হার্টবিট ডেস্ক
বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর তৃতীয় কারণ স্ট্রোক। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এর লক্ষণ বুঝতে না পারার কারণে রোগীকে হাসপাতালে নিতে দেরি করেন। অথচ স্ট্রোকের রোগীর জন্য প্রথম চার ঘণ্টা গোল্ডেন আওয়ার বা অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বুধবার (২৬ অক্টোবর) দেশে স্ট্রোকের কারণ ও প্রতিকার নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের আতা এলাহি খান সেমিনার কক্ষে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে নিউরো সার্জারি বিশেষজ্ঞরা এসব তথ্য জানান।
তারা আরও জানান, সঠিক সময়ে হাসপাতালে নিতে পারলে, শুধুমাত্র ওষুধ দিয়েই রোগী একদিন পরেই সুস্থ শরীরে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরতে পারে। কিন্তু দেশে অধিকাংশ সময় চিকিৎসকের কাছে আনতে দেরি হয় বলেই ক্ষতি বেশি হয়।
আগামী ৩১ অক্টোবর বিশ্ব স্ট্রোক দিবস- ২০২২ উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ঢাকা মেডিকেল কলেজের নিউরো সার্জারি বিভাগ। এবারে দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘না না করলে সময় ক্ষেপন, স্ট্রোক হলেও বাচঁবে জীবন।’
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, স্ট্রোক হলো মস্তিস্কে হঠাৎ রক্ত সরবরাহে বাধা সৃষ্ট হওয়া। আর স্ট্রোকের প্রধান কারণ অনিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপন। যে কারণে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বেই তরুণদের মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ছে।
এছাড়া অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ ৫০ ভাগ স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। পাশাপাশি অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, ধূমপান, নিয়মিত মদ্যপান, কায়িক পরিশ্রম না করা, ফাস্টফুড বা জাঙ্ক ফুড গ্রহণও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, মানুষের অনিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপনে বাড়ছে স্ট্রোকের ঝুঁকি। স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগী চেনার উপায় মুখ বেকে যাওয়া, হাত একদিকে ঝুঁলে যাবে বা শক্তি কম পাবে, চোখে ঝাঁপসা দেখা এবং রোগীর কথা জড়িয়ে যাবে। তীব্র মাথাব্যথা এবং রোগী হঠাৎ ভারসাম্য হারিয়ে ফেলতে পারে।
বাংলাদেশ সোসাইটি অব নিউরো সার্জন্সের সহযোগিতায় অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, দেশে বেশি মানুষ মারা যায় সড়ক দুর্ঘটনায়। এরপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় মৃত্যুর কারণ হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক। দেশে স্ট্রোকে মৃত্যুর হার চারগুণ বেড়েছে। তবে উচ্চ রক্তচাপ স্ট্রোকের সবচেয়ে বড় ঝুঁকির কারণ।
আরও জানানো হয়, দেশে প্রতি হাজারে ১২ জন মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত এবং অসংক্রামক এ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে প্রতি মিনিটে দশজন প্রাণ হারাচ্ছেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. অসীত চন্দ্র সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ সোসাইটি অব নিউরো সার্জন্সের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মাদ হোসাইন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে স্ট্রোকের আধুনিক চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করেন নিউরো সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. শফিকুল ইসলাম, ঢামেকে স্ট্রোক চিকিৎসা ব্যবস্থা ও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন অধ্যাপক ডা. অসীত চন্দ্র সরকার। গত এক বছরের আধুনিক নিউরো সার্জারি চিকিৎসায় ঢামেকের অবদান তুলে ধরেন সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. মোতাশিমুল হাসান শিপলু।
এছাড়া স্ট্রোকে বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন সহকারী অধ্যাপক ডা. সুমন রানা, স্ট্রোকের ঝুঁকি ও প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করেন, ডা. ফজলে এলাহী মিলাদ। স্ট্রোকের ভুল চিকিৎসা বা স্ট্রোক মিথ নিয়ে কথা বলেন, সহকারী অধ্যাপক ডা. রবিউল করিম এবং বিশ্ব স্ট্রোক দিবসের প্রতিপাদ্য ও সচেতনতা নিয়ে আলোচনা করেন, সহযোগী অধ্যাপক ডা. রফিকুল ইসলাম।
স্বাগত বক্তব্য দেন নিউরো সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. পীযুষ কান্তি মিত্র। সূচনা বক্তব্য দেন সহকারী অধ্যাপক ডা. উজ্জল কুমার সাধু খাঁ। স্ট্রোক নিয়ে লার্নিং সেশন পরিচালনা করেন হাসপাতালের এনেসথেসিওলজি অ্যান্ড পেলিয়েটিভ বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. মোজাফফর হোসাইন। তার সঙ্গে ছিলেন, নিউরো সার্জারির সহাকারী অধ্যাপক ডা. কানিজ ফাতেমা ইশরাত জাহান, রেজিস্ট্রার ডা. সাইফুল হক ও ডা. ইসমে আজম জিকো।
Discussion about this post