উম্মে সালমা তামান্না
ট্রাইগ্লিসারাইড বা টিজি মূলত একধরনের ফ্যাট। স্থূলতা, ডায়াবেটিস, বেশি শর্করা খাওয়া এবং কম কায়িক শ্রমের কারণে ট্রাইগ্লিসারাইড বেড়ে যেতে পারে। বিপরীতে কমে যায় গুড কোলেস্টেরল বা এইচডিএল। রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেড়ে গেলে প্যানক্রিয়াটাইটিস, ফ্যাটি লিভার ইত্যাদি হতে পারে। তবে কিছু সচেতনতা আর খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনে খুব সহজেই ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ বা কমানো যায়। এ ক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনাই সবচেয়ে জরুরি।
মনে রাখতে হবে, ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে—
• প্রক্রিয়াজাত মাংস, ট্রান্স ফ্যাট খাওয়া বর্জন করতে হবে।
• আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে।
• রিফাইন্ড কার্বস খাওয়া যাবে না।
• খাবারে স্যাচুরেটেড ফ্যাট ৭ শতাংশের কম হতে হবে।
• মদ্যপান বর্জন করতে হবে।
ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমাতে যা খাবেন
ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমানোর সবচেয়ে উপযোগী ডায়েট হলো মেডিটেরানিয়ান ডায়েট বা ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যাভ্যাস।
• এই ডায়েটে মূল খাবার হিসেবে শাকসবজি, ফল বেশি প্রাধান্য পায়। রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমাতে খাদ্যতালিকায় প্রতিদিন প্রচুর সবুজ ও রঙিন শাকসবজি এবং তাজা মৌসুমি ফলমূল রাখতে হবে।
• কার্বোহাইড্রেট হিসেবে পূর্ণ শস্যজাতীয় খাবার যেমন লাল চাল, গমের আটা, ভুট্টা, ওটস বা এ ধরনের খাবারকে প্রাধান্য দিতে হবে। মেডিটেরানিয়ান ডায়েটে কার্বোহাইড্রেট খাওয়া নিষেধ নয়, তবে তা অল্প পরিমাণে খেতে হয়। দিনে ৩৫ গ্রামের বেশি কার্বোহাইড্রেট না খাওয়াই উত্তম। আর শর্করাজাতীয় খাবার সেগুলোই বেছে নিতে হবে, যেগুলোয় আঁশ বা ফাইবার বেশি থাকে।
• প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে মাছ বা মুরগির মাংস সপ্তাহে ২-৩ দিন খেতে হবে। এ ক্ষেত্রে মাছকে প্রাধান্য দেওয়াই উত্তম। সামুদ্রিক মাছ খুবই উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩, ইপিএ, ডিএইচএ থাকে। প্রতিদিন ৪ গ্রাম ইপিএ/ডিএইচএ খেলে তা ২৫ শতাংশ পর্যন্ত রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে সাহায্য করে। রেডমিট (গরু, ছাগল বা এই জাতীয় প্রাণীর মাংস) মাসে এক বা দুদিনের বেশি খাওয়া যাবে না।
• খাদ্যতালিকায় প্রতিদিন বাদাম রাখতে হবে। বাদামে প্রচুর ওমেগা-৩ এবং মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া সূর্যমুখী, কুমড়া ও তিলের বীজ খাওয়াও খুব উপকারী।
• ভোজ্যতেল হিসেবে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল, বাদামের তেল বা খাঁটি সরিষার তেলকে প্রাধান্য দিতে হবে।
• রান্নায় মসলা হিসেবে পেঁয়াজ, আদা, রসুন, এলাচি, লবঙ্গ, দারুচিনি, পুদিনাপাতা ব্যবহার করতে হবে।
• দুধ, দই, পনির প্রতিদিন ১ থেকে ৩ সার্ভিংস পর্যন্ত খাওয়া যাবে।
• সপ্তাহে ৪টা ডিমের কুসুম খাওয়া যাবে। ডিমের সাদা অংশ খেতে বাধা নেই।
• মেডিটেরানিয়ান ডায়েটের সঙ্গে দরকার নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।
লেখক: পুষ্টি বিশেষজ্ঞ, ইবনে সিনা কনসালটেশন সেন্টার, বাড্ডা
Discussion about this post