হার্টবিট ডেস্ক
প্রত্যেকটি গর্ভবতী মহিলা চান সুস্থ-সবল সন্তানের জন্ম দিতে। গর্ভজাত সন্তান যাতে ভালো থাকে তাই গর্ভাবস্থায় মহিলারা সবকিছুতেই বাড়তি যত্ন নিয়ে থাকেন । বিশেষ করে খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে। কিন্তু অনেকেই জানেন না যে, শিশুর পুষ্টির জন্য কোন খাবার খাওয়া দরকার ও কোন খাবার গর্ভবতী মায়ের শরীরে পুষ্টির চাহিদা মেটাবে।
এইসময় গর্ভবতী মহিলার বিশেষ যত্নআত্তি করা হয় যাতে গর্ভস্থ শিশুর কোনও সমস্যা না হয় । একজন গর্ভবতী মহিলা কী খাচ্ছেন এবং সঠিক পুষ্টি পাচ্ছেন কি না তা জানা খুবই জরুরি। কারণ সাধারণ মানুষের তুলনায় অনেক বেশি পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজন গর্ভবতী মায়ের। শিশুর সুস্বাস্থ্য়ের জন্য চাই পুষ্টিকর, ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার। কারণ মায়ের শরীর থেকেই গর্ভস্থ শিশু খাবার ও পুষ্টি পায়। সঠিক খাবার ও পুষ্টিগুণ না পেলে গর্ভবতী মায়ের নানান শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। পাশাপাশি গর্ভস্থ শিশুরও সঠিক বিকাশে সমস্যা হতে পারে।
এইসময় কী কী খাওয়া উচিত আর কী নয় অবশ্যই তা জেনে রাখুন। কোন খাবারের কী পুষ্টিগুণ, কোন খাবার কতটা পরিমাণে খাবেন এবং কোনও খাবার একেবারেই এড়িয়ে চলা দরকার জেনে নিন –
গর্ভাবস্থায় কী কী খাবেন
আপনি যদি গর্ভবতী হন তাহলে আপনাকে এইসময় এমন খাবার খেতে হবে যা আপনাকে সঠিক পুষ্টিগুণ জোগাবে ও পাশাপাশি আপনার গর্ভের সন্তানও সঠিক পুষ্টি পাবে। দেখে নেওয়া যাক সেগুলি ঠিক কী কী –
১. দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য
দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার গর্ভবতী মায়ের জন্য খুবই উপকারী। এইসব খাবারের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে, যা শরীরের গঠনে সাহায্য করে। এছাড়াও এর মধ্যে রয়েছে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি ১২। শিশুর বিকাশের জন্য প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তাই এইসময় গর্ভবতী মায়েদের দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা । দুধ, টক দই, ঘোল কিংবা লস্যি বানিয়ে খেতে পারেন, পনিরও রাখতে পারেন খাদ্য তালিকায়। বিশেষ করে টক দই এইসময় খুব উপকারী। এটি হজমে সাহায্য করে, ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে শরীরে বাসা বাঁধতে দেয় না। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে একগ্লাস গরম দুধ খেতে পারেন, তাতে আপনার ঘুম ভালো হবে ।
২. ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার
চেষ্টা করুন সব সময় উদ্ভিজ উৎস বেছে নিতে। কারণ এটি প্রাকৃতিক এবং নিরাপদ। প্রত্যেকদিনের খাদ্যতালিকায় যে কোনও ডাল রাখুন। এটি শরীরের প্রোটিনের চাহিদা পূর্ণ করবে। সোয়াবিন, মটরশুটি খাওয়াও এইসময় উপকারী কারণ এর মধ্যে আয়রন রয়েছে ।
৩. সবুজ শাক-সবজি
