ডা. কামরুল হাসান মিলন
অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগ, জাতীয় হদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল ঢাকা।
হৃদরোগ যখন ওষুধ দিয়ে চিকিৎসার আওতার বাইরে চলে যায়, তখনই বাইপাস অপারেশনের প্রয়োজন পড়ে। হার্টের তিন বা ততধিক রক্তনালি বা বাম দিকের মূল রক্তনালির গোড়া কোনো কারণে বন্ধ হয়ে গেলে হার্টের বাইপাস অপারেশনের প্রয়োজন হয়। বয়সের কারণে বা চর্বি জমে বন্ধ হয়ে যাওয়া হার্টের রক্তনালিগুলো যদি স্টেন্ট বা রিং পরিয়ে অথবা এনজিওপ্লাস্টি করে ভালো করা সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে সিএবিজি বা বাইপাস অপারেশনের বিকল্প থাকে না। অনেকে আবার একে ওপেন হার্ট সার্জারি বলে থাকেন। তবে কথাটি সবক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
সব জটিল হৃদরোগে বাইপাস অপারেশন লাগে না। বাইপাস অপারেশন আর ওপেন হার্ট সার্জারি কথাটাও সমার্থক নয়। হার্টের ভাল্ভের রোগ, রক্তনালির রোগ, হার্টের মাংসপেশির রোগ, শিশুদের জন্মগত হদরোগ এসব ক্ষেত্রে ওপেন হার্ট সার্জারির প্রয়োজন হয়। আর বাইপাস সার্জারি হলো করোনারি আর্টারি বাইপাস সার্জারি বা সংক্ষেপে সিএবিজি সার্জারি।
বাইপাস অপারেশন হার্ট স্পন্দিত অবস্থায় বা বিটিং হার্টে করা যায়। একে অপক্যাব সার্জারি বলে। তবে বর্তমানে উন্নত বিশ্বে হৃদস্পন্দন বন্ধ করেই বেশির ভাগ সিএবিজি সার্জারি করা হয়। ওপেন হার্ট সার্জারিতে হার্টকে পুরোপুরি থামিয়ে দেওয়া হয় এবং অপারেশনকালীন হার্ট-লাং মেশিন হার্ট ও ফুসফুসের কাজ চালিয়ে নেয়।
বুকের মাঝখানে কাটা ছাড়াও বাম পাশে ছোট করে কেটেও সিএবিজি অপারেশন করা যায়। একে বলা হয় মিডক্যাব সার্জারি। রোবোট দিয়েও উন্নত বিশ্বে সিএবিজি সার্জারি করা হচ্ছে।
ইসকেমিক হার্ট ডিজিজের চিকিৎসায় সিএবিজি সার্জারির ফল স্টেন্ট পরানোর চেয়ে ভালো এই অর্থে, একবার সিএবিজি করালে তা অনেকদিন স্থায়ী হয় এবং সেসব রক্তনালিতে সিএবিজি করা যায়, যেখানে কখনও স্টেন্ট পরানো সম্ভব নয়। তবে এ ধরনের অপারেশনের ঝুঁকি সামলাতে অনেক রোগীই পারেন না। অনেকে আবার রোগের জটিলতার কারণে (বার্ধক্য, ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ) সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠতে সক্ষম হন না। এসব কিছু মাথায় রেখেই সার্জনকে এ ধরনের জটিল অপারেশন করতে হয়।
সিএবিজির মূল সমস্যা হলো রোগীর বুক কাটতে হয় এবং শরীরে বড় কাটা দাগ থাকে এবং এই অপারেশনটি পুরো অজ্ঞান করে করা হয় আর এতে স্বাস্থ্যঝুঁকিও বেশি। এই অপারেশনে হার্টের ধমনির যেসব জায়গায় বল্গক আছে, তার পরবর্তী স্থানে আরেকটি রক্তনালি লাগিয়ে দেওয়া হয়। ফলে ধমনিতে স্বাভাবিক গতিতে রক্তপ্রবাহ চলমান থাকে। এই নতুন রক্তনালিটি বুকের ভেতর থেকে নেওয়া হয়। আবার পায়ের মোটা শিরা বা হাতের ধমনিকেও এই কাজে ব্যবহার করা হয়। এজন্য সিএবিজি অপারেশনের রোগীর পা এবং হাতে কাটা দাগ থেকে যায়।
সিএবিজি বা বাইপাস সার্জারি সেই অর্থে এখন আর কোনো ভীতিকর সার্জারি নয়। উন্নত বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও উন্নত প্রযুক্তি আর দক্ষ কার্ডিয়াক সার্জনদের সমন্বয়ে প্রতিনিয়ত এ অপারেশন করা হচ্ছে। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে স্বল্প খরচে রোগীদের বাইপাস সার্জারির মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।
Discussion about this post