হার্টবিট ডেস্ক
দেশের দুই কিংবদন্তি চিকিৎসককে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার (৬ মে) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
জাতীয় অধ্যাপক হওয়া কিংবদন্তি দুই চিকিৎসক হলেন- ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. একে আজাদ খান ও বাংলাদেশ গ্যাস্ট্রোএনটারোলজি সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক মাহমুদ হাসান।
একই প্রজ্ঞাপনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ইমেরিটাস অধ্যাপক আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীনও জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।
শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক মন্ত্রী এবং সাবেক জাতীয় অধ্যাপকদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি তাঁদের জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নির্বাচিত করেছেন। কমিটির সিদ্ধান্ত ও মনোনয়ন অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশক্রমে রাষ্ট্রপতি তাঁদের নিয়োগ প্রদান করেছেন বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।
অধ্যাপক আজাদের বর্ণাঢ্য জীবন
ডা. আজাদ খান বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত চিকিৎসক, সমাজসেবক। বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলা জন্মগ্রহণ করা আজাদ খান পাদ্রীশিবপুরের সেন্ট আলফ্রেডস হাই স্কুল থেকে ১৯৫৮ সালে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে মেট্রিক পাস করেন। তিনি ১৯৬০ সালে ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। পরে ১৯৭০ সালে এফসিপিএস পাস করেন।
বর্ণাঢ্য কর্ম-জীবনের শুরুতে ১৯৭২ সালে কমনওয়েলথ বৃত্তি পেয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা শুরু করেন তিনি। সেখানে তিনি ‘ইনফ্লামেটরি বাওয়েল ডিজিজ’ নিয়ে কাজ করেন। সেই আলোকে নতুন ওষুধ তৈরি করা হয়। যে ওষুধটি আবিষ্কার করেন সেটির নাম—‘5-ASA Biased Drug’। ডায়রিয়ার সঙ্গে রক্ত পড়ার চিকিৎসার এটি মূল ওষুধ। সেখান থেকে নানা ওষুধ বেরিয়েছে। এর মধ্যে ‘অ্যাসাকল’, ‘ম্যাসাকল’ উল্লেখযোগ্য।
চিকিৎসা পেশার পাশাপশি অধ্যাপক আজাদ খান সামাজসেবায় অনন্য অবদান রেখে চলেছেন। তিনি উদ্যোগ নিয়ে তৈরি করেছেন ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট, ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার নেটওয়ার্ক (এনএইচএন), বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেস ও বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান। তিনি বর্তমানে ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৮ সালে স্বাধীনতা পদক পান এই প্রখ্যাত চিকিৎসক।
অধ্যাপক মাহমুদের বর্ণাঢ্য জীবন
অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হাসান দেশের একজন প্রখ্যাত চিকিৎসক ও শিক্ষক। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন। তিনি ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস এন্ড সার্জনসের (বিসিপিএস) সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি দুইবার চিকিৎসকদের অভিভাবক সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোশিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।
বাংলাদেশ গ্যাস্ট্রোএনটারোলজি সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক মাহমুদ হাসান সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৭ সালে একুশে পদক লাভ করেন।
প্রসঙ্গত, জাতীয় অধ্যাপক বাংলাদেশের বিশেষ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা যা বাংলাদেশ সরকার কতৃর্ক শিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও গবেষণার জন্যে দেশের বিশিষ্ট পণ্ডিত, চিন্তাবিদ এবং শিক্ষকগণকে প্রদান করা হয়। ১৯৭৫ সাল থেকে এই সম্মাননা প্রবর্তিত হয়। সাধারণত পাঁচ বছর মেয়াদের জন্যে তাঁদের জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। তবে ক্ষেত্রবিশেষে দীর্ঘতর মেয়াদের জন্যেও পুনর্নিয়োগ দেওয়া হয়।
Discussion about this post