হার্টবিট ডেস্ক
খাবার খাওয়ার পর পেট ব্যথার একটি সর্বাধিক প্রচলিত কারণ হলো বদহজম। বদহজমের আরো দুটি লক্ষণ হলো পেটফাঁপা ও পেট ভরে গেছে প্রকৃতির অনুভূতি।
তবে বদহজম ছাড়াও অন্তর্নিহিত কিছু স্বাস্থ্য সমস্যার কারণেও খাবার খাওয়ার পর পেট ব্যথা করতে পারে। এ প্রতিবেদনে বদহজম ছাড়াও পেট ব্যথার দশটি কারণ উল্লেখ করা হলো।
* জিইআরডি: গ্যাস্ট্রোইসোফাজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজকে সংক্ষেপে জিইআরডি বলা হয়। এর ফলে অতিরিক্ত খাবার খেলে বা মসলাদার খাবার খেলে খাদ্যনালিতে পাকস্থলির অ্যাসিড চলে আসে, যা বুকে জ্বালাপোড়া ও পেটে খুবই ব্যথাময় অনুভূতি দিতে পারে। জিইআরডিতে ভুগে থাকলে মসলাদার খাবার, ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল সীমিত করতে হবে। তারপরও কাজ না হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
* আইবিএস: ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম হলো (আইবিএস) হলো অন্ত্রের ব্যাধি যা পেটে ব্যথা, গ্যাস, ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগিয়ে থাকে। চিকিৎসকদের মতে, আইবিএসের উপসর্গ ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে, তবে অনেক আইবিএস রোগীই খাবার খাওয়ার পর পেটে ব্যথা অনুভব করেন। খাবার খাওয়ার পর যদি পেট ব্যথা করে এবং সেইসঙ্গে কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া থাকে, তাহলে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে আইবিএস পরীক্ষা করা ভালো।
* সেলিয়াক রোগ: গ্লুটেনযুক্ত খাবারের প্রতি ইমিউন রিয়্যাকশনই হলো সেলিয়াক রোগ। এ রোগ থাকলে গ্লুটেনযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে পেট ব্যথা হতে পারে।
* আলসার: খাবার খাওয়ার পর প্রায়সময় পেট ব্যথা করলে এবং সেইসঙ্গে ওজন হ্রাস, রক্তশূন্যতা, বমি, গিলতে কাঠিন্যতা অথবা মলে রক্তের উপস্থিতি থাকলে এটি আলসারের লক্ষণ হতে পারে। আলসারের উপসর্গে ভুগলে চিকিৎসক দেখানো উচিত।
* গ্যাস্ট্রোপারেসিস: স্লো স্টমাক নামেও পরিচিত গ্যাস্ট্রোপারেসিস হলো পাকস্থলির মাংসপেশির আংশিক প্যারালাইসিস যা যথার্থ হজমে বাধা দিয়ে থাকে। অস্বাভাবিক হজম থেকে পাকস্থলির মাংসপেশিতে অনৈচ্ছিক সংকোচন ঘটে থাকে। একারণে গ্যাস্ট্রোপারেসিস রোগীরা খাবার খাওয়ার পর পেট ব্যথায় ভুগে থাকে। বমিভাব বা বমিও হতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্টমাক ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন থেকে গ্যাস্ট্রোপারেসিস হয়ে থাকে। গ্যাস্ট্রোপারেসিস রোগীদের অল্প পরিমাণে ঘনঘন খাবার খাওয়ার প্রবণতা রয়েছে।
* এসআইবিও: খাবার খাওয়ার পর পেট ব্যথার একটি কারণ হলো, স্মল ইন্টেস্টাইনাল ব্যাকটেরিয়াল ওভারগ্রোথ (এসআইবিও)। এক্ষেত্রে ক্ষুদ্রান্তে অস্বাভাবিক পরিমাণে ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধি ঘটে থাকে। হজমের জন্য প্রয়োজন এমন ব্যাকটেরিয়ার চেয়ে অপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বেড়ে গেলে পেটফাঁপা, ডায়রিয়া ও খাবার খাওয়ার পর পেট ব্যথা করে।
* পিত্তকোষের রোগ: চিকিৎসকদের মতে, চল্লিশোর্ধ্ব নারীদের মধ্যে পিত্তকোষের রোগ বেশি দেখা যায় এবং এই রোগ থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে, যেমন- পেটের ডানপাশে মধ্য থেকে উপরাংশ পর্যন্ত ব্যথা ও পিঠ ব্যথা। এই রোগ থাকলে চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার পর মৃদু থেকে তীব্র পেট ব্যথা করতে পারে। একারণে ভাজা খাবার, পনির, মাখন, সসেজ ও পটেটো চিপস এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, তীব্র পেট ব্যথায় রাতে জেগে ওঠা একটি লক্ষণ হতে পারে যে পিত্তকোষে কিছু একটা সমস্যা হয়েছে। পিত্তকোষের সমস্যা নিজে নিজে সারে না বলে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা করতে হবে।
* ক্রন’স রোগ: এক ধরনের প্রদাহজনিত আন্ত্রিক রোগ হলো ক্রন’স রোগ। এটি পরিপাক নালীর (মুখ থেকে পায়ু) যেকোনো অংশকে প্রভাবিত করতে পারে। ক্রন’স রোগ জনিত প্রদাহ মৃদু থেকে তীব্র উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে, যেমন- বমি, ডায়রিয়া, ক্লান্তি, পেট ব্যথা, পেশি সংকোচন, ক্ষুধা কমে যাওয়া এবং মলের সঙ্গে রক্ত বের হওয়া।
* আলসারেটিভ কোলাইটিস: আরেকটি প্রদাহজনিত আন্ত্রিক রোগ হলো আলসারেটিভ কোলাইটিস। এটি সাধারণত কোলনকে প্রভাবিত করে থাকে। চিকিৎসকদের মতে, আলসারেটিভ কোলাইটিসে কোলন বা রেক্টামে ছোট ক্ষত হয়। এই রোগের উল্লেখযোগ্য উপসর্গ হলো পেটে ব্যথা, রেক্টামে ব্যথা, ডায়রিয়া, রেক্টামে রক্তক্ষরণ, জরুরি বাথরুমে যাওয়ার প্রবণতা, ক্লান্তি ও ওজন কমে যাওয়া। উচ্চ চিনি বা চর্বির খাবার খেলে পেটের ব্যথা বেড়ে যায়। যদি খাবার খাওয়ার পর তীব্র পেট ব্যথা করে অথবা মলে রক্ত দেখেন, তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
* প্যানক্রিয়েটাইটিস: প্যানক্রিয়েটাইটিস হলো অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ। চিকিৎসকদের মতে, এই রোগের ফলে খাবার খাওয়ার পর উপরের পেটে ব্যথা এবং পিঠে ব্যথা হতে পারে। ক্রনিক প্যানক্রিয়েটাইটিসে পিত্ত পাথর ও অগ্ন্যাশয় পাথর হতে পারে।
Discussion about this post