হার্টবিট ডেস্ক
ব্যায়াম ছাড়াও, আসুন আমরা অন্যান্য প্রতিকারগুলি দেখি যা আপনাকে পিঠ ব্যথা থেকে ত্রাণ দিতে সহায়তা করতে পারে। এই প্রতিকারগুলির মধ্যে রয়েছে:
1. ভাল ভঙ্গির অনুশীলন
আপনার গর্ভাবস্থার যাত্রার অগ্রগতির সাথে সাথে, আপনার শিশুর বৃদ্ধি হয়, এবং আপনি সামনের দিকে পড়ে যাওয়া এড়াতে, আপনি শেষ পর্যন্ত পিছনের দিকে ঝুঁকে পড়তে পারেন। এই ভঙ্গি নিম্ন পিঠের পেশীর চাপ পরিবর্তন করে এবং পিঠে ব্যথা শুরু করায়। অতএব, ভাল ভঙ্গির অনুশীলন পিঠে ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে সহায়ক হতে পারে। সেরা ভঙ্গিগুলির মধ্যে রয়েছে:
- সোজা এবং লম্বাভাবে দাঁড়ানো
- আপনার বুক উঁচু করে রাখা
- আপনার কাঁধ এবং পিঠ শিথিল রাখা
- দাঁড়িয়ে থাকার সময় আরামদায়ক ভাবে পা ফাঁক করে দাঁড়ানো
- আপনার পা–কে বিশ্রাম দেওয়া এবং দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়াতে হলে ঘন ঘন বিরতি গ্রহণ করা
- হাঁটু লক হয়ে যাওয়াকে এড়ানো
- অবলম্বন যুক্ত চেয়ার বেছে নিয়ে বা ঠেসান দেওয়ার জন্য পিঠের পিছনে একটি বালিশ রাখার মাধ্যমে বসার সময় যত্ন নেওয়া
2. সঠিক পোশাক–পরিচ্ছদ পাওয়া
পোশাকের মতো, অন্যান্য আনুষঙ্গিক উপকরণ যেমন পাদুকাও গর্ভাবস্থায় আরামদায়ক ভাবে থাকা নিশ্চিত করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ওজন বৃদ্ধি এবং মাধ্যাকর্ষণ কেন্দ্রের স্থানান্তরের কারণে, উচ্চ–হিল যুক্ত জুতা পরা এড়িয়ে যান কারণ তারা আপনার ভারসাম্যকে আরো কমাতে পারে এবং আপনি পড়ে যেতে পারেন। কম হিলযুক্ত পাদুকা যাতে বাঁকা অংশে ভালো অবলম্বন দেওয়া থাকে, তা পরলে আপনার হাঁটার অভিজ্ঞতাকে সহজ করতে সাহায্য করে।Advertisements
3. সঠিকভাবে উত্তোলন
গর্ভাবস্থায় ভারী বস্তু উত্তোলন চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। সুতরাং, সতর্কতা অবলম্বন করা ভালো। সাহায্য নিতে উপদেশ দেওয়া হয় কারণ নীচু হয়ে ভারী বস্তু উত্তোলন করলে পিঠে টান পড়তে পারে এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। আপনাকে যদি কোনো ছোট বস্তু তুলতেই হয়, তাহলে উবু হন এবং আপনার পায়ের উপর অবলম্বন করে ধীরে ধীরে সেটিকে তুলুন।
4. যথোপযুক্তভাবে ঘুমানো
আপনার ঘুমের ভঙ্গি গর্ভাবস্থায় একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উপরন্তু, সঠিক ঘুমের ভঙ্গি পিঠ ব্যথা থেকে মুক্তি প্রদান করতে পারে। রাতে ভালো ঘুমাতে, চিত হয়ে ঘুমাবেন না। পাশ ফিরে ঘুমান এবং আপনার হাঁটু ভাঁজ করে রাখুন। আপনি অবলম্বনের জন্য বালিশও ব্যবহার করতে পারেন। হাঁটুর মাঝখানে, পিঠের পেছনে এবং পেটের এলাকার নীচে বালিশগুলি রাখুন। আপনি আপনার পিঠে অবলম্বন দেওয়ার জন্য একটি দৃঢ় গদিও ব্যবহার করতে পারেন।
5. শিথিল হওয়ার কৌশল অনুশীলন
যোগব্যায়াম, গভীর শ্বাস এবং মালিশের মত শিথিল হওয়ার কৌশল অনুশীলন করলে গর্ভাবস্থার পিঠ ব্যথা থেকে আরাম পেতে সাহায্য করতে পারে। যোগ এবং গভীর শ্বাস পেশীর টান কমাতে সাহায্য করতে পারে, এবং গভীর ঘুমের মাধ্যমে আপনাকে শিথিল করে। যদিও এটি প্রমাণ করার জন্য কোন গবেষণা ফলাফল নেই তবে, আপনি আপনার পিঠে ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে হালকা মালিশ করতে পারেন অথবা গরম বা ঠান্ডা প্যাক প্রয়োগ করতে পারেন। অনেক গর্ভবতী মহিলারা মালিশ এবং গরম / ঠান্ডা প্যাকের মাধ্যমে কিছু আরাম উপভোগ করেন।
