ডা: তারেক আনোয়ার
কিডনির পাথর এখন অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। এটা একটা কিংবা উভয় কিডনিতেই হতে পারে। এটা সাধারণত ৩০-৬০ বছর বয়সীদের হয়। ১৫% পুরুষ এবং ১০% নারীর জীবনের কোন এক সময় কিডনিতে পাথর হতে পারে।
ডাক্তারী ভাষায় কিডনির পাথরকে nephrolithiasis বলা হয়। আর যদি পাথরের কারণে প্রচন্ড ব্যাথা হয়, তাহলে এটাকে renal colic বলা হয়।
কিডনির পাথর নির্ণয়
ব্যাথা না হলে মানুষ সাধারণত ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কোন প্রয়োজনীয়তা বোধ করে না। এ কারনে ব্যাথা শুরু হওয়ার আগে কিডনির পাথর সাধারণত ধরা পড়ে না।
ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পরে অধিকাংশ সময়ই ডাক্তার উপসর্গ শুনে কিডনিতে পাথর হয়েছে কিনা তা বলে দিতে পারবেন।
তবুও আপনাকে কিছু কিছু পরীক্ষা করতে হতে পারেঃ
- ইউরিন টেস্টের সাহায্যে কিডনিতে ইনফেকশন হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা
- ইউরিনের সাথে কোন পাথর বের হয় কিনা তা পরীক্ষা
- ব্লাড টেস্টের সাহায্যে কিডনিগুলো ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা তা পরীক্ষা
যদি ব্যাথার ঔষধেও আপনার ব্যাথা না যায়, অথবা ব্যাথার সাথে সাথে যদি আপনার শরীরের তাপমাত্রাও বাড়তে থাকে, তাহলে ডাক্তার আপনাকে একজন urologist (মূত্রাধার বিশেষজ্ঞ) এর কাছে পাঠাতে পারেন।
কিছু কিছু সময় আপনাকে ইমেজিং টেস্টের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হতে পারে। আসলেই কিডনিতে পাথর হয়েছে কিনা কিংবা পাথরটা ঠিক কোথায় আছে, তা বোঝার জন্য হাসপাতালে CT scan, X-ray অথবা ultrasound scan করা হতে পারে।
কিডনিতে পাথরের চিকিৎসা
আপনার কিডনির পাথর যদি ছোট হয়, তাহলে ডাক্তার শুধুমাত্র ব্যাথার ঔষধ দিয়ে আপনাকে অপেক্ষা করতে বলতে পারেন। কয়েকদিন অপেক্ষা করলে পাথর একা একাই শরীর থেকে বের হয়ে যেতে পারে। এই সময়টাতে ডাক্তার আপনাকে বেশি বেশি করে পানি – প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস – পান করতে বলতে পারেন।
কিডনির সাইজ যত ছোট হবে, একা একা বের হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি। যদি সাইজ ৫ মিলিমিটার (১/৫ ইঞ্চি) এর চেয়ে কম হয়, তাহলে ৯০% সময়েই পাথর একা একা বের হয়ে যায়। যদি পাথরের সাইজ ৫ মিলিমিটার থেকে ১০ মিলিমিটার হয়, তাহলে একা একা বের হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ৫০%।
যদি পাথরের সাইজ খুব বড় হয় এবং একা একা বের হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে, তাহলে বেশ কয়েকটা চিকিৎসার অপশন আছে।
ঔষধঃ বেশ কয়েক রকমের ঔষধ আছে, যেগুলো পাথরকে একা একা বের হতে সাহায্য করে। Alpha-blockers নামক এক ধরণের ঔষধ আছে, যেগুলো মুত্রনালীর দেয়ালকে শিথিল করে। এর ফলে রাস্তাটি বড় হয়, এবং পাথর সহজে বের হতে পারে। এই ঔষধের সাইড-ইফেক্ট হিসেবে হালকা হালকা মাথা ঘোরা অথবা মাথা ব্যাথা হতে পারে।
যদি আপনার প্রচন্ড ব্যাথা থাকে, তাহলে ব্যাথা ভালোর ইনজেকশন দেয়া হতে পারে। যদি আধা ঘন্টা পরে ব্যাথা না যায়, তাহলে আবার আরেকবার ইনজেকশন দেয়া হতে পারে।
শক ওয়েভ থেরাপিঃ কিডনির পাথর ভালো করার সবচেয়ে প্রচলিত চিকিৎসার নাম হচ্ছে Extracorporeal Shock Wave Lithotripsy (ESWL)। এটাতে উচ্চ শক্তির শক ওয়েভ দিয়ে পাথরকে ছোট ছোট টুকরা করে ফেলা হয়। ছোট ছোট টুকরাগুলো বড় গুলোর তুলনায় সহজে মুত্রনালি দিয়ে বের হয়ে যেতে পারে। সাইড-ইফেক্ট হিসেবে রক্ত পড়তে পারে অথবা চিকিৎসার পরে একটু ব্যাথা হতে পারে।
Ureteroscopy: যদি পাথর কিডনি থেকে বের হয়ে মূত্রথলীর কাছাকাছি চলে আসে, তাহলে Ureteroscopy নামক একটা চিকিৎসা করা হয়। এটাতে মূত্রনালীর ভিতর দিয়ে যেখানে পাথরটি আছে, সেখানে একটি পাতলা নল ঢোকানো হয়। তারপর একজন সার্জন পাথরটা ভেঙে ফেলে গুড়াগুলো নল দিয়ে বের করে ফেলেন। এতে শরীরের কোথাও কাঁটা হয় না।
তবে পাথর যদি খুব বেশি বড় হয়, তাহলে অপারেশন করা লাগতে পারে।
কিডনির পাথরের এনালাইসিস
পাথর বের করে ফেলার পরে, ডাক্তার পাথরটা কি দিয়ে তৈরি, তা পরীক্ষা করতে পারেন। ৮০% পাথরই ক্যালসিয়াম ভিত্তিক হয়। বাকিগুলো সাধারণত ইউরিক এসিড অথবা স্ট্রুভাইট দিয়ে তৈরি হয়। একটা কেমিকেল এনালাইসিসের দ্বারা সহজেই আপনার কি ধরণের পাথর হয়েছিল, তা পরীক্ষা করা সম্ভব। কি ধরণের পাথর হয়েছিল, তা জানলে পরবর্তীতে যেন না হয়, তার পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।
ভবিষ্যতে কিডনিতে পাথর হওয়ার প্রতিরোধ
আপনার যদি ক্যালসিয়ামের পাথর হয়ে থাকে, তাহলে ডাক্তার আপনাকে লবন এবং সোডিয়াম কম কম খেতে বলতে পারেন। এছাড়া আপনাকে হাই-অক্সালেট খাদ্য, যেমন, চকোলেট, কফি, চা, সবুজ শাক, কমলালেবু, মিষ্টি আলু ইত্যাদি খাওয়া নিষেধ করতে পারেন। তবে কিডনির পাথর প্রতিরোধ করার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে বেশি করে পানি পান করা যাতে প্রস্রাব সবসময় পরিষ্কার থাকে।
ক্যালসিয়ামঃ যদিও অধিকাংশ কিডনির পাথরে ক্যালসিয়াম থাকে, আপনাকে ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়া বাদ দেয়া নাও লাগতে পারে। এমনকি পরিমিত পরিমাণে দুগ্ধ এবং অন্যান্য ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খেলে নতুন পাথর হওয়ার সম্ভাবনাও কমতে পারে। আপনার কি পরিমাণ ক্যালসিয়াম খাওয়া উচিত তা আপনার ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করুন।
Discussion about this post