হার্টবিট ডেস্ক
ওপেন হার্ট সার্জারি কখন দরকার হয়?
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে কার্ডিয়াক সার্জারির প্রধান অধ্যাপক ডা. অসিত বরণ অধিকারী বিস্তারিত জানিয়ে বলছিলেন, “হার্টের যে কোনো সমস্যা যখন ঔষধ দিয়ে আর চিকিৎসা করা সম্ভব হয়না, তখনই আমরা ওপেন হার্ট সার্জারি ও বাইপাস সার্জারি করি। এটা এক এক সমস্যার জন্য ভিন্ন।”
তবে তিনি জানান এই অস্ত্রোপচারের জন্য হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসের কাজ একটি যন্ত্র দিয়ে চালানো হয় আর সেটিকেই বলা হয় ওপেন হার্ট সার্জারি।
তিনি বলছেন, বয়স্কদের মধ্যে ইদানিং চর্বি জমে হৃদযন্ত্রের রক্তনালী বন্ধ হয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এটি সবচেয়ে বেশি দরকার হচ্ছে।
আর শিশুদের বেলায় জন্মগত সমস্যার ক্ষেত্রে।
যেমন হৃদযন্ত্রে ফুটো নিয়ে যে শিশুরা জন্ম নেয় অথবা হৃদযন্ত্রের রক্তনালী জন্মগতভাবে যাদের সরু তাদের এটি দরকার হয়।
জন্মগতভাবে শিশুর হৃদযন্ত্রে সমস্যা থাকলে বেশিরভাগ সময় বাইপাস সার্জারির দরকার হয় বলে জানালেন তিনি।
বয়স্কদের ক্ষেত্রে এখন চর্বি জমে হৃদযন্ত্রের রক্তনালী বন্ধ হয়ে যাওয়া খুব বেশি দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে শিশুদের ক্ষেত্রে হৃদযন্ত্রে ফুটো।
কীভাবে এই অস্ত্রোপচার করা হয়?
নানা ভাবে ওপেন হার্ট সার্জারি ও বাইপাস সার্জারি করা হয়।
ঠিক বুকের মাঝখানে চিরে ফেলে, হাড় কেটে অথবা বুকের পাশে কেটেও এই সার্জারি হতে পারে। বুকের হাড় না কেটেও এই অস্ত্রোপচার সম্ভব।
বুকের খাঁচার হাড়ের মাঝখান দিয়ে হাড় না কেটে এটি করা সম্ভব।
হার্ট অ্যাটাক কী ও কেন হয়?
ডা. অসিত বরণ অধিকারী বলছেন, এর পুরোটাই নির্ভর করে কীধরনের সমস্যা তার উপর। তবে মূল বিষয় হল হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসের কাজ চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অস্ত্রোপচারের সময় কৃত্রিম যন্ত্র দরকার হয়।
হৃদযন্ত্রের রক্তনালী যদি চর্বি জমে বন্ধ হয়ে যায় যখন শরীরের অন্য কোথাও থেকে রক্তনালী কেটে নিয়ে তা বসানো হয়।
ডা. অধিকারী বলেছেন, “বিষয়টি হল এরকম- যেমন ধরুন একটি রাস্তার মাঝখানে কোথাও মাটি পড়ে আটকে গেছে। তখন যাবার জন্য ওই রাস্তার পাশ দিয়ে আরেকটি পথ তৈরি করতে হয়। শরীরেও সেভাবে অন্য কোথাও থেকে রক্তনালী এনে ওইরকম একটা বিকল্প পথ তৈরি করা হয় রক্ত চলাচলের জন্য।”
ঝুঁকি কতটা?
ডা. অধিকারী বলেছেন, সেরকম ঝুঁকি এখন আর নেই। এই ক্ষেত্রে মৃত্যুর হার বড়জোর এক থেকে দুই শতাংশ।
তবে যদি রোগীর অন্য কোন শারীরিক সমস্যা থাকে তবে সমস্যা হতে পারে।
তিনি বলছেন, “যেমন ডায়াবেটিস থাকলে ইনফেকশনের ভয় থাকে। হাইপার-টেনশন থাকলে ঝুঁকি বাড়ে। যাদের শরীরে চর্বি বেশি থাকে তাদের পোস্ট অপারেটিভ ঝামেলা হয়।”
খরচ কতটা?