প্রত্যেকদিনের খাবারে অবশ্যই সবুজ শাক সবজি রাখুন। কারণ সবুজ শাক সবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে আয়রন, ফসফরাস, জিংক এবং ম্যাগনেসিয়াম। এইসময় পালং, পুঁই এর মতো পাতাওয়ালা সবজি বেশি করে খান ।
৪. মিষ্টি আলু
মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমানে বিটা ক্যারোটিন রয়েছে যা শরীরে ভিটামিন এ -এর চাহিদা পূর্ণ করে। ভিটামিন এ শরীরের কোষ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে (।
৫. মাছ (সামুদ্রিক মাছ)
গর্ভাবস্থায় মাছ অন্যতম উপকারী খাবার। যা মা ও শিশু দুজনের জন্যই পুষ্টিকর। বিশেষ করে এই সময় সামুদ্রিক মাছ খাওয়া খুবই উপকারী। কারণ সামুদ্রিক মাছের মধ্যে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, যা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান । এটি মস্তিষ্ক ও চোখের জন্য খুবই উপকারী। চিকিৎসকদের মতে অত্যধিক সামুদ্রিক মাছ এইসময় না খাওয়ায় ভালো। এতে শরীরে ক্ষতিকর রাসায়নিক প্রবেশ করতে পারে ।
৬. ডিম
ডিম অন্যতম একটি সুষম এবং পুষ্টিকর খাদ্য। গর্ভবতী মহিলাদের অবশ্য প্রত্যেকদিনের খাদ্যতালিকায় এটি রাখা উচিত। তবে একটি বিষয় খেয়াল রাখবেন, অর্ধ সেদ্ধ এবং কাঁচা ডিম কিন্তু গর্ভাবস্থায় মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। তাই খাওয়ার আগে ভালো করে সেদ্ধ বা রান্না করে তবেই খান ।
৭. মাংস
চিকেন কিংবা মটন দুটোই আপনার খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন। কারণ এইসময় প্রাণীজ প্রোটিনেরও দরকার শরীরে । তবে অত্যধিক কোনও কিছুই ভালো নয়, তাই সীমিত পরিমাণে খান। এইসময় যেহেতু বেশি তেল মশলাসহ রান্না এড়িয়ে চলা ভালো, তাই হালকা ঝোল বানিয়ে খেতে পারেন।
৮. ফ্যাটযুক্ত খাবার
গর্ভাবস্থায় মহিলাদের অনেকে ঘি ও মাখন খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ঘি ও মাখনে স্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে যা শরীরে পুষ্টি যোগায়। তবে বাজারের প্যাকেটজাতর বদলে বাড়ির তৈরি ঘি বা মাখন অনেক বেশি পুষ্টিকর ।
৯. ফল
গর্ভবতী মায়েদের প্রত্যেকদিন প্রচুর ফল খেতে হবে। কারণ যে কোনও ফলে প্রচুর ভিটামিন থাকে, যা শিশুর বিকাশের জন্য অত্যন্ত ভালো। যেমন লেবুতে রয়েছে ভিটামিন C, আপেলের মধ্যে রয়েছে আয়রন সহ নানা উপাদান যা শরীরে পুষ্টিগুণ জোগায়। বেদানা, কমলালেবু, আপেল, পেয়ারা, আঙুরফল ইত্যাদি আপনার খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন। আর যারা ড্রাই ফ্রুটস খেতে ভালোবাসেন তারা খেজুর, কিশমিশ খেতে পারেন।
১০. জল
সঠিক খাবার খাওয়ার পাশাপাশি এইসময় প্রচুর পরিমাণে জল খেতে হবে । কেবলমাত্র পুষ্টিকর খাবার খেলেই চলবে না। সঠিকমাত্রায় জল খেলে তবেই ওই খাবার ভালো হজম হবে। খাবারের পুষ্টিগুণ শরীরে পৌঁছাবে। কফি খেতে যারা ভালোবাসেন তাদের জন্য বলা দরকার, এইসময় এই দুটি পানীয় একটু কম খাওয়া দরকার। কারণ কফিতে ক্যাফিন রয়েছে, অতিরিক্ত ক্যাফিনে মা ও শিশু উভয়ের জন্য ক্ষতিকর।
উল্লেখ্য, গর্ভাবস্থায় নিজের খাদ্যতালিকা তৈরির আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। আপনার শরীর এবং প্রয়োজন বুঝে তবেই খান। এমন খাবার খান যাতে শরীরে ভিটামিন সহ অন্যান্য উপাদান পৌঁছায়।
