ডা. নূরজাহান বেগম
সারা দিনের দুরন্তপনা শেষে সন্ধ্যা নামলেই আদরের ছোট্ট শিশুটির কান্না দেখতে কার ভালো লাগে? এই কান্নার কারণ হতে পারে পায়ে ব্যথা।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায়, ‘গ্রোয়িং পেইন’ বলে একটি শব্দ প্রায়ই বলা হয়। চলতি ভাষায় একে বলা যেতে পারে ‘বেড়ে ওঠার ব্যথা’। তবে এটি বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় কোনো সমস্যা তৈরি করে না।
তিন বছর বয়স থেকে সাধারণত এটি শুরু হয়ে থাকে এবং ১০ থেকে ১২ বছর বয়সের পর ভালো হয়ে যায়। তবে ৩ থেকে ৬ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। এর কারণ হিসেবে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয়ে থাকে, সারা দিনের খেলাধুলা, দৌড়ঝাঁপের কারণে পায়ের মাংসপেশিতে চাপ পড়ে। আবার কিছু কিছু শিশু একদমই ব্যথা সহ্য করতে পারে না। তাদের মধ্যে এই গ্রোয়িং পেইনের প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
গ্রোয়িং পেইনের বৈশিষ্ট্য
- সন্ধ্যা বা রাতের শুরুতে শিশু পায়ে ব্যথার কথা বলে। সাধারণত দুই পাশের ঊরু ও পায়ের মাংসপেশিতে কামড়ে ধরে আছে বা চিবোচ্ছে এ রকম ব্যথা হয়। কখনো কখনো ব্যথার তীব্রতা এত বেশি থাকে যে রাতের ঘুম ভেঙে যায়।
- কয়েক ঘণ্টা ব্যথা থাকে। তারপর সাধারণত শিশু ঘুমিয়ে যায়। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর আর কোনো ব্যথা থাকে না।
- প্রতিদিন ব্যথার তীব্রতা একই রকম
থাকে না। - এই ব্যথার জন্য শিশুর হাঁটা-চলা বা দৈনন্দিন কাজে কোনো সমস্যা হয় না।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি
- সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর ব্যথা থাকলে
- সারাক্ষণই ব্যথা থাকলে
- যেকোনো এক পায়ে বা হাতে ব্যথা হলে
- ব্যথার তীব্রতায় শিশু হাঁটতে না পারলে বা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটলে
- গিরা ব্যথা বা গিরা ফুলে গেলে
- ব্যথার সঙ্গে জ্বর, শরীরে র্যাশ বা চামড়ার নিচে রক্ত