হার্টবিট ডেস্ক
দেশে প্রথমবারের মতো দুরারোগ্য স্নায়ুরোগ স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হলো জিন থেরাপি। এই জন্মগত রোগের চিকিৎসায় বাংলাদেশে প্রথম কোনো শিশুকে জিন থেরাপি প্রয়োগের মাধ্যমে চিকিৎসা বিজ্ঞানের নতুন মাইলফলক স্পর্শ করলো ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল। সংশ্লিষ্টরা এটিকে চিকিৎসা সেবায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন বললেও খরচ নিয়ে শঙ্কার কথা বলেছেন তারা।
মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে ‘শিশুদের বিরল স্নায়ু রোগের চিকিৎসায় জিন থেরাপি’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বক্তারা আরও বলেন, স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি একটি বিরল ও জটিল স্নায়ুতন্ত্রের জন্মগত রোগ, যা জিনগত ত্রুটির কারণে হয়ে থাকে। এ রোগে আক্রান্ত শিশুদের মাংসপেশি ক্রমাগত দুর্বল হতে থাকে। যার ফলে এ সব শিশুরা বসতে বা দাঁড়াতে পারে না। তবে তাদের বুদ্ধিমত্তা ঠিক থাকে। পরবর্তী সময়ে শ্বাসতন্ত্রের জটিলতার কারণে আক্রান্ত শিশুরা মৃত্যুবরণ করে।
তারা বলেন, চিকিৎসায় ব্যবহৃত একটি ইনজেকশনের দাম পড়ে বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২২ কোটি টাকা। অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় বিনা চিকিৎসায় আমাদের দেশে প্রতি বছর মারা যাচ্ছে অনেক শিশু। সম্প্রতি নোভার্টিস লিমিটেডের সহায়তায় একটি গ্লোবাল প্রজেক্টের অধীন মূল্যবান ওষুধটি ভুক্তভোগী এক শিশুকে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আমাদের সহায়তা করেছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। এসময় তিনি বলেন, দেশে প্রথমবারের মতো জিন থেরাপি চিকিৎসা হয়েছে, এটি আমাদের জন্য বড় একটি আশার দিক। কিন্তু এর যে ব্যয়, সেটি আসলে রোগীদের জন্য বহন করা খুবই কঠিন।
সচিব বলেন, আমরা আশা করছি একটা পর্যায়ে ওষুধটির দাম কমে যাবে। হাতের নাগালে চলে আসবে। তখন আমরা এই চিকিৎসা আমাদের দেশে নিয়মিত করতে পারবো।
আনোয়ার হোসেন বলেন, আগে এই রোগটির চিকিৎসা না থাকার কারণে প্রতি বছর বিশ্বে অসংখ্য শিশু মারা যায়। এ রোগে সাধারণত শিশুদের স্পাইনাল কর্ডের স্নায়ুকোষ নষ্ট হয়ে যায়। যেসব স্নায়ুকোষ মাংসপেশি নিয়ন্ত্রণ করে, সেই স্নায়ুকোষগুলো নষ্ট হওয়ার কারণে মাংসপেশি দুর্বল হতে থাকে। বাংলাদেশে অধিকাংশ মানুষ এ রোগ সম্পর্কে অবগত নয়। এই রোগে নবজাতকরা প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ক্রমান্বয়ে তারা কনজেনিটাল হার্ট ডিজিস এ ভোগে।
হাসপাতালের পরিবেশ সম্পর্কে সচিব আরও বলেন, নিউরোসায়েন্সে প্রচুর সংখ্যক রোগী থাকে। এরপরও এখানকার প্রশাসন দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করছেন।
এসময় হাসপাতালটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের ১০ বছরের ইতিহাসে একটা ঐতিহাসিক দ্বার উন্মোচন হয়েছে। একটা বাচ্চাকে নিশ্চিত মৃত্যু থেকে আমরা বাঁচার সুযোগ করে দিয়েছি। সে এখন নিশ্চিতভাবে আকাশ দেখতে পারবে, নিশ্বাস নিতে পারবে। অধ্যাপক ডা. নারায়ণ তার টিম নিয়ে সেটি করেছেন। এজন্য আমরা আনন্দিত এবং গর্বিত।
তিনি বলেন, আমরা অধিকাংশ রোগীকেই ভালো করতে পারি না। শতকরা ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ রোগী ভালো হয়। এক্ষেত্রে কিছু বিরল রোগ আছে, যেগুলোর মৃত্যু অবধারিত। সেগুলো নিয়ে আমাদের কিছুই করার থাকে না।
দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, বর্তমান সময়ে আমাদের ৪০ থেকে ৪২ ভাগ রোগীই শিশু। এই শিশুদের জন্য স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের আলাদা একটা এটেনশন (মনযোগ) দরকার। এজন্য আমি স্বাস্থ্য সচিব মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। কারণ, আমাদের পর্যাপ্ত সক্ষমতা না থাকায় অসংখ্য রোগীকেই বেসরকারি পর্যায়ে চিকিৎসার দারস্থ হতে হয়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তবে আমাদের হাসপাতালে আইসিইউ সেবা সম্পূর্ণ ফ্রি। কিন্তু একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ বেডে রাত পার হলেই ৫০ হাজার টাকা। এর বাইরে তো বিভিন্ন পরীক্ষা-ফি তো আছেই। কয়টা পরিবারের এতো খরচ বহনের সুযোগ আছে? এক্ষেত্রে সরকারি সেক্টরকে আরও উন্নত করতে হবে। সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও সুন্দরভাবে সাজান, যেকোন ধরনের পরামর্শ, সহযোগিতা আমরা করবো।
Discussion about this post