বিভিন্ন হাসপাতালে এর ভিন্ন-ভিন্ন খরচ। যেমন বিএসএমএমইউতে পুরো প্যাকেজ দেড় লাখের মতো বলে জানাচ্ছেন ডা. অধিকারী।
তবে তিনি বলছেন বেসরকারি কোন্ হাসপাতালে আপনি যাচ্ছেন বা কোন্ চিকিৎসক অস্ত্রোপচার করছেন তার উপর নির্ভর করবে খরচ কতটা হবে। সেক্ষেত্রে খরচ আরও বেশি হতে পারে।
হৃদযন্ত্রের সমস্যায় আর কী ব্যবস্থা রয়েছে?
বয়স্কদের ক্ষেত্রে হৃদযন্ত্রের ভালভ্ প্রায়ই নষ্ট হয়ে যায়। বিশেষ করে দুটো।
সেই ভালভ্ কেটে ফেলে দিয়ে নতুন টিসু দিয়ে ভালভ্ তৈরি করে লাগিয়ে দেয়া হয়।
অথবা যান্ত্রিক ভালভ্ বসানো হয়। হোমোগ্রাফ বলেও একটি ব্যবস্থা রয়েছে ভালভ্ নষ্ট হলে।
কিন্তু বাংলাদেশে সেটি খুব একটা পাওয়া যায় না। হৃদযন্ত্রের বিদ্যুৎ তরঙ্গ চলাচল বাধাগ্রস্ত হলে বসানো হয় পেসমেকার যন্ত্র।
অর্থাৎ বলা যেতে পারে এক ধরনের কৃত্রিম ব্যাটারির মতো যন্ত্র বসিয়ে হৃদযন্ত্রে এই তরঙ্গ তৈরি করা হয়।
আধুনিক ব্যবস্থা বাংলাদেশে কতটা পাওয়া যায়?
বাংলাদেশ নানা ধরনের প্রযুক্তি এখন পৌঁছে গেছে বলে জানালেন ডা. অধিকারী। আশির দশকের শুরুর দিক থেকে ওপেন হার্ট সার্জারি ও পেসমেকার বসানো হচ্ছে বাংলাদেশে।
রোগী সজাগ থাকা অবস্থায় অস্ত্রোপচার করার প্রযুক্তি রয়েছে।
কিন্তু বাংলাদেশে যন্ত্রপাতির অনেক অভাব রয়েছে। সেটির তুলনা করতে গিয়ে ডাঃ অধিকারী বলছেন, “ধরুন আমেরিকার প্লেন আছে হাজার আর আমাদের আছে দশটা। সেরকম হওয়ার কারণে আমাদের সমস্যা হয়।”
তিনি আরও বলছেন, নবজাতকরা হৃদযন্ত্রে সমস্যা নিয়ে জন্মালে সেটির অস্ত্রোপচারের ব্যাপারেও বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে রয়েছে।
সর্বশেষ আবিষ্কার হওয়া নানা পদ্ধতির নাম
হৃদরোগের চিকিৎসায় পৃথিবীতে এখন অনেক ধরনের প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা হচ্ছে।
যেমন মানুষের তৈরি কৃত্রিম হৃদপিণ্ড। এছাড়া জিন প্রকৌশল, জীব প্রযুক্তি দিয়ে ল্যাবে হৃদপিণ্ড তৈরি।
তিনি বলছেন, “মানবদেহ থেকে কিছু সেল নিয়ে হৃদপিণ্ড তৈরি। মায়ের পেটে যেভাবে হৃদপিণ্ড তৈরি হয়, সেরকম পরিবেশ তৈরি করে হৃদপিণ্ড তৈরি। এসব অবশ্য এখনো মানবদেহে ব্যবহার শুরু হয়নি।”
তবে এই ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা এখন অনেক এগিয়েছেন। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনে।
Discussion about this post