হার্টবিট ডেস্ক
ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ, যার সঙ্গে খাদ্যাভাস ও লাইফস্টাইলের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। খাদ্যের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস রোগীকে অনেক নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। অনেক সতর্কতা দরকার হয়। রোজায় লাইফস্টাইলে একটি বড় পরিবর্তন আসে। রোজা রাখলে দীর্ঘ সময় অনাহারে থাকতে হয়। আবার অনেকেই ইফতার ও সেহরিতে এমন খাবার গ্রহণ করেন, যা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ক্ষতিকর। এসব কারণে শারীরিক নানা সমস্যা হতে পারে। এসব সমস্যা এড়াতে কিছু বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন।
ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে রেখে সারা মাস কী উপায়ে সুস্থ দেহে রোজা পালন করা যায় তারই কিছু পরামর্শ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক, হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ শাহজাদা সেলিম।
রমজানে ডায়াবেটিক রোগীদের পরামর্শ দিয়ে গিয়ে ডা. শাহজাদা সেলিম বলেছেন, ডায়াবেটিক রোগীর পক্ষে রোজা রাখা ক্ষতিকর হবে। কেননা ডায়াবেটিস রোগীর বিপর্যস্ত বিপাকীয় তন্ত্রের কারণে দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকলে শারীরিক নানাবিধ সমস্যা হতে পারে। তবে তারপরও যদি কোনো ডায়াবেটিক রোগী রোজা রাখতে চান তাহলে তাকে রোজা রাখার সময় খাদ্য ব্যবস্থাপনায় অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে।
ডা. শাহজাদা সেলিম রমজানে ডায়বেটিক রোগীদের জন্য একগুচ্ছ পরামর্শ দিয়েছেন। তার পরামর্শে তিনি বলেছেন-
– সেহরীর শেষ সময়ের অল্প কিছুক্ষণ আগে সেহরী খেতে হবে।
-ইফতারের সময় অধিক পরিমাণে মিষ্টি ও চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণ করা যাবে না।
– ডায়াবেটিক রোগীদের পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে যেন তারা পানিশূন্যতায় না ভোগেন। খেজুর খেলে একটা খেজুর খেতে পারেন। ফলমূল, শাকসবজি, ডাল ও টক দই খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। ডাবের পানি পান করতে পারেন। পিঁয়াজু, বেগুনি, পুরি, পরোটা কাবাবের মতো খাবার অল্প পরিমাণে খেতে পারেন।
-খাদ্যের ক্যালরি ঠিক রেখে খাওয়ার পরিমাণ এবং ধরন ঠিক করতে হবে। সঠিক সময়ে সঠিক পরিমাণ খাওয়া প্রয়োজন।
-রমজানের আগে যে পরিমাণ ক্যালরিযুক্ত খাবার খেতেন, রমজানে ক্যালরির পরিমাণ ঠিক রেখে খাবার সময় এবং ধরন বদলাতে হবে।
-রোজা রাখা অবস্থা সুগার বেশি কমলে বা বেড়ে গেল সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
এছাড়া রমাজানে ডায়াবেটিক রোগীরা কখন কী খাবেন বা কী খাবেন না তারও একটি পরামর্শ তালিকা দিয়েছেন ডা. শাহজাদা সেলিম। পাঠকের জন্য তা নিচে তুলে ধরা হলো-
ইফতার
ছোলা বা বুট ভূনা- ১/২ কাপ (২৫ গ্রাম কাঁচা বুট)
পিঁয়াজু- ১টা বড় মাপের (২০ গ্রাম ডাল)
বেগুনী- ১টা মাঝারি (১০ গ্রাম বেশন)
মুড়ি – ২ কাপ (২৫ গ্রাম)
কাঁচা আম, আমড়া, সবুজ আপেল, মাল্টা, কমলা ইত্যাদির যে কোনো একটির রস খেতে পারেন। এছাড়া শশা, ক্ষীরা, আমড়া, পেয়ারা, ডাবের পানি, লেবুর পানি, ও অন্যান্য টক ফল ইচ্ছেমত খেতে পারবেন।
সন্ধ্যা রাতের খাবার
আটার রুটি- ৯০ গ্রাম (৩টা ছোট পাতলা) বা অল্প ভাত।
মাছ বা মাংস- ১ টুকরা
ডাল- ২ কাপ
দুধ ১ কাপ
সবজি ইচ্ছেমতো তবে আলু বাদে
সেহরী
ভাত- ৩০০ গ্রাম
মাছ বা মাংস ১ টুকরা
ডাল- ২ কাপ
দুধ ১ কাপ
সবজি ইচ্ছেমতো তবে আলু বাদে
অবশ্যই মনে রাখুন
– ডায়াবেটিক রোগীরা রোজা রাখতে পারবেন। তবে এ বিষয়ে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে হবে।
– রোজার সময় নিজে ডায়াবেটিসের ওষুধ সমন্বয় করবেন না, এতে মারাত্মক পরিণতি হতে পারে।
-রোজার সময় দিনের বেলা অতিরিক্ত ব্যায়াম করা উচিত নয়। এতে হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তে চিনি কমে যাওয়া) হতে পারে।
– রোজার সময় রাতের বেলা পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি, কম মিষ্টি রসালো ফল এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত।
– যাদের দুধ খেলে হজমের সমস্যা হয়, তাদের দুধ না খাওয়াই ভালো।
-প্রতিদিন সকাল ৭টা, বিকাল ৪টা থেকে সাড়ে ৪টা, ইফতারের ঠিক আগে ও ইফতারের ২ ঘণ্টা পর রক্ত পরীক্ষা করে চিনির পরিমাণের চার্ট বানাতে হবে। কোনো অস্বাভাবিকতা বা সুগারের মাত্রাগত জটিলতা দেখা গেলে দ্রুত ডাক্তারের শরনাপন্ন হতে হবে।
Discussion about this post