হার্টবিট ডেস্ক
অটিজমসহ সকল এনডিডি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুর চিকিৎসায় সমন্বিতভাবে সব পেশাজীবীদের সেবা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বক্তারা বলেন, মানুষ আগে অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের ঘর থেকে বের করতে না, এখন ঘর থেকে বের করছে। ওই সব শিশুদের মা-বাবাও বুঝতে পেরেছেন এদের চিকিৎসা করে নিরাময় করা সম্ভব। এদের শিক্ষার জন্য গ্রামে ও শহরে বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও হয়েছে। অভিভাবকদের মধ্যেও সচেতনতা বেড়েছে।
রোববার (২৩ অক্টোবর) রাজধানীর একটি রেস্টুরেন্টে অটিজমসহ সব এনডিডি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুর ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট সব পেশাজীবীদের ও তাদের অভিভাবকদের নিয়ে আয়োজিত এক গোল টেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ থেরাপি অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন ফাউন্ডেশন (বিটিআরএফ) এই গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এনডিডি সুরক্ষা ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও যুগ্ম-সচিব মো. শাহ আলম। তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী ও প্রতিবন্ধীতার ঝুঁকিতে রয়েছে এমন শিশু ও ব্যক্তির জন্য সবাই মিলে কাজ করতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তিসহ সব প্রতিবন্ধী ব্যক্তির মানসিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধ জীবন গঠনের পথকে আরও প্রসারিত করবে।
চিকিৎসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোন ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা ছাড়া এনডিডি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু ও ব্যক্তিদের শিক্ষা ও চিকিৎসা চলতে পারে না। তবে, সম্প্রতি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোনো ধরনের কাঠামো ছাড়াই যত্রতত্র মানহীন থেরাপিস্ট হওয়ার সনদ প্রদান করছে। কিছু ইনস্টিটিউট বিভিন্ন মেয়াদে বিভিন্ন শিক্ষা এবং পেশার ব্যক্তিকে সনদ দিয়ে ভুয়া থেরাপিস্ট হিসেবে প্র্যাকটিসের সুযোগ করছে, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ব্যাপারে সরকার খুব কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
মো. শাহ আলম বলেন, অটিজম ও এনডিডি শিশু ও ব্যক্তিদের জীবনব্যাপী সেবার প্রয়োজন হয়। মাত্রাভেদে অনেকেই অন্যের সাহায্য ছাড়া জীবন অতিবাহিত করতে পারে না বিধায় সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে যথাযথ পুনর্বাসন ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। বিটিআরএফ’র মতো প্রতিষ্ঠানগুলো যদি তাদের যৌক্তিক উপস্থাপনার মাধ্যমে শিক্ষা ও সেবা কার্যক্রম তুলে ধরে, তবে সরকার অবশ্যই তা বিশেষ বিবেচনায় রাখবে। সরকার শুধু নিয়ন্ত্রক নয়, বরং সহযোগী হয়ে রাষ্ট্রের বিশাল সংখ্যক প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য কাজ করে যেতে চায়।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিটিআরএফ’র নির্বাহী পরিচালক ফিদা আল–শামস বলেন, বর্তমান সরকার যেভাবে বিভিন্ন আইন ও নীতিমালার প্রয়োগের মাধ্যমে একটি কাঠামোর ভেতর এনে এ সেবাগুলোকে ছড়িয়ে দিতে চাইছে, বিটিআরএফ সরকারকে এ বিষয়গুলোতে সহযোগিতা করতে চায়। বিশেষ স্কুলের মনিটরিং সেলে বিটিআরএফের যোগ্য প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা, বিটিআরএফের এনডিডি স্কুলের ইআইপি কার্যক্রমের অনুরূপ আদর্শ কার্যক্রমকে একটি মডেল সেবা হিসেবে উপস্থাপন এবং তা অন্যান্য সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল ও বিশেষ শিক্ষাকেন্দ্রে ছড়িয়ে দিতে হবে। এ ব্যাপারে আমরা সরকারের সহযোগিতা আশা করছি।
তিনি আরও বলেন, একজন এনডিডি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু আজীবন বিশেষ স্কুলেই যাবেন তা হতে পারে না। এক্ষেত্রে সেই শিশুটির প্রতিবন্ধীতার মাত্রা ও দক্ষতা অনুযায়ী স্কুল নির্বাচন জরুরি। সমন্বিতভাবে পেশাজীবীদের অ্যাসেসমেন্ট ছাড়া ও চিকিৎসা প্রদান ছাড়া এটা সম্ভব নয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সেবাগ্রহীতারা সমন্বিতভাবে থেরাপি চিকিৎসাপ্রাপ্তির সুফল তুলে ধরেন স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি বিশেষজ্ঞ হিমিকা আরজুমান। সূচনা বক্তব্যে তিনি বলেন, বিটিআরএফ ২০১৭ সাল থেকেই অটিজমসহ অন্যান্য এনডিডি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুদের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিবন্ধীতার শিশুর চিকিৎসা এবং পুনর্বাসনসেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে সংস্থাটির ‘স্বনির্ভর’ নামে একটি এনডিডি বিদ্যালয়, সমন্বিত পুনর্বাসনসেবা নিশ্চিত করতে একটি আধুনিক উপকরণ সমৃদ্ধ থেরাপি ইউনিট এবং বিশেষ শিক্ষক ও অভিভাবকদের জন্য একটি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিটিআরএফ’র উদ্দেশ হলো প্রতিবন্ধীতার ঝুঁকি নিরসনে কাজ করার পাশাপাশি প্রতিবন্ধী শিশু ও ব্যক্তির দক্ষতা বৃদ্ধিপূর্বক তাদের সমাজের মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসা।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এভারকেয়ার হাসপাতালের শিশু বিকাশ কেন্দ্রে প্রধান ফারজানা ইসলাম, সিনিয়র সাইকোলজিস্ট তারানা আনিস, ফায়াজা আহমেদ। আইসিডিডিআরবি’র পুষ্টিবিদ জেরিন তাসনিম, অকুপেশনাল থেরাপি বিশেষজ্ঞ তৌফিক, বিটিআরএফ’র অকুপেশনাল থেরাপি বিশেষজ্ঞ সুমন সরকার, স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপিস্ট সাঈদুজ্জামান ও ফিজিওথেরাপিস্ট মনিরুজ্জামান অলিভ প্রমুখ।
Discussion about this post