6. পরিপূরক থেরাপি ব্যবহার করে
গবেষণা জানায় যে আকুপাংচার গর্ভাবস্থায় হওয়া পিঠ ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়। কাইরোপ্র্যাক্টিক চিকিত্সাও পিঠে ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে। এই চিকিত্সায় পিঠে ব্যথা কমানোর প্রচেষ্টায় মেরুদন্ডকে হাত দিয়ে নড়িয়ে–চড়িয়ে ঠিক করার উপর জোর দেয়। তবে, যদি আপনি এই থেরাপিরগুলি ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য পরিপূরক বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করতে চান, তাহলে অবশ্যই আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে পরামর্শ করুন।
7. আপনার রুটিনে দৈনিক শারীরিক কর্মসূচী যুক্ত করা
হাঁটা, প্রসারিত করা, স্কোয়াটিং, জল ব্যায়াম এবং অন্যান্য সাধারণ সাংসারিক কাজকর্মের মতো শারীরিক ক্রিয়াকলাপ আপনাকে সক্রিয় রাখতে এবং আপনার পিঠকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করতে পারে। যদিও আপনি পিঠের ব্যথার সময় বিছানায় কুঁকড়ে থাকতে চাইবেন, কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণে শারীরিক ক্রিয়াকলাপ আপনার পিঠে ব্যথাতে আরাম দিতে পারে।
পিঠে ব্যথার জন্য এই প্রতিকারগুলি গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুব উপকারী হতে পারে, তবে এগুলি শুরু করার আগে আপনার চিকিত্সক বা স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে পরামর্শ করার উপদেশ দেওয়া হয়।
গর্ভাবস্থায় দুই–তৃতীয়াংশের বেশি গর্ভবতী মহিলাদের পিঠের ব্যথা অনুভব হয়, প্রায় এক শতাংশ নারী “সায়াটিকা” দ্বারা প্রভাবিত হয়। কখনও কখনও, নিম্ন পিঠের ব্যথা উরু এবং নিতম্বতে ছড়িয়ে পড়ে, এবং সেটিকে সায়াটিকা ভেবে ভুল করা হয়। গর্ভাবস্থায় সায়াটিকা সাধারণত হয় না, এবং এটি মেরুদণ্ডের নিচের অংশে একটি ডিস্কের ফুলে যাওয়ার কারণে ঘটে। আপনার যদি সায়াটিকা থাকে, তবে ব্যথা হাঁটুর নীচে, পা এবং পায়ের পাতায় চলে যায়। এর সাথে পায়ে একটি চিনিচিনে বেদনা বা অসাড়তা থাকে। গুরুতর সায়াটিক ব্যথা আপনার জঙ্ঘা বা যৌনাঙ্গ অঞ্চলে অসাড়তা সৃষ্টি করতে পারে। আপনার প্রস্রাব বা মলত্যাগে অসুবিধা হতে পারে। আপনি যদি এই উপসর্গগুলি দেখতে পান, তবে আপনার ডাক্তারের সাথে দেখা করার এবং সায়াটিক ব্যথার চিকিত্সা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে মালিশ, কাইরোপ্র্যাকটিক যত্ন এবং শারীরিক ক্রিয়াকলাপ।
এখন আপনি গর্ভাবস্থায় পিঠ ব্যথা, এর কারণগুলি, ধরন এবং এর থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রতিকারগুলি সম্পর্কে সচেতন, তাই এখন ধৈর্য না হারিয়ে গর্ভাবস্থার যাত্রা উপভোগ করার সময়। আপনার মেরুদন্ড, পিঠ এবং পায়ে বিশেষ মনোযোগ প্রদান করে আপনার শারীরিক সুস্থতার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে ভুলবেন না। আপনার স্মরণীয় যাত্রায় চলার সময়, শিথিল হওয়ার পদ্ধতিগুলি শিখলে এবং যথাযথ ঘুমের ভঙ্গিগুলি মেনে চললে আপনার অনেক সাহায্য হতে পারে।
Discussion about this post