করোনায় জীবনরক্ষাকারী নতুন একটি চিকিৎসার পথ খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছেন যুক্তরাজ্যের একদল গবেষক। তারা বলেছেন, দুটি কোম্পানির তৈরি অ্যান্টিবডির একটি মিশ্রণ হাসপাতালে ভর্তি করোনা আক্রান্ত গুরুতর রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে সক্ষম।
তবে বেশ ব্যয়বহুল এই চিকিৎসায় রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জোরদার করার বদলে স্যালাইনের মাধ্যমে শক্তিধর অ্যান্টিবডি মানব দেহের শিরায় ঢুকিয়ে দেয়া হয় যা ভাইরাসকে পরাস্ত করতে পারে। যুক্তরাজ্যে হাসপাতালের পরীক্ষায় দেখা গেছে, কোভিডে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে প্রতি তিনজনের একজন এতে সেরে উঠেছেন।
এই চিকিৎসা দিয়ে করোনায় আক্রান্ত প্রতি ১০০ জন সাধারণ রোগীর মধ্যে ছয়জনের জীবন রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে বিশেষজ্ঞরা হিসেব করে দেখেছেন। তবে যেসব রোগীর দেহে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো যথেষ্ট অ্যান্টিবডি তৈরি হয় না; শুধু তাদেরই এই চিকিৎসা দেয়া হয়। এই চিকিৎসায় খরচ পড়বে ১ হাজার থেকে ২ হাজার ডলার।
এই চিকিৎসার মেডিকেল ট্রায়ালে অংশ নিয়েছিলেন কিম্বারলি ফেদারস্টোন (৩৭)। তিনি বলছেন, আমার ভাগ্য ভাল যে করোনা হওয়ার পর আমাকে যখন হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ততদিনে এই পরীক্ষা চালু হয়ে গিয়েছিল। এই যুগান্তকারী পরীক্ষাটিতে আমি অংশ নিতে পেরেছিলাম।
এই চিকিৎসার নাম মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি ট্রিটমেন্ট। এটি উদ্ভাবন করেছে রিজেনারন নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এর ওষুধ করোনা ভাইরাসের কোষকে ঘিরে ধরে। এর ফলে দেহের অন্য কোনও কোষে করোনাভাইরাস আর সংক্রমিত হতে পারে না এবং সংখ্যায়ও বাড়তে পারে না।
ব্রিটেনের বিভিন্ন হাসপাতালের প্রায় ১০ হাজার করোনা রোগীর ওপর এই চিকিৎসার পরীক্ষা চালানো হয়। এর ফলাফলে দেখা যায়—
• মৃত্যু ঝুঁকি অনেক কমেছে,• হাসপাতালে চিকিৎসার সময়, যা গড়ে চারদিন, সেই সময়ও কমে এসেছে
• ভেন্টিলেটর ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তাও কমানো সম্ভব হয়েছে
এই চিকিৎসা পরীক্ষায় যে দু’জন নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের একজন হলেন স্যার মার্টিন ল্যানড্রে। তিনি বলেন, দুই ধরনের অ্যান্টিবডি মিশিয়ে স্যালাইনের মাধ্যমে শিরায় প্রবেশ করানো হলে কোভিড রোগীর মৃত্যুর সম্ভাবনা এক পঞ্চমাংশ কমে যায়।
হাসপাতালের ট্রায়ালে প্রদাহ-বিরোধী স্টেরয়েড ওষুধ ডেক্সামাথাসোনের পাশাপাশি রোগীদের ওপর নতুন এই চিকিৎসা প্রয়োগ করা হয়। পরীক্ষার দ্বিতীয় প্রধান গবেষক স্যার পিটার হরবি বলছেন, অ্যান্টিবডি চিকিৎসা আসলে কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা ছিল। কারণ কোন কোন পরীক্ষায় দেখা গেছে যে এটা খুব একটা সুফল বয়ে আনে না।
করোনা রোগীদের রক্ত থেকে প্লাজমা সংগ্রহ করে কোভিড চিকিৎসাতেও আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়নি। কিন্তু এই নতুন চিকিৎসার রিকভারি ট্রায়ালে ল্যাবরেটরিতে তৈরি দুটি সুনির্দিষ্ট অ্যান্টিবডির মিশ্রণ রোগীর দেহে ঢুকানো হয় যেগুলো করোনা ভাইরাসের কোষে আটকে যায়। সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স।
Discussion about this post