গর্ভাবস্থায় কী কী খাবেন না
এমনকিছু খাবার রয়েছে যেগুলো গর্ভবতী মহিলার জন্য ক্ষতিকারক। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেগুলো কী কী –
১. কাঁচা বা আধসেদ্ধ ডিম
কাঁচা বা আধসেদ্ধ ডিম একেবারেই খাবেন না। কারণ কাঁচা ডিমে ভাইরাসের সংক্রমণ হলে, এর থেকে গর্ভবতী মায়ের ডায়েরিয়া, পেটে ব্যথা, বমি, জ্বর হতে পারে। যার প্রভাব পড়বে গর্ভস্থ শিশুর উপরও। তাই কাঁচা ডিমের পাশাপাশি কাঁচা ডিম মেশানো খাবারও খাবেন না। মেয়োনিজ, বা কোনও স্যালাড ড্রেসিংয়ের সময় কাঁচা ডিম ব্যবহার হয়েছে এমন খাবার বর্জন করুন।
২. আধসেদ্ধ মাংস
এইসময় আধসেদ্ধ মাংস একেবারেই খাবেন না। কারণ মাংস ভালো করে রান্না না হলে এর মধ্যে থাকা নানা মাইক্রোঅর্গানিজম নষ্ট হয় না। ফলত বিষক্রিয়ার সমস্যা হতে পারে। তাই ভালো করে মাংস রান্না করা হলে তবেই খাবেন। শুধু তাই নয়, নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে মাংস ধোয়ার পর রান্নাঘরের বেসিন ও হাত ভালো করে সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে নিন ।
৩. কাঁচা সবজি
কাঁচা সবজিতে নানা প্যারাসাইট বা পরজীবী ব্যাকটেরিয়া থাকে। যা গর্ভবতী মা ও তার সন্তানের জন্য ক্ষতিকারক। তাই বাজার থেকে আনা সবজি ভালো করে ধুয়ে, রান্না করে তবেই খান। মনে রাখবেন, বাজার থেকে কখনই কাটা সবজি বা ফল কিনবেন না। কারণ ফল ও সবজি অনেকক্ষণ কাটা থাকলে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ভয়ও থাকে। তাই যখনই ফল বা সবজি কিনবেন গোটা কিনুন। বাড়িতে সেগুলো ভালো করে আগে ধুয়ে নিন। সবজি ভালোভাবে রান্না করে তবেই খান ।
৪. আনপাস্তুরাইজড দুধ
আনপাস্তুরাইজড দুধে নানা রকম মাইক্রোবস থাকতে পারে যা গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি করতে পারে। দুই এই সময় অবশ্যই উপকারী, তবে ভালো করে ফুটিয়ে তবেই খান।
৫. আনারস
গর্ভবতী মহিলাদের আনারস খেতে বারণ করা হয়। কারণ এতে রয়েছে ব্রোমিলিন নামক উৎসেচক যা গর্ভপাতের সম্ভাবনা বাড়ায় এবং নির্দিষ্ট সময়ের আগে প্রসব হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।
৬. কাঁচা পেপে
কাঁচা পেপের মধ্যে রয়েছে পেপ্সিন ও প্যাপাইন যা গর্ভস্থ শিশুর জন্য ক্ষতিকারক। গর্ভপাতের সম্ভাবনাও বাড়ায়। তাই গর্ভাবস্থায় কাঁচা পেপে এড়িয়ে চলা ভালো ।
৭. আজিনামোটো
অনেক চাইনিজ খাবারে এটি ব্যবহার করা হয়। খাবারকে সুস্বাদু করলেও এটি স্বাস্থ্য়ের জন্য় একেবারেই ভালো নয়। আজিনামোটো দেওয়া খাবার খেয়ে অনেকেরই মাথা ঘোরা, হঠাৎ প্রচণ্ড ঘাম, পেশীর টান ইত্যাদি নান সমস্যা দেখা দেয়। গর্ভাবস্থা এটি এড়িয়ে চলুন।
৮. মৌরি ও মেথি
অতিরিক্ত মৌরি বা মেথি খেলে সময়ের আগেই প্রসব এবং প্রিম্যাচিওর শিশুর জন্মের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। রান্নায় একটু আধটু ব্যবহার করলেও বেশি মৌরি বা মেথি খাবেন না।
৯. অ্যালকোহল
গর্ভাবস্থায় মদ্য পান বা কোনওরকম অ্যালকোহল সেবন করা একেবারেই উচিত নয়। মায়ের রক্তের মাধ্যমে অ্যালকোহল শিশুর শরীরে পৌঁছে যায়। যা থেকে শিশুর মস্তিষ্ক এবং শিরদাঁড়ার ক্ষতি হতে পারে। অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান গর্ভপাত ঘটাতে পারে, এমনকী মৃত সন্তানেরও জন্ম হতে পারে ।
এছাড়া এইসময় বেশি ঝাল ও তেলমশলার রান্না না খাওয়ায় ভালো। চেষ্টা করুন হালকা সহজপাচ্য খাবার খেতে। যা সহজে হজম হবে এবং শরীরে সঠিক পুষ্টিও পৌঁছাবে। খাবার থেকে কোনও সমস্যা হলে অবশ্যই আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। কোন কোন খাবার আপনার ও আপনার সন্তানের জন্য ক্ষতিকারক সে বিষয়ে অবশ্যই বিশেষজ্ঞর মতামত নিয়ে নিন।
প্রেগন্যান্সি ডায়েট চার্ট
গর্ভাবস্থায় সঠিক খাবার খাওয়া যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনই সঠিক সময় খাওয়াটাও জরুরি। গর্ভবতী মা কখন কী খাচ্ছেন তার উপর নির্ভরশীল মা ও সন্তানের স্বাস্থ্য। রইল তেমনই একটি ডায়েট চার্ট, যেটা আপনি ফলো করতে পারেন। প্রয়োজনে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
সময় | কী খাবেন |
---|---|
ভোরবেলার খাবার(সকাল ৭টার মধ্যে) | সকালে ঘুম থেকে উঠে সবার আগে একগ্লাস জল খান। খিদে পেলে ড্রাই ফ্রুট খেতে পারেন। চাইলে একগ্লাস গরুর দুধ বা আমন্ড মিল্ক বা আপেলের রস খেতে পারেন। সকাল সাতটার আগে এই খাবারটি খেয়ে নিন। |
প্রাতঃরাশ(সকাল ৯টার মধ্যে) | প্রাতঃরাশে রাখুন এক বাটি ফল। তবে আনারস, পেঁপে ইত্যাদি ফল বাদে অন্য কোনও ফল খেতে পারেন। সেই সঙ্গে এক বাটি চিঁড়ের পোলাও বা সুজি খেতে পারেন। কোনওদিন পরোটা, কোনওদিন স্যান্ডউইচ বা ওটস-ও খেতে পারেন। তবে অবশ্যই অল্প তেল দিয়ে তৈরি খাবার খান। সকাল ন’টার মধ্যে প্রাতঃরাশ সেরে ফেলুন। |
দুপুরের আগে(সকাল ১১টা) | বেলা ১১টা নাগাদ এক বাটি সুপ খেতে পারেন। বাড়িতেই নিজের পছন্দমতো সবজি দিয়ে সুপ তৈরি করে নিন। সবজির বদলে চিকেনও দিতে পারেন সুপে। |
দুপুরের খাবার(বেলা ১টা থেকে ২টোর মধ্যে) | ভাত খেতে ভালো লাগলে দুপুরে ভাতই খান। ভাতের সঙ্গে ডাল, প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি, মাছ এবং টক দই রাখুন। চাইলে মাছের বদলে ডিম বা চিকেন খেতে পারেন। যদি আপনার ভাত খেতে ভাল না লাগে সেক্ষেত্রে রুটি বা পরোটা খেতে পারেন। যদি অন্যরকম কিছু খেতে চান তা হলে গ্রিলড চিকেন ও স্যালাড খেতে পারেন। বেলা একটা থেকে দুটোর মধ্যে লাঞ্চ সেরে নিন। |
সন্ধেবেলার জলখাবার(সন্ধে ৫টা থেকে ৬টার মধ্যে) | সন্ধেবেলা হালকা খাবার খান। যেমন স্যান্ডউইচ, ইডলি, গাজরের হালুয়া, সুপ, দালিয়া, উপমা, বা সবজি সেদ্ধ খেতে পারেন। সন্ধের পর ফল না খাওয়াই ভালো। চাইলে ড্রাই ফ্রুট ও সঙ্গে গ্রিন টি বা যে-কোনও হেলথ ড্রিঙ্ক খেতে পারেন। পাঁচটা থেকে সন্ধে ছ’টার মধ্যে খাবেন। |
রাতের খাবার(রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে) | দুপুরের মতো রাতের মেনুও একই রাখতে পারেন। মাঝেমধ্যে ইচ্ছে করলে খিচুড়িও খেতে পারেন। তবে রাতে হালকা খাবার খাবেন। রাত ন’টা থেকে দশটার মধ্যে ডিনার করুন, তবেই খাবার সহজে হজম হবে। |
গর্ভাবস্থায় মহিলাদের স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি খিদে পায়। কারণ এইসময়ে মা ও বাচ্চা , দু’জনের জন্য আহার করা হয়। মা কী খাচ্ছেন, তার উপর শিশুর স্বাস্থ্য নির্ভর করে। কাজেই এই সময়ে আরও বেশ কিছু দরকারি টিপস মেনে চলা জরুরি।
গর্ভবতী মহিলাদের জন্য় কিছু জরুরি টিপস
১. ইচ্ছে অনুযায়ী আপনি সবকিছুই খেতে পারেন। গর্ভাবস্থায় শরীরে হরমোনের তারতম্যের কারণে শরীরে অনেক পরিবর্তন দেখা যায়। কোনও একটি নির্দিষ্ট খাবার একজনের সুট করছে মানে এই নয় যে, তা আপনার শরীরের জন্যও স্বাস্থ্যকর। আবার তার বিপরীত ব্যাপারও হতে পারে। যাই খান না কেন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
২. কোনও খাবার খাওয়ার পর যদি দেখেন কোনওরকম অস্বস্তি হচ্ছে,তাহলে ওই খাবার আর খাবেন না। যেমন অনেক খাবার এইসময় হজম হয় না, বমি হয়ে যায়। আবার খাবার থেকে গায়ে চুলকানির সমস্যা হলে সেইসমস্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
৩. প্রতিদিন ডায়েট চার্টে সামান্য হলেও কিছু ড্রাই ফ্রুটস রাখুন। সারাদিনে অল্প অল্প করে খান।
৪. এইসময় বেশিক্ষণ খালি পেটে থাকা একেবারেই উচিত নয়। তাতে বাচ্চা ও মা দুজনেরই ক্ষতি হতে পারে। অন্তত দু ঘণ্টা অন্তর অন্তর হালকা কিছু হলেও খান। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় অনেকেরই বমি করার প্রবণতা থাকে, তাঁদের কিন্তু একবারেই পেট খালি রাখা উচিত নয়।
৫. সারাদিনে অল্প-অল্প করে ছয় থেকে সাত বার খাবার খান। তাতে পেট ফাঁপা বা ব্লোটিংয়ের সমস্যা হবে না।
৬. বেশি তেলমশলার পাশাপাশি অতিরিক্ত নুনও এইসময় না খাওয়ায় ভালো। কাঁচা নুন তো খাবেনই না। কারণ এই সময়ে শরীরে জলীয়ভাব বেড়ে যেতে পারে এবং নুন থেকে তার মাত্রা আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলস্বরূপ পা ফুলে যাওয়ার সমস্যা দেখে দিতে পারে। তাছাড়া এইসময় যেহেতু রক্তচাপ বাড়ার ভয় থাকে, তাই ডাক্তার নুন কম খাওয়ার পরামর্শ দেন।
৭. চিনিও যতটা সম্ভব কম খাওয়া ভাল। অনেক গর্ভবতী মহিলার শরীরে এই সময়ে ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। অতিরিক্ত চিনি থেকে পরবর্তীকালে ডায়াবেটিসের সমস্যা ডেকে আনতে পারে।
৮. চেষ্টা করুন কেবলমাত্র বাড়ির তৈরি খাবার খেতে। বাইরের খাবার যতটা এড়িয়ে চলা যায় তত ভালো।
৯. রান্না করার আগে এবং খাবার খাওয়ার আগে অবশ্যই বাসনপত্র এবং হাত ভালো করে পরিষ্কার করুন।
১০. বাচ্চার সুস্বাস্থ্যের কথা ভেবে যদি কোনও সাপ্লিমেন্ট খেতে চান, অবশ্যই তার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আপনার জন্য সেটি সুস্বাস্থ্যকর কিনা তা জেনে নিন
নিজের গর্ভবস্থাকে করে তুলুন সুন্দর ও অবশ্যই উপভোগ করার চেষ্টা করুন।
তথ্যসূত্র (References) :
1. Pregnancy and diet by Better health channel
2. Milk and dairy products by NI direct government
3. Healthy Eating During Pregnancy and Breastfeeding by Family health service
4. Eating for a Healthy Pregnancy by CDHD
Discussion about this post