপিণ্ডে ক্যান্সার হওয়াটা খুবই দুর্লভ ব্যাপার। যেহেতু ক্যান্সার মানেই হচ্ছে কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি।
হার্টের কাজ হচ্ছে মূলত ফুসফুস থেকে অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত মস্তিষ্ক আর দেহে ছড়িয়ে দেয়া। আবার সেই ছড়িয়ে দেয়া রক্ত থেকে দেহ অক্সিজেন ব্যবহার করে নিলে সেই Deoxygenated রক্ত ফুসফুসে পাঠিয়ে দেয়া, যাতে করে ফুসফুস বাতাস নিয়ে আবার সেই বাতাসের অক্সিজেন মিশিয়ে দিতে পারে রক্তে আর কার্বন ডাই অক্সাইড বের করে দিতে পারে।
অর্থাৎ এখানে কাজ দুটি।
১. অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত জোগাড় করা + ছড়িয়ে দেয়া।
২. ব্যবহার হওয়া অক্সিজেনহীন (Deoxygenated) কার্বন ডাই অক্সাইড যুক্ত রক্ত জোগার করা + বর্জ্য নিঃসরণ ও অক্সিজেন গ্রহণের জন্য ফুসফুসে পাঠিয়ে দেয়া।
অর্থাৎ প্রতিক্ষেত্রে দুটো করে কাজের মোট ৪টা ধাপ।
আর এই ২-৪ ধাপের জন্যেই হৃৎপিণ্ড ২ ভাগে বিভক্ত, যার প্রতিটা ভাগে দুটো করে অংশ। অর্থাৎ মোট চারটা।
সুতরাং আমরা সহজেই বুঝতে পারে এই দুইভাগের একটা অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত নেয় আর ছড়ায় আর আরেকটা অক্সিজেনহীন রক্ত জোগার করে আর অক্সিজেনমিশ্রিত হবার জন্যে ফুসফুসে পাঠিয়ে দেয়। ব্যাপারটা যেন দুটো আলাদা আলাদা সিলিন্ডারের মত। যার প্রতিটাতে দুটো করে ভাগ। উপরের ভাগ দুটো মানে যে ভাগ দুটোয় রক্ত প্রবেশ করে, সেদুটোকে Atrium বা প্রকোষ্ঠ বলে। আর সেখান থেকে রক্ত বেরিয়ে যাবার উদ্দেশ্যে যে ভাগে যায় তাকে Ventricle বা নিলয় বলে।
হার্টের স্বাভাবিক অবস্থান আমাদের বুকের কিছুটা বাঁদিকে। ফুসফুসের দুই দিক থেকে দুটি করে মোট চারটি ফুসফুসীয় শিরা (Pulmonary Vein) থেকে অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত বাম এ্যাট্রিয়ামে বা প্রকোষ্ঠে প্রবেশ করে। এরপর সেখান থেকে Mitral/Bicuspid Valve বা কপাটিকা যা মানুষের ঠোঁটের মতই আটকে থাকে তা খুলে গেলে বাম এ্যাট্রিয়াম থেকে রক্ত বাম Ventricle বা নিলয়ে প্রবেশ করে। তখন আবার বাইকাসপিড ভালভ বন্ধ হয়ে যায় এবং Aortic Valve বা মহাধমনীয় কপাটিকা খুলে যায়, এবং রক্ত সেই উন্মুক্ত মুখ দিয়ে মহাধমনীতে এবং সেখান থেকে Aortic Arch এ গিয়ে ধমনীগুলোয় বিভক্ত হয়ে সারাদেহ আর মাথায় ছড়িয়ে পড়ে।
অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত সারাদেহে অক্সিজেন পৌছে দিয়ে বিনিময়ে কার্বন ডাইঅক্সাইডযুক্ত রক্ত নিয়ে দেহের উপর ও নীচ থেকে যথাক্রমে Superior Vena Cava আর Inferior Vena Cava দিয়ে ডান প্রকোষ্ঠে (Atrium) প্রবেশ করে। আবার সেখান থেকে Tricuspid Valve খুলে গেলে তা যায় ডান নিলয় (Ventricle) এ। তখন নিলয় থেকে বেরুবার পথের ফুসফুসীয় কপাটিকা (Pulmonary Valve) বন্ধ থাকে। এরপর ট্রাকাস্পিড ভালভ বন্ধ হলে পালমোনারি ভালভ খুলে যায় এবং সেখান থেকে রক্ত ডান ও বাম ফুসফুসীয় ধমনী (Pulmonary Artery) দিয়ে ফুসফুসের দিকে যাত্রা শুরু করে।
ফুসফুসে গিয়ে অক্সিজেন নেয়া হয়ে গেলে তা আবার ঐযে ৪টি ফুসফুসীয় শিরা আছে, তা দিয়ে আবার বাম প্রকোষ্ঠে ফিরে আসে।
আর এই প্রক্রিয়াটিই একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দেহে গড়ে প্রতি মিনিটে ৭০-১০০ বার করে হয়! আর ঐযে ভালভগুলো খোলা আর বন্ধ হওয়া, সেটার ফলে সৃষ্ট ধাক্কাকেই আমরা নাড়ির স্পন্দন বা পালস বলে ডাকি। আবার ঐ একই কারণে যখন ট্রাইকাসপিড আর বাইকাসপিড ভালভ খুলে রক্ত দুই ভেন্ট্রিকলে প্রবেশ করে তখন তা হৃৎপিণ্ডের প্রসারিত অবস্থা থাকে যাকে Diastole বলে আর যখন সেইদুটো ভালভ বন্ধ হয়ে ভেন্ট্রিকল থেকে রক্ত বের করে দেয়ার জন্যে পালমোনারি আর এ্যাওর্টিক ভালভ খুলে যায়, তখন হৃৎপিণ্ড সংকুচিত হয় এবং তাকে সিস্টোল বলে। এর উপর ভিত্তী করেই রক্তের সিস্টোলিক আর ডায়াস্টোলিক চাপ বা প্রেশার মাপা হয় যা প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে ৮০/১২০ ( ডায়াস্টোলিক/সিস্টোলিক) থাকে।
একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের হৃৎপিণ্ড হাতের পাঁজার সমান হয়। নারীদের চাইতে পুরুষদের হৃৎপিণ্ড আকারে খানিক বড় হয়ে থাকে।
শিশুর বিকাশ থেকে শুরু করে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই ছোটোখাটো জিনিষটা অবিরাম শক্তিতে ক্রমাগত রক্ত পাম্প করে চলে যা গড়ে মিনিটে ১০০ বার হলে ঘণ্টায় ৬০০০ বার, দিনে ১৪৪,০০০ বার, আর বছরে পাঁচ কোটি পচিশ লক্ষ ষাট হাজার (৫২,৫৬০,০০০) বার! হৃৎপিণ্ড থেকে ছড়িয়ে পড়া এই শিরা আর ধমনিই গিয়ে দেহের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়েছে। যেগুলোকে একের পর এক লম্বভাবে সাজালে প্রায় ষাট হাজার (৬০,০০০) মাইল হবে দৈর্ঘ্যে!
হৃৎপিণ্ডের প্রাচীর তিনটি আস্তরণে বিভক্ত। এগুলো হল epicardium, myocardium আর endocardium ।
হৃৎপিণ্ডের ডান এ্যান্ট্রিয়ামের পাশে থাকা সাইনোএ্যাট্রিয়াল নোড (Sinoatrial Node) বা Sinus node হচ্ছে সেই বস্তু যা বিদ্যুৎকোষের মত হৃৎপিণ্ডের মাঝে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের মাধ্যমে এর গতিবিধি বজায় রাখে। যার ফলে একে হার্টের প্রাকৃতিক গতিদাতা বা Natural Pacemaker বলা হয়। উল্লেখ্য যে পেসমেকার মূলত একধরণের যন্ত্রবিশেষ যা হৃৎপিণ্ড তার স্বাভাবিক হারে পাম্প করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেললে প্রতিস্থাপন করা হয়।
হৃৎপিণ্ডের অস্বাভাবিক বিদ্যুৎসঞ্চালন প্রক্রিয়ার দরুন দ্রুতস্পন্দন বা (tachycardia) আবার ক্ষীনস্পন্দন (bradycardia) হতে পারে।
হৃৎপিণ্ডের স্নায়ুতন্ত্র
আপনি কি জানেন যে আপনার যে হৃৎপিণ্ড, যার কাজ হচ্ছে কেবল রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেন ছড়ানো আর কার্বন ডাই অক্সাইড বের করা, সেই হৃৎপিন্ডেরো একটা স্নায়ুতন্ত্র রয়েছে?
হ্যা, আছে বটে। একে Autonomic nervous system বলে যা হৃৎপিণ্ডের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করে। তবে এতে খুশি হয়ে এমনটা ভাবার অবকাশ নেই যে এই স্নায়ুতন্ত্র হৃৎপিণ্ডের ভেতরেই অবস্থিত এবং তার মস্তিষ্কের মত চিন্তা করার ক্ষমতা রয়েছে।
Autonomic nervous system বা ANS হচ্ছে fight or flight স্নায়বিক ব্যবস্থা। এটি কেবল হৃৎপিণ্ডের জন্যে আলাদাভাবে গঠিত কিছু নয়ে বরঞ্চ হৃৎপিণ্ডসহ অন্যান্য অভ্যন্তরীণ কিছু অঙ্গের কার্যপ্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রনের জন্যে গঠিত হয়, যা মূলত মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসেরই অংশ। অর্থাৎ হৃৎপিণ্ড এটার নিয়ন্ত্রিত হয় কেবল ঠিক অন্যান্য কিছু অঙ্গের মত। কিন্তু এটি হৃৎপিণ্ডের কোনো অংশই নয়। হৃৎপিণ্ড বরাবরই কেবলমাত্র দেহের রক্ত পাম্প করার যন্ত্র বৈ কিছুই নয়। তাই যদি কেউ আপনাকে কখনো বলে যে হৃৎপিণ্ড হচ্ছে মন আর এর একটা স্নায়ুতন্ত্রও আছে তখন তাকে জবাবে বলে দিতে পারেন “Autonomic Nervous System doesn’t belongs to heart. Rather, heart belongs to Autonomic Nervous System.”
Discussion about this post