হার্টবিট ডেস্ক
হঠাৎ ত্বকের এক পাশ বা একটা এলাকাজুড়ে তীব্র ব্যথা বা জ্বালা, তারপর সেখানে দেখা গেল ফুসকুড়ির মতো দানা। এই সমস্যার নাম হারপিস জোস্টার। সমস্যাটা ত্বকে হলেও এর কারণ একধরনের ভাইরাস সংক্রমণ। ছোটবেলায় চিকেন পক্স বা জলবসন্ত হয়ে সেরে যাওয়ার পর এর ভাইরাস অনেক সময় স্নায়ুর গোড়ায় বা মূলে ঘুমন্ত অবস্থায় রয়ে যেতে পারে। বয়সকালে কোনো কারণে দেহে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কমে গেলে এই জীবাণু আবার জেগে ওঠে এবং আক্রমণ করে। এরই ফলে দেখা দেয় এই রোগ। তবে মনে রাখবেন, এটা কিন্তু জলবসন্ত নয়। চিকেন পক্স-এর ভাইরাস এবং হারপিস জস্টার-এর ভাইরাস এক। অনেক সময় দেখা যায় যাঁদের চিকেন পক্স হয়েছে, তাঁদের হারপিস জস্টারও হয়েছে। কিন্তু চিকেন পক্স হলেই যে হারপিস জস্টার হবে, এই ধারণাটি ভুল। |
কী কী সমস্যা হয় |
• এই অসুখটির একটি সাবধানী সংকেত থাকে। শরীরের এক দিকের কিছুটা জুড়ে জ্বালা করে। তার সঙ্গে থাকে চুলকানি এবং টান ভাব। এটি থাকে এক থেকে তিন দিন পর্যন্ত। • র্যাশ থাকে তিন দিন। ক্রমশ র্যাশগুলি ফোসকায় পরিণত হয়। চার-পাঁচটি ফোসকা এক সঙ্গে হয়। • ফোসকাগুলিতে কখনও জল, কখনও পুঁজ থাকে। • দশ-পনেরো দিনের মধ্যে ফোসকাগুলি চুপসে যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ফোসকাতে প্রচণ্ড ব্যথা থাকে। কিন্তু ফোসকা কমতে আরম্ভ করলে ব্যথাও কমে যায়। বয়স্কদের ক্ষেত্রে ব্যথা কয়েক মাস পর্যন্ত থেকে যায়। • ফোসকার সঙ্গে রোগীর জ্বর, মাথাব্যথা এবং শরীরে ব্যথা থাকতে পারে। |
চিকিৎসা |
• সাধারণত ওষুধ ছাড়াই দু-তিন সপ্তাহের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু অনেক সময় জ্বালা বা চুলকানি বেড়ে যায়, যা কয়েক মাস পর্যন্ত থাকতে পারে। প্রথম দুই তিন দিনের মধ্যে চিকিৎসা করালে ফল পাবেন। • ব্যথা নিরাময়ের ওষুধ, অ্যান্টি ভাইরাল ওষুধ বাহাত্তর ঘণ্টার মধ্যে শুরু করা উচিত। বেশি ব্যথা হলে নার্ভ-এর মধ্যে ইঞ্জেকশন দিতে হয়। • খুব কম ক্ষেত্রে স্টেরয়েড দিতে হয়। • ফোসকা ঠিক হওয়ার পরও অনেক সময় ওই জায়গাটিতে ব্যথা থেকে যায়। তখন অ্যান্টি ডিপ্রেশন ওষুধ শুরু করতে হয়। • অ্যানেসথেটিক ক্রিম এ ক্ষেত্রে উপকারী। • হারপিস ঠিক হয়ে গেলেও অনেক সময় ওই জায়গাটিতে ব্যথা থেকে যায়, অসাড়ও হতে পারে। ফলে খিদে ঘুমের অসুবিধাও দেখা দেয়। তবে যাঁদের বয়স ষাটের বেশি তাঁদের ক্ষেত্রেই এ সমস্যা বেশি দেখা যায়। • এই অসুখে চোখের সমস্যা হলে চোখ খারাপও হয়ে যেতে পারে। যদি নাকের ডগায় কোনও ফোসকা বা ফুসকুড়ি দেখেন, তবে বুঝবেন এর পর সংক্রমণ চোখে হবে। তখনই চিকিৎসা শুরু করে দিতে হবে। • ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ রুখতে অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে। |
টিপস |
• ব্যথা কমাতে হলে র্যাশের ওপর বরফ ঘষতে হবে। ঠান্ডা জলের সেঁকও এ ক্ষেত্রে আরামপ্রদ। • ক্যালামাইন জাতীয় লোশন লাগাতে হবে। • র্যাশ ঢেকে রাখতে হবে গজ, ব্যান্ডেজ দিয়ে। • ঢিলেঢালা সুতির পোশাক পরতে হবে। |
কী ভাবে প্রতিরোধ সম্ভব |
• বয়স ষাটের বেশি হলে হারপিস-এর ভ্যাকসিন নিতে পারেন। ভ্যাকসিন নিলে পঞ্চাশ শতাংশ লোকের এই রোগ হবে না। রোগ হলেও ব্যথা, যন্ত্রণা, অস্বস্তি কম হবে। |
Discussion about this post