হার্টবিট ডেস্ক
বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে আশংকাজনক হারে বাড়ছে ডায়াবেটিস। শুধু তাই নয় দেশের সবচেয়ে বেশি ডায়াবেটিস আছে যে তিনটি জেলায় তার মধ্যে অন্যতম চট্টগ্রাম।রোগীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির বিভিন্ন কর্মকাণ্ড থাকলেও তরুণদের মধ্যে ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতা খুবই কম। এ অবস্থায় তরুণ প্রজন্মকে সচেতন করার লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হয় ডায়াবেটিস সামিট।
রোববার (১৩ নভেম্বর) চট্টগ্রাম থিয়েটার ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এ ডায়াবেটিস সামিটের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক ডা. শাহানা আক্তার, সিভাসুর অধ্যাপক ড. জুনায়েদ সিদ্দিকী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জীব বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. তৌহিদ হোসাইন, অধ্যাপক ড. নাজনীন নাহার ইসলাম, অধ্যাপক ড. এস এম রফিকুল ইসলাম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাঈল খান বলেন, ডায়বেটিস নিয়ে যত বেশি সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডে স্কুল, কলেজ শিক্ষার্থীদেরকে যুক্ত করা যাবে তত বেশি ডায়বেটিসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. শাহেনা আক্তার বলেন, ডায়বেটিস সংক্রান্ত যেকোনো কর্মকাণ্ডে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। চট্টগ্রামে ডায়বেটিসের সেবা উন্নততর করবার ক্ষেত্রে তাঁরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এবং ভবিষ্যতের যেকোনো গবেষণায় তাঁরা সম্পৃক্ত থাকার জন্য সদাপ্রস্তুত।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের ডায়াবেটিস ও হরমোন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নেক্সট জেনারেশন সিকুয়েন্সিং অ্যান্ড ইনোভেশন ল্যাবরেটরি (এনরিচ), ডিজিস বায়োলজি অ্যান্ড মলিকুলার এপিডেমিওলজি রিসার্চ গ্রুপ (ডিবিএমই), এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর ওমেন এর জনস্বাস্থ্য বিভাগের যৌথ উদ্যোগে দিনব্যাপি বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করা হয়।
এর আগে সকালে অনুষ্ঠানে ডায়াবেটিস নিয়ে চট্টগ্রামে গত ৪ বছরে পরিচালিত বিভিন্ন গবেষণা কর্মকাণ্ড উপস্থাপন করা হয়। এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন এশিয়ান ওমেন ইউনিভার্সিটির ডিন ড. ডেভিড টেইলর। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আব্দুর রব, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. নাজনীন নাহার ইসলাম এবং অধ্যাপক ড. এস এম. রফিকুল ইসলাম, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষক ডা. মাসুদ রানা এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিটিউক্যালস এর সেলস কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার মজুমদার।
পরে ডায়াবেটিস কেন হয়, ডায়াবেটিস কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় ও ডায়াবেটিসে কি কি লক্ষণ প্রতীয়মান হয় এবং ডায়াবেটিসের জন্য কি কি চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয় তা নিয়ে একটি কর্মশালা পরিচালনা করেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের হরমোন ও ডায়াবেটিস বিভাগের প্রধান ডা. ফারহানা আক্তার। এসময় তিনি চট্টগ্রামে পরিচালিত ডায়াবেটিস নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা নিবন্ধ ও সাম্প্রতিক তথ্য তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আদনান মান্নান ডায়াবেটিসের জিনগত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, প্রতি দুজনের একজন ডায়াবেটিস রোগীর মধ্যে জিনগত পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, ফলে তাদের মধ্যে ইনসুলিন এবং মেটফরমিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ডায়াবেটিসের ওষুধ কাজ করছে না। চট্টগ্রামে ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের রোগী লক্ষনীয় হারে বাড়ছে। এই জিনগত পরিবর্তনকে ডায়াবেটিসের অগ্রিম পরীক্ষা হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
অনুষ্ঠানের ৩৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৩৭৭জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। আয়োজনের পৃষ্ঠপোষকতায় ছিলো বেক্সিমকো ফার্মা এবং শিওরসেল চট্টগ্রাম। এছাড়াও পার্টনার হিসেবে ছিলো চিটাগাং ইউনিভার্সিটি রিসার্চ অ্যান্ড হায়ার স্ট্যাডি সোসাইটি, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন পাব্লিক হেলথ ক্লাব, হোয়াইট বর্ড সায়েন্স ক্লাব, এবং ইউএসটিসি বিবিটেক সায়েন্স ক্লাব। আয়োজনের ম্যাগাজিন পার্টনার হিসেবে ছিলো ‘বিজ্ঞানচিন্তা’।
Discussion about this post