হার্টবিট ডেস্ক
দেশের প্রতিটি অঞ্চলেই উদ্বেগজনক হারে ছড়িয়ে পড়েছে ভারতীয় ধরণ ‘ডেল্টা’। এ ধরনের সংক্রমণ ক্ষমতা এর আগে বাংলাদেশে শনাক্ত যুক্তরাজ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকার ধরনের চেয়ে বেশি। আক্রান্তদের পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ইতোমধ্যে বাংলাদেশে এ ধরনটি উদ্বেগজনকভাবে কমিউনিটিতে ছড়িয়ে পড়েছে।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং ইনস্টিটিউট ফর ডেভেলপিং সায়েন্স অ্যান্ড হেলথ ইনিশিয়েটিভস (আইডিএসএইচআই বা আইদেশি) করোনভাইরাসের ৫০টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করে এমন তথ্য পেয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে আইইডিসিআরের ওয়েবসাইটে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। দেশের করোনার উচ্চসংক্রমিত এলাকা থেকে আক্রান্ত রোগীদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে বলে জানায় প্রতিষ্ঠানটি।
এ ব্যাপারে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন গতকাল শুক্রবার রাতে একটি জাতীয় দৈনিককে বলেন, ‘ভারতের সীমান্তবর্তী জেলা ছাড়াও অন্যান্য জেলাতেও ডেল্টা ধরন পাওয়া গেছে। তার মানে দেশে এ ধরনের কমিউনিটি সংক্রমণ হয়েছে। এ ধরন যুক্তরাজ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকার ধরনের চেয়ে সংক্রমণ ক্ষমতা বেশি।’
আইইডিসিআরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ভারতীয় সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর পাশাপাশি নন-বর্ডার জেলাতেও করোনা ভারতীয় ধরন পাওয়া গেছে। বিশেষ করে ঢাকা শহরেও ভারতের করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। শহরের চারটি নমুনার দুটিতেই এ ধরন শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলায় সাতজনের নমুনায় ডেল্টা ধরন মিলেছে।
বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করা ভাইরাসের এ ভারতীয় ধরনের আনুষ্ঠানিক নাম বি.১.৬১৭.২। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর নাম দিয়েছে ‘ডেল্টা’। সংস্থার ওয়েবসাইটে এ ধরনটিকে ‘ভ্যারিয়েন্টস অব কনসার্ন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
আইইডিসিআরের তথ্য অনুযায়ী, ভারতের ডেল্টা ধরন সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে গোপালগঞ্জ ও খুলনায়। এর মধ্যে গোপালগঞ্জ থেকে সংগৃহীত সাতটি নমুনার ও খুলনার তিনটি নমুনার সবগুলোতেই, অর্থাৎ শতভাগ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। এর বেশি পাওয়া গেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এ জেলা থেকে সংগৃহীত ১৬টি নমুনার ১৫টিতেই, অর্থাৎ ৯৪ শতাংশ এ ধরন। এছাড়া দিনাজপুর, গাইবান্ধা, বাগেরহাট, ঝিনাইদহ ও পিরোজপুর থেকে সংগ্রহ করা নমুনায় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টটি পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছে আইইডিসিআর। এদের মধ্যে তিনজন চুয়াডাঙ্গা ও খুলনায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
আইইডিসিআর জানায়, পরীক্ষায় দেশে চার ধরনের করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। ৫০টি নমুনার মধ্যে ৪০টি বা ৮০ শতাংশই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট (বি.১.৬১৭.২)। এরপর বেশি পাওয়া গেছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিটা ভ্যারিয়েন্ট (বি.১.৩৫১), আটটি বা ১৬ শতাংশ। একটি নমুনায় চীনের উহানের সার্কুলেটিং স্ট্রেইন পাওয়া গেছে, যা মোট সংক্রমণের ২ শতাংশ। একটি অজানা ভ্যারিয়েন্টও পাওয়া গেছে, যা সংক্রমণের ২ শতাংশ।
৫০টি নমুনার মধ্যে যে ৪০টি নমুনায় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে পাওয়া গেছে, সেসব সংক্রমিত রোগীর মধ্যে ১৪ জন বিদেশে যাননি এবং বিদেশ থেকে আসা রোগীর সংস্পর্শে আসার কোনো তথ্যও মেলেনি।
শনাক্তকৃত ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট রোগীদের মধ্যে ৩ জনের (৭ শতাংশের) বয়স অনূর্ধ্ব ১০ বছর, ৭ জনের (১৮ শতাংশের) বয়স ১০-২০ বছর, ১০ জনের (২৫ শতাংশের) বয়স ২১-৩০ বছর, ৮ জনের (২০ শতাংশের) বয়স ৪১-৫০ বছর এবং ৪ জনের (১০ শতাংশের) বয়স ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট আক্রান্তদের মধ্যে ২৪ জন (৬০ শতাংশ) রোগী পুরুষ। আক্রান্তদের মধ্যে ৮ জনের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ভ্রমণের ইতিহাস রয়েছে এবং ১৮ জনের বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার ইতিহাস আছে। অপর ১৪ জন (৩৫ শতাংশ) রোগীর বাংলাদেশের বাইরে ভ্রমণের অথবা বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার কোনো ইতিহাস পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ বাংলাদেশে কভিড-১৯-এর ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কমিউনিটি সংক্রমণ বিদ্যমান।
Discussion about this post