মৃগী (Epilepsy) রোগ একটি নিউরোলজিক্যাল বা স্নায়বিক রোগ এবং এতে খিঁচুনি হয়। এটি একপ্রকার মস্তিষ্কের রোগ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে “নিউরোলোজিক্যাল ডিজিজ” বলা হয়। মৃগী রোগ যে কোনো বয়সে হতে পারে৷ এটা কোনো সংক্রামক রোগ নয়৷ এই রোগের প্রকৃত কারণ জানা যায়নি কিন্তু জন্মগত ত্রুটি, মস্তিষ্কে আঘাত, মস্তিষ্কে টিউমার বা সংক্রমণ, স্ট্রোক প্রভৃতিকে সম্ভাব্য কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। জিনগত মিউটেশনকেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে দায়ী বলে ধারনা করা হয়।
মস্তিষ্কের সেরেব্রাল কর্টেক্সের স্নায়ুকোষগুলোর অতিরিক্ত ও অস্বাভাবিক ক্রিয়ার ফলে খিঁচুনি হয়। এ রোগে রোগী বার বার স্নায়বিক কারণে ফিট অর্থাৎ হঠাৎ খিচুনি বা অজ্ঞান হয়ে যায়। মৃগী রোগের একটি বৈশিষ্ট হলো রোগী বার বার খিঁচুনিতে আক্রান্ত হয় কিন্তু আক্রান্তের পর আবার পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায়৷ মৃগী রোগ থাকলেই ব্যক্তির বুদ্ধি-বিচার-বিবেচনা বোধ কমে যাবে এমন ধারনাটা সঠিক নয়। বরং মৃগী রোগে আক্রান্তদের মধ্যে খুব কম অংশের বুদ্ধিমত্তার ঘাটতি হতে পারে।
যে সকল কারণে মৃগী রোগীর খিঁচুনি হতে পারে
কিছু কিছু কারনে মৃগী রোগীর খিঁচুনি হতে পারে। যেমন- ঠিকমতো ঘুম না হলে, মানসিক চাপ বেশী থাকলে,
শারীরিক অথবা মানসিকভাবে অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে, কোন সংক্রমণ রোগ অথবা জ্বরের কারনে, মদ্যপান বা নেশা জাতীও অন্য কোন পানীয় পান করলে, খুব কাছে বসে টিভি দেখলে, উচ্চ শব্দের ফলে, গরম পানিতে গোসল করলে, জোরে গান বাজনা শুনলে, কিছু কিছু ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় এবং অতিরিক্ত আলো ইত্যাদি কারনে হতে পারে।
মৃগী রোগীর বৈশিষ্ট্য
যেসব মানুষ দীর্ঘদিন যাবৎ মৃগী রোগে ভুগছেন, সে সকল মৃগী রোগীদের মধ্যে সাধারনত কিছু বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। যেমন- অস্বাভাবিক আত্মকেন্দ্রিক হয়, খিটখিটে তিরিক্ষি মেজাজের হয়, ঝগড়া করার প্রবণতা থাকে, বুদ্ধিমত্তার ঘাটতি, বিষণ্ণতাগ্রস্ততা, ধর্মের দিক হতে গোঁড়া হবে, আবেগ মনোবৃত্তি বৃদ্ধি, যেকোনো বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করবে, আত্মহত্যার প্রবণতা ইত্যাদি।
মৃদু ধরনের মৃগী রোগের লক্ষণ
- হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া৷ এটা সাধারনত ১০ থেকে ১৫ সেকেন্ড স্থায়ী হতে পারে।
- অজ্ঞান হওয়ার সাথে সাথে খিঁচুনি শুরু হতে পারে।
- রোগী অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যেতে পারে আবার সাথে সাথে জ্ঞান ফিরে দাঁড়িয়ে যায়৷ তবে এটা খুব কম ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে।
- জিহ্বা ও দাঁতে কামড় লাগতে পারে।
- খিঁচুনির সময় পড়ে গিয়ে আঘাত পাওয়া।
- খিঁচুনির পর মাথাব্যথা, শুয়ে থাকা অথবা কিছু সময় ধরে চুপচাপ থাকা।
- খিঁচুনির সময় প্রস্রাব-পায়খানা হয়ে যেতে পারে।
বড় ধরনের মৃগী রোগের লক্ষণ
- এই রোগ সাধারণত কয়েক ঘন্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত থাকতে পারে এবং এ সময় রোগীর আচরণে কিছু পরিবর্তন আসে৷
- ফিট বা খিঁচুনি শুরু হওয়ার পূর্বে রোগী বুঝতে পারে৷
- রোগী জ্ঞান হারায় ও মাটিতে পড়ে যায়৷
- সবগুলো মাংশ পেশী টান টান হয়ে যায় এবং রোগী কান্নার মত চিৎকার করে। আবার রোগী নীল বর্ণ ধারন করতে পারে। এ অবস্থা সাধারণত ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ড স্থায়ী হয়৷
- ঝাঁকুনির মত খিঁচুনি শুরু হয় এবং মুখ দিয়ে ফেনা বের হয়৷ রোগী জিহ্বা কামড় দিয়ে রাখতে পারে৷
- রোগীর অজান্তেই প্রস্রাব কিংবা পায়খানা বেরিয়ে আসতে পারে৷
- রোগীর শরীর আস্তে আস্তে শীথিল হয়ে আসে, মুর্ছা যায় এবং পরবর্তীতে আস্তে আস্তে গভীরভাবে ঘুমিযে যায়৷ রোগী জেগে উঠার পর কিছু সময়ের জন্য সঠিকভাবে চিন্তা করতে পারে না এবং কি ঘটেছে সে ব্যাপারে কিছু মনেই করতে পারে না৷
- কিছু ক্ষেত্রে মাথা ব্যথা হতে পারে৷
শরীরের কোনো নির্দিষ্ট অংশে খিঁচুনি
শরীরের নির্দিষ্ট কোন স্থানে খিঁচুনি হতে পারে, মতিভ্রম হতে পারে আবার খিঁচুনি এক অঙ্গ থেকে বাড়তে বাড়তে সারা শরীরে ছড়িয়ে যেতে পারে। রোগী অজ্ঞান হতেও পারে আবার নাও হতে পারে৷ আবার খিচুনি বন্ধ হওয়ার পর ঐ অঙ্গে প্যারালাইসিস হতে পারে৷
Discussion about this post