হার্টবিট ডেস্ক
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশে এখনও অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড টিকা প্রয়োগ চলছে। তবে টিকা সংকটের কারণে ইতোমধ্যেই অধিকাংশ কেন্দ্রে প্রথম ডোজের পর দ্বিতীয় ডোজও বন্ধ রাখা হয়েছে।
জানা গেছে, প্রথম ডোজ টিকা দেওয়ার পর দ্বিতীয় ডোজের প্রায় ১৫ লাখ টিকার ঘাটতি রয়েছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকার এ টিকা বিভিন্ন দেশ থেকে আনার জোর চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। তবে এর পাশাপাশি অন্য কোনো টিকায় দ্বিতীয় ডোজ পূর্ণ করার ব্যাপারেও ভাবছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
বুধবার (২৩ জুন) দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র ও জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিনে এ তথ্য জানিয়েছেন ।
তিনি বলেন, ‘অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ঘাটতি রয়েছে। আর এটি শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারাবিশ্বেই ঘাটতি। এ টিকার বিষয়ে অনেকেই আমাদের আশ্বাসের মধ্যে রেখেছেন, কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত টিকা আমাদের হাতে না আসে ততক্ষণ টিকা পেয়েছি বা আসছে নির্দিষ্ট করে এমন কিছু বলা যাচ্ছে না। শুধু আশ্বাস নিয়ে রাখলেই হবে না, আমাদের দেখতে হবে চুক্তিগুলো ঠিকমত করতে পারছে কিনা।’
রোবেদ আমিন বলেন, অক্সফোর্ডের যে টিকাটি রয়েছে, সেটি হলো ভেক্টর ভ্যাক্সিন। এমন টিকা আরও অনেক প্রতিষ্ঠানেরই রয়েছে। যেমন- রুশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান গামালিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউটের একটি টিকা, চাইনিজ বায়োফর্মাসিউটিক্যাল সংস্থা ক্যানসাইনোর একটি টিকা, যুক্তরাষ্ট্রের জনসন অ্যান্ড জনসনও একই ধরনের টিকা। সুতরাং এই ধরনের অলটারনেটিভ (বিকল্প) টিকাও যদি আমরা পেয়ে যাই, তাহলেও কিন্তু দেশে দ্বিতীয় ডোজের ঘাটতি হওয়া টিকার সমস্যা সমাধান করা যাবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কোভিশিল্ড ব্রিটেনের অক্সফোর্ড টিকার ফর্মুলায় তৈরি। অক্সফোর্ডের চ্যাডক্স টিকা ডিএনএ ভেক্টর ভ্যাকসিন। মানে হল, অ্যাডেনাভাইরাস নামে একধরনের সর্দি-কাশির ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করে তার মধ্যে করোনাভাইরাসের প্রোটিন ভরে এই টিকা তৈরি হয়েছে। সরাসরি ভাইরাসের প্রোটিন যাতে শরীরে ঢুকে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে না পারে, সে কারণেই অন্য একটি ভাইরাসকে ভেক্টর হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এই ধরনের ডিএনএ ভ্যাকসিন মর্ডানা বা ফাইজারের আরএনএ ভ্যাকসিনের থেকে কিছু আলাদা। তাই টিকার কার্যকারিতা এবং এফিকেসির মধ্যেও তফাৎ রয়েছে। মর্ডানা বা ফাইজারের টিকা যেভাবে কাজ করবে, অক্সফোর্ডের টিকার কার্যপদ্ধতি তার থেকে আলাদা হবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আনতে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা থেকেও চেষ্টা করা হচ্ছে। ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম আলাদা বৈঠক করেছেন। এছাড়া ঢাকায় নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার বেনোয়া প্রিফন্টেইনের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠক করেছেন। বৈঠকে দ্বিতীয় ডোজের জন্য উভয় দেশের কাছে জরুরিভাবে ২০ লাখ ডোজ টিকা দেওয়ার অনুরোধ করেছেন।
সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার কাছে বিপুল পরিমাণ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা মজুদ রয়েছে। এই টিকা তারা করোনায় সবচেয়ে ভুক্তভোগী দেশগুলোকে দিতে চায়। তবে বাংলাদেশ সেভাবে ভুক্তভোগী দেশ না হলেও এই দুই দেশ থেকে টিকা আনার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
বাংলাদেশের চেয়ে বেশি ভুক্তভোগী দেশ ভারত, ব্রাজিল, স্পেন প্রভৃতি দেশকেই যুক্তরাষ্ট্র টিকা দিতে আগ্রহী বেশি। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে টিকা আনতে প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও কাজে লাগিয়েছে সরকার। তারাও চেষ্টা করছেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে জরুরি টিকা পাওয়ার।
কোভিশিল্ড টিকা বাংলাদেশে দেওয়ার জন্য ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে বেক্সিমকোর মাধ্যমে চুক্তি করেছিল বাংলাদেশ সরকার। ৬ মাসের মধ্যে তিন কোটি টিকা আনার চুক্তি হয়েছিল। গত জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে ভারত থেকে দুই চালানে ৭০ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশ পেয়েছে। এছাড়া ভারত সরকারের উপহার হিসেবে দিয়েছে ৩২ লাখ ডোজ।
সবমিলিয়ে বাংলাদেশ হাতে পেয়েছে মোট এক কোটি দুই লাখ ডোজ টিকা। দেশে টিকাদান কর্মসূচি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত টিকা দেওয়া হয়েছে এক কোটি ৯৬ হাজার ৫২৫ ডোজ। সেই হিসেবে এ টিকা মজুত আছে আর মাত্র এক লাখ তিন হাজার ৪৭৫ ডোজ।
Discussion about this post