জাকিয়া আহমেদ
ভারতে আশঙ্কাজনক হারে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ছড়াচ্ছে। ডাবল ও ট্রিবল মিউট্যান্ট ভাইরাসের কথা শোনা যাচ্ছে। নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশে চলে আসার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। যদি ঢুকেই পড়ে তবে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ওটাকে সামাল দিতে প্রস্তুত নয় বলে শঙ্কা তাদের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে এখনও এই ভ্যারিয়েন্ট রিপোর্ট হয়নি। কিন্তু যেহেতু ভারত একেবারেই কাছের দেশ, বর্ডারগুলোও সীমিতভাবে চালু রয়েছে, স্থলবন্দর দিয়ে যাতায়াতও রয়েছে, তাই দেশে এই ভ্যারিয়েন্ট আসতে বেশি দেরি লাগবে না। এসে পড়লে পরিস্থিতি ভয়ানক হবে।
তিন গুণ শক্তিশালী
ভারতে করোনাভাইরাসের ‘ডাবল মিউট্যান্ট’ আতঙ্ক কাটতে না কাটতেই সম্প্রতি শোনা যাচ্ছে ‘ট্রিপল মিউট্যান্ট ভ্যারিয়্যান্ট’ এর কথা।
ইতোমধ্যে পশ্চিমবঙ্গসহ দেশটির অন্তত চারটি রাজ্যে এ ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। বাকি রাজ্যগুলো হচ্ছে দিল্লি, মহারাষ্ট্র ও ছত্তিশগড়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিড-১৯ ভাইরাসের তিনটি আলাদা স্ট্রেইন মিলে তৈরি নতুন এই ভ্যারিয়্যান্টের সংক্রমণের ক্ষমতা তিন গুণ বেশি।
নতুন এই স্ট্রেইনে আক্রান্তদের শারীরিক অবস্থারও দ্রুত অবনতি ঘটছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সময়মতো লাগাম পরানো না গেলে এবার সংক্রমণের সুনামি ঘটবে।
ভারতে করোনাভাইরাসের ‘ডাবল মিউট্যান্ট- B.1.617 ‘ ধরন শনাক্তের পর থেকেই এ নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। এরইমধ্যে ধরনটি ভারতের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে।
ভারতের জিনোম বিজ্ঞানীরা করোনাভাইরাসের যে ‘ডাবল মিউট্যান্ট ভ্যারিয়েন্ট’ চিহ্নিত করেছেন, সেটি নিয়েও উদ্বেগ আছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই ডাবল মিউটেশনের কারণে ভাইরাসটি মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ফাঁকি দিতে পারে। টিকা তখন কাজ করে না।
যুক্তরাষ্ট্রের লুইসিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটির হেলথ সায়েন্স সেন্টারের ভাইরোলজিস্ট ড. জেরেমি কামিল জানিয়েছেন, ভারতের একটি মিউটেশন, ই৪৮৪কিউ অনেকটা দক্ষিণ আফ্রিকার বা ব্রাজিল ভ্যারিয়েন্টের কাছাকাছি।
ড. কামিলের মতে, ভারতে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের তীব্রতার পেছনে সম্ভবত এই ভ্যারিয়েন্টই ভূমিকা রেখেছে। অবস্থাদৃষ্টে দেখা গেছে, এটির ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা ৫০ শতাংশ বেশি এবং ৬০ শতাংশ বেশি মারাত্মক। আগের ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রতি একজনের মৃত্যুর তুলনায় এটিতে মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬। তবে ড. কামিলের মতে, দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য মানুষের উদাসীনতাই বেশি দায়ী।
এদিকে আসবেই
বাংলাদেশে এখনও এই ভ্যারিয়েন্ট রিপোর্টেড হয়েছে বলে জানা যায়নি। কিন্তু যদি চলে আসে তবে সেটা বাংলাদেশের জন্য কী পরিমাণ ঝুঁকির কারণ হবে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং কোভিড ১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ভারত থেকে যদি চলেই আসে তবে তা আমাদের জন্য অনেক ঝুঁকির হবে, আর এটা যে আসবেই তা সহজে ধরে নেওয়া যায়। ভারত থেকে আসা যাত্রীদের সর্বোচ্চ কোয়ারেন্টিনের জন্য টেকনিক্যাল কমিটি সুপারিশ করেছে। কিন্তু আমরা সেটাও করতে ব্যর্থ হয়েছি।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ভারতের এই ভাইরাস আমাদের দেশে ছড়ানোর সমূহ আশঙ্কা আছে। একে তো আমাদের প্রতিবেশী দেশ, তারওপর স্থলবন্দর দিয়ে প্রচুর মানুষ যাতায়াত করছে।
ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ একদম বন্ধ করা সম্ভব নয় বিভিন্ন কারণে। আর এ কারণে এই ভ্যারিয়েন্ট আসতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. রিদওয়ানুর রহমান।
তিনি বলেন, বন্দরগুলোতে অ্যান্টিজেন টেস্ট চালু করা উচিত। এতে ২০ মিনিটের মধ্যে ফলাফল জানা যাবে। কোয়ারেন্টিনও সেরা উপায়। কিন্তু যদি সেটা সম্ভব না হয়, তবে পরীক্ষা করিয়ে দেশে ঢোকাতে হবে। এতে অন্তত ৯০ শতাংশ শনাক্ত করা যাবে।’
স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় কুলাবে না
ভারতের এই ডাবল বা ট্রিপল মিউটেন্ট যদি বাংলাদেশে চলেই আসে তবে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সামাল দিতে পারবে কিনা প্রশ্নে অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এখনই তো সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। সেখানে ওটা কী করে সামাল দেবো। আমাদের দেশে যা হবার তা-ই হবে। আমরা কিছু পারিনি, পারবোও না।’
মিউটেশন সার্ভেইলেন্সের দায়িত্ব আইইডিসিআর-এর। এমনটা জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র ও অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, তারা আমাদের এখন পর্যন্ত ডাবল বা ট্রিপল মিউট্যান্ট ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে জানায়নি।ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ তো দূরের কথা, সাধারণ বেডই পাওয়া যাচ্ছে না, সেখানে নতুন ভ্যারিয়েন্ট দেশে এলে কুলিয়ে উঠতে পারবো না আমরা। ভেঙে পড়বে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা।’
source- bangla tribune
Discussion about this post