হার্টবিট ডেস্ক
আইসিডিডিআর,বির মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগী বিজ্ঞানী আহমেদ এহসানুর রহমান বলেছেন, বিশ্বে প্রতি বছর সাত কোটি ৩০ লাখ মানুষ মারাত্মক অক্সিজেন ঘাটতিতে ভোগেন। যার মধ্যে শিশুই তিন কোটি ২০ লাখ।
আজ বুধবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে মহাখালীর আইসিডিডিআর, বি-তে (আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ) বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস উপলক্ষে ‘মেডিকেল অক্সিজেন নিরাপত্তা’ বিষয়ে সূক্ষ্ম আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানান তিনি।
এ সময় আহমেদ এহসানুর রহমান বলেন, বিভিন্ন ধরনের শারীরিক পরিস্থিতিতে হাইপক্সেমিয়া ঘটতে পারে-শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত নবজাতক থেকে শুরু করে নিউমোনিয়া, ম্যালেরিয়া, সেপসিস এবং যক্ষ্মা আক্রান্ত শিশু, প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি), হৃদরোগ ও হাঁপানিসহ আরও অনেক। এমনকি এনেস্থেশিয়াসহ প্রায় সব ধরনের বড় অস্ত্রোপচারকালে অজ্ঞান করবার সময়ও মেডিকেল অক্সিজেন অপরিহার্য।
তিনি বলেন, সারা বিশ্বে প্রতি বছর সাত কোটি ৩০ লাখ মানুষ মারাত্মক অক্সিজেন ঘাটতিতে ভোগেন। যার মধ্যে শিশুই তিন কোটি ২০ লাখ। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের অবকাঠামো অনুযায়ী, মাধ্যমিক স্তরের স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রে নিউমোনিয়া নিয়ে আসা শিশুর প্রায় ৪২ শতাংশই সংকটে ভোগেন।
এহসানুর রহমান বলেন, হাইপক্সেমিয়ায় আক্রান্ত যে কোনও রোগীর জন্য চিকিৎসা হিসেবে অক্সিজেন থেরাপি প্রয়োজন। বিভিন্ন ধরনের শারীরিক পরিস্থিতিতে হাইপক্সেমিয়া ঘটতে পারে-শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত নবজাতক থেকে শুরু করে নিউমোনিয়া, ম্যালেরিয়া, সেপসিস এবং যক্ষ্মা আক্রান্ত শিশু, প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি), হৃদরোগ ও হাঁপানিসহ আরও অনেক। এমনকি এনেস্থেশিয়াসহ প্রায় সব ধরনের বড় অস্ত্রোপচারকালে অজ্ঞান করবার সময়ও মেডিকেল অক্সিজেন অপরিহার্য।
তিনি আরও বলেন, গ্রামাঞ্চলের তুলনায় ঢাকা শহরে নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর বেশি হওয়ার কারণও হাইপক্সেমিয়া। এ জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে অক্সিজেন ব্যবস্থাপনায় জোর দেওয়ার পাশাপাশি শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানো ও পুষ্টির দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। একই সঙ্গে মেডিকেল অক্সিজেন নিরাপত্তাসহ দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে স্বল্প মূল্যে অক্সিজেন উদ্ভাবনের ওপরও জোর দেওয়া জরুরি।
এই বিজ্ঞানী বলেন, যখন করোনা মহামারি বিশ্বে আঘাত হানে, তখন হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের বড় একটি অংশের অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়ে। সে সময় সারা বিশ্বেরই সকল আকার ও আকৃতির স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রসমূহ, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশগুলো অক্সিজেনের আকাশচুম্বী চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছিল। যদিও সংকটাপন্ন ভারত অক্সিজেন একেবারে বন্ধ করে দেয়নি। এ সময় অক্সিজেন নিয়ে মারাত্মক অব্যবস্থাপনা আমরা দেখেছি। উচ্চবিত্তরা অপ্রয়োজনে অক্সিজেন রেখে দিত, অন্যদিকে দরিদ্ররা পেত না।
বাংলাদেশ হেলথ ফ্যাসিলিটি সার্ভে ২০১৭ এর তথ্য তুলে ধরে আইসিডিডিআর, বির নিউট্রিশন অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল সার্ভিস বিভাগের সিনিয়র বিজ্ঞানী ডা. মোহাম্মাদ জোবায়ের চিশতি বলেন, বাংলাদেশে এক-চতুর্থাংশেরও কম স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে তিনটি অক্সিজেন উৎসের যে কোনো একটি রয়েছে। যার মধ্যে ১৩ ভাগে কনসেনট্রেটর, মাত্র ২১ ভাগের ফ্লো মিটারসহ অক্সিজেন ভর্তি সিলিন্ডার পাওয়া গিয়েছিল। এছাড়া মাত্র ৬ ভাগের অক্সিজেন সরবরাহ বা বিতরণের ব্যবস্থা এবং পালস অক্সিমিটার ছিল। ২০২০ সালের এপ্রিল-মে মাসে পরিচালিত আইসিডিডিআর, বি’র নেতৃত্বাধীন আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের ৬০টি জেলা হাসপাতালের মধ্যে ৭২ ভাগে হাসপাতালে পালস অক্সিমেট্রি যন্ত্রটি রয়েছে এবং মাত্র ৭ ভাগের আর্টারিয়াল ব্লাড গ্যাস অ্যানালাইসিস (রক্তে অক্সিজেন, কার্বন-ডাই অক্সাইড এর পরিমাণ, অক্সিজেনের ঘনত্ব, অ্যাসিড-ক্ষারের ব্যালান্স ইত্যাদি পরিমাপ করার পরীক্ষা) করার ব্যবস্থা রয়েছে।
মোহাম্মাদ জোবায়ের চিশতি বলেন, করোনার সময় বেশ কিছু বিক্ষিপ্ত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তবে সামগ্রিক পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে, পালস অক্সিমিটার এবং বাবল সি-প্যাপ-এর মতো স্বল্প মূল্যের উদ্ভাবনমূলক হস্তক্ষেপসমূহকে গ্রহণ করার মাধ্যমে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে।
অনুষ্ঠানে আইসিডিডিআর,বির ২০২৪ সালে প্রকাশিত হতে যাওয়া মেডিকেল অক্সিজেন সিকিউরিটি সংক্রান্ত ল্যানসেট গ্লোবাল হেলথ কমিশনের ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশ এই কমিশনের সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে।
এতে উপস্থিত ছিলেন মনিটরিং, ইভালুয়েশন অ্যান্ড লিনিং অ্যাডভাইজারেন সিনিয়র গবেষক ড. কান্তা জামিল, ইউএসআইডির ড. ফিদা মেহরান, আইসিডিডিআরবির সিনিয়র ডিরেক্টর ডা. শামস এল আরেফিন ও কান্ট্রি লিড অফ ডাটা ফর ইমপ্যাক্টের সুস্মিতা খানসহ প্রমুখ ।
Discussion about this post