ডা. এম শমশের আলী
একটু কাজ করতে গেলে হাঁপিয়ে উঠছেন, বুক ধড়ফড় করছে, কাজের সময় বুকে চাপ বা ব্যথা অনুভব করছেন, শরীরে পানি জমে হাত-পা-মুখ ফুলে গেছে, শরীর ভারভার লাগে, কাজকর্মে মন বসে না ইত্যাদি হৃদরোগের অন্যতম লক্ষণ।
ক্ষুধা-মন্দা, বদহজম, সবসময় পেটে একটা ভরা ভরা ভাব, বমিবমি ভাব বা বমি হওয়া, বারবার টয়লেটে যাওয়ার প্রবণতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, বদহজম ইত্যাদি পরিপাকতন্ত্রের অসুস্থতার লক্ষণ। মেজাজ খিটমিটে থাকা, খুব সহজে রাগান্বিত হওয়া, সবসময় তন্দ্রাতন্দ্রা ভাব, চিন্তাভাবনায় এলোমেলোভাব দেখা দেওয়া, খুব বেশি ঘুম হওয়া বা অনিদ্রায় ভোগা, মাথা হালকা বোধ হওয়া, মাথা ঘোরানো বা মাথাব্যথা, সব কিছুকে স্নায়ু রোগের লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।শারীরিক দুর্বলতা, শারীরিক অক্ষমতা, কাজকর্মে আগ্রহ কমে যাওয়া, শরীর ব্যথা, শক্তি প্রয়োগের কাজ করতে অপারগতা ইত্যাদি হলো শারীরিক কাঠামোগত অসুস্থতার লক্ষণ। বারবার প্রস্রাবের বেগ হওয়া, বেগ হলে প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারা, প্রস্রাব করার পরও পেটে প্রস্রাব জমা থাকার মতো ভাব হওয়া ইত্যাদি মূত্ররোগের লক্ষণ।
চর্ম রোগের লক্ষণ হিসেবে চামড়া পাতলা হয়ে যাওয়া, খসখসে হয়ে যাওয়া, পশম ঝরে পড়া, চামড়ায় দাগ পড়া, চুলকানি হওয়া হিসেবে বিবেচনা করা হয়। স্ত্রীরোগের লক্ষণ যেমন, ঋতুস্রাবের সমস্যা, পিরিয়ডের সময় অত্যধিক ব্যথা অনুভূত হওয়া, অত্যধিক পরিমাণে রক্তস্রাব হওয়া, বন্ধ্যত্ব দেখা দেওয়া। উল্লিখিত লক্ষণসমূহ যদিও বিভিন্ন শারীরিক সিস্টেমের (তন্ত্রের) সমস্যা কিন্তু একটি মাত্র কারণে কোনো ব্যক্তির শরীরে এগুলো পর্যায়ক্রমে বা এলোমেলোভাবে পরিলক্ষিত হতে পারে এবং তাহলো থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যা। থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যায় আরও অনেক উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যেমন- অত্যধিক গরম বা অত্যধিক ঠান্ডা অনুভূত হওয়া, শারীরিক ওজন কমে যাওয়া বা শারীরিক ওজন বৃদ্ধি পেতে থাকা। থাইরয়েড হরমোন মানবদেহের প্রায় সব বিপাকীয় কর্মকান্ডের গতি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে বলে এর অভাবে বা মাত্রা বৃদ্ধিতে শরীরের প্রায় সব সিস্টেমে অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হতে পারে তবে ব্যক্তিভেদে রোগীর লক্ষণ আলাদা হয়ে থাকে।
থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যার জন্য উচ্চ রক্তচাপ, অনিয়ন্ত্রিত হৃৎস্পন্দন, কার্ডিওমাইওপ্যাথি, হার্ট ফেইলুর, হৃিপন্ডের রক্তনালিতে চর্বিজাতীয় পদার্থ জমা হয়ে ব্লকের সৃষ্টি হওয়া, রক্তে চর্বির বা কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া, ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়া, স্ট্রোকের প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়া, পেটে গ্যাস্ট্রিক, আলসার হওয়া, বন্ধ্যত্ব দেখা দেওয়া, কর্মদক্ষতা কমে যাওয়ার মতো সমস্যা সচরাচর পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে থাইরক্সিন নামক এক ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয়ে থাকে যা রক্তের মাধ্যমে সারা শরীরের প্রতিটি কোষে পৌঁছে কোষের বিপাকীয় কর্মতৎপরতা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
কোনো কারণে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রার বৃদ্ধি ঘটলে শরীরের বিপাকীয় তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়ে অনেক ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়। যদি কোনো কারণে থাইরয়েড গ্রন্থি পর্যাপ্ত পরিমাণে থাইরক্সিন নিঃসরণ করতে না পারে তবে রক্তে থাইরক্সিনের মাত্রার ঘাটতি দেখা দেয় এবং ফলশ্রুতিতে শারীরিক বিপাকীয় কর্মকান্ড দারুণভাবে ব্যাহত হয়। তাই থাইরয়েড সমস্যা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। অনেকে এসব বিষয় নিয়ে অবহেলা করে। যা মোটেও ঠিক নয়। তাই সচেতন হতে হবে।
লেখক: চিফ কনসালটেন্ট, শমশের হার্ট কেয়ার, শ্যামলী, ঢাকা।
Discussion about this post