ডা. মুশফিক নেওয়াজ আহমেদ,এমডি
রেসিডেন্ট, পালমোনোলজি
জাতীয় বক্ষব্যাধি ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা
কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার অসম্ভব ভাবে বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে ভর্তির ক্ষেত্রে তৈরি হয়েছে সীমাবদ্ধতা। এ কারণে অপ্রয়োজনীয় ভর্তি পরিহার করে বাসায় চিকিৎসা নেওয়া এবং বাসায় চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় শারীরিক অবস্থার অবনতির পূর্বানুমান করতে পারার কোনো বিকল্প নেই।
রক্তে অক্সিজেনের ঘনমাত্রা যাকে এখন বলা হচ্ছে ‘ফিফথ ভাইটাল সাইন’ তার পরিমাপক মাধ্যম হিসেবে পালস অক্সিমিটার এর ব্যবহার আমরা সবাই জানি। কিছু ছোটখাট ব্যাপার মাথায় রাখলে এই কঠিন পরিস্থিতিতে আমরা এর সর্বোচ্চ প্রায়োগিক দিক বের করে আনতে পারবো।
কখন করতে হয়
কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে বাসায় আইসোলেশন এ থাকা যেকোনো সিম্পটমেটিক ব্যক্তি, যদি শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন ঠিক তখন অথবা শ্বাসকষ্ট অনুভূত না হলেও নির্দিষ্ট সময় পরপর অক্সিজেনের ঘনমাত্রা দেখতে পারেন।
দেখার ফ্রিকোয়েন্সির ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কিছু না থাকলেও দুটি রিকমেন্ডেশন বলছে দিনে অন্তত দুই অথবা তিনবার দেখতে পারেন। অযাচিত উৎকন্ঠার ভয় থাকলে এর চেয়েও বেশিবার দেখাতে বাঁধা নেই। যেহেতু কোভিড-১৯ এ লক্ষণ ছাড়াও রক্তে অক্সিজেনের ঘনমাত্রা হঠাৎ কমে যেতে পারে যাকে বলা হচ্ছে হ্যাপি হাইপোক্সিয়া বা সাইলেন্ট হাইপোক্সিয়া।
কিভাবে করা উচিত
১. ব্যবহারের আগে হাত একটু ঘষে উষ্ণ করে নিতে হবে।
২. রুমে আলোর পরিমান যথাসম্ভব কমিয়ে নিতে হবে।
৩. যেকোনো হাতের ইন্ডেক্স অথবা মিডল ফিংগার কে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
৪. আংগুল এমনভাবে প্রবেশ করানো যেনো আংগুলের অগ্রভাগ ডিভাইসের শেষ প্রান্তে স্পর্শ করে।
৫. নেইল পলিশ (লাল ব্যতীত অন্য যেকোনো) থাকলে সে আংগুল পরিহার করা,সবগুলো আংগুলেই যদি নেইল পলিশ থাকে সেক্ষেত্রে জরূরী মুহূর্তে ডিভাইসটি আংগুলে উপর-নিচ স্থাপন না করে পাশাপাশি স্থাপন করা।
৬. যে হাতের আংগুল এ ডিভাইসটি ব্যবহৃত হচ্ছে তা যেনো স্থির থাকে, তাই সমতলে হাতটি রেখে তারপর ডিভাইসটি সংযুক্ত করা।
৭. প্রথম রিডিং দেখেই সিদ্ধান্তে না পৌছে অন্তত ৩০-৬০ সেকেন্ড পর যে রিডিং পাওয়া যাবে তাকে আমলে নেওয়া।
৮. সর্বোপরি একটি ভালো মানের পালস অক্সিমিটার ব্যবহার করা এবং ব্যাটারি হেলথ এর ব্যাপারটা মাথায় রাখা।
ইন্টারপ্রিটেশন কি হবে
ফুসফুসের কোনো রোগ না থাকা ব্যক্তির অক্সিজেনের ঘনমাত্রা শতকরা ৯৪ ভাগ এর নিচে এবং দীর্ঘমেয়াদি ফুসফুসের রোগে ভোগা ব্যক্তির ক্ষেত্রে যদি তা শতকরা ৮৮ ভাগের নিচে নেমে যায় সেক্ষেত্রে অক্সিজেনের প্রয়োজন হতে পারে।
পরিশ্রমজনিত হাইপোক্সেমিয়ার কোনো ভূমিকা আছে কিনা
কিছু রিকমেন্ডেশন বলছে আরলি প্র্যাডিক্টর হিসেবে এক্সারসাইজ ইনডিউসড হাইপোক্সিয়ার ভূমিকা আছে। দুইটি উপায় এখানে বলা হচ্ছে – একটি ওয়ান মিনিট সিট টু স্ট্যান্ড টেস্ট (এসটিএসটি), অপরটি ৪০ স্টেপ ওয়াক টেস্ট। এখানে অধিক গ্রহণযোগ্য হচ্ছে এসটিএসটি।
প্রথমে স্থির অবস্থায় রক্তের ঘনমাত্রার বেইসলাইন দেখে নিতে হবে। এর পর একটি চেয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে দুই হাত কোমড়ে রেখে এবং শিরদাঁড়া সোজা রেখে যতটা দ্রুত সম্ভব চেয়ারে বসা এবং উঠা করতে হবে। এক মিনিট শেষে পুনরায় বেইসলাইন দেখে নিতে হবে। এক মিনিট পর যদি রক্তের ঘনমাত্রা বেইসলাইনের থেকে শতকরা তিন ভাগের বেশি কমে আসে তাহলে বুঝতে হবে তার অক্সিজেনের প্রয়োজন হতে পারে।
যদিও কোনো কোনো পরামর্শ অনুযায়ী এই পরীক্ষাটি হাসপাতাল সেটআপে করা এবং বেইসলাইন শতকরা ৯৬ ভাগের কম থাকলে না করা। কিন্তু বাস্তবতা সাপেক্ষে ও জটিলতা তথা মৃত্যুহার এড়াতে বাসায় এ পরীক্ষাটি করার কথা বিবেচনা করা যেতে পারে
Discussion about this post