হার্টবিট ডেস্ক
দেশে কোনোভাবেই থামছে না করোনাভাইরাসের প্রকোপ। প্রতিদিনই বাড়ছে নতুন সংক্রমণ, বাড়ছে মৃত্যু। এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামেও বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। রোগীর চাপ বেড়েছে হাসপাতালগুলোয়। সবচেয়ে বেশি চাপ রয়েছে হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য মতে, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য নির্ধারিত আইসিইউ বিভাগের একটি বেডও খালি নেই। মা ও শিশু হাসপাতালের চিত্রও একই। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটের আইসিইউ বেড খালি আছে মাত্র তিনটি। তবে কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউ বেড খালি আছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী।
তিনি বলেন, করোনা রোগীদের চিকিৎসায় আইসিইউ থেকে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা বেশি ব্যবহার হয়। হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালের (জেনারেল হাসপাতালের ইউনিট ২) ১০টি আইসিইউ শয্যা প্রস্তুত আছে। প্রয়োজনে এগুলো চালু করা হবে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য মতে, চট্টগ্রামে গত ১৪ জুন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৪২৭ জন। পরবর্তী ১০ দিনে আরও ৯৪৮ জন করোনায় আক্রান্ত হন। গত মে মাসে জেলাজুড়ে ৩ হাজার ৫১৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জেলায় শনাক্তের হার ২৮.০৭ শতাংশ। সে হিসেবে চলতি মাসের বাকি ছয় দিনে করোনা আক্রান্তের হার আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
আইসিইউ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের প্রধান ডা. আব্দুর রব বলেন, হাসপাতালে রোগী ভর্তির চাপ অনেক বেড়েছে। এখন পর্যন্ত হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মোট ৮২ জন নতুন রোগী ভর্তি আছেন। হাসপাতালে ১৬টি আইসিইউ বেড আছে। বর্তমানে সবগুলোতেই রোগী ভর্তি। তাই নতুন করে অনেক রোগীর জন্য আইসিইউ সাপোর্ট জরুরি হলেও আমরা দিতে পারছি না।
তিনি আরও বলেন, ১৫ দিন আগেও রোগী ভর্তির চাপ কম ছিল। তখন ৩-৪টি আইসিইউ বেড খালি থাকত। বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) পর্যন্ত আইসোলেশন ইউনিটে ৬৪ জন রোগী ভর্তি আছেন। যেখানে ১০ দিন আগেও রোগী ছিল ৪০ জনের মতো।
করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। ঈদের সময় জনসমাগম বেশি ছিল। দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে আগের তুলনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন, হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৭১ জন। হাসপাতালে আইসিইউ বেড আছে ১০টি। এর মধ্যে রোগী ভর্তি আছে ৭টি বেডে।
ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালের ফোকাল পারসন ডা. মামুনুর রশীদ বলেন, কোভিড ইউনিটের ৩২টি শয্যার মধ্যে ২৮টিতে রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সরকারি এই হাসপাতালটিতে আইসিইউ শয্যা চালুর কথা রয়েছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে আইসিইউ শয্যা চালু হবে বলে আশা করছি। এখানে ৫ বেডের আইসিইউ ইউনিট চালু করা হবে।
এদিকে সিএমপি বিদ্যানন্দ ফিল্ড হাসপাতালে করোনা ইউনিটের সবগুলো বেডে রোগী আছে বলে জানা গেছে। বেসরকারি হাসপাতাল চট্টগ্রাম পার্কভিউয়ের আইসিইউ ইউনিটেও বেড খালি নেই।
বেসরকারি মা ও শিশু হাসপাতালে বর্তমানে ৭৩ জন রোগী ভর্তি আছেন। আইসিইউ বেড আছে ১৬টি, সবগুলোতে রোগী ভর্তি। কখন একটি আইসিইউ বেড ফাঁকা হবে তার অপেক্ষায় থাকেন অনেক রোগী।
স্বাস্থ্যবিধি না মানায় করোনা বাড়ছে দাবি করে সিভিল সার্জন বলেন, স্বাস্থ্যবিধির কোনো নির্দেশনাই মানুষ মানতে চায় না। ফলে সংক্রমণের হার আবারও আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। বিশেষ করে এবার গ্রামাঞ্চলে আক্রান্তের হার তুলনামূলক বেশি দেখা যাচ্ছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ মে চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় ৩৫৯ জন করোনা রোগী ভর্তি ছিল। ১০ জুন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দেখানো হয় ৪১৪ জন। ১৭ জুন এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৮৬ জনে। সর্বশেষ বুধবারের (২৩ জুন) হিসাবে হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৯৮ জনে।
চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আরও পাঁচজন। এ সময়ে করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ২৭৪ জন। শনাক্তের হার ২৮.০৭ শতাংশ।
চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৭ হাজার ১৫৪ জন। শনাক্তদের মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীর ৪৪ হাজার ৭৮৭ জন ও জেলার বিভিন্ন উপজেলার ১২ হাজার ৩৬৭ জন রয়েছেন। করোনা আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত মোট ৬৭১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৪৬৬ জন চট্টগ্রাম নগরের। আর বিভিন্ন উপজেলায় মারা গেছেন ২০৫ জন।
Discussion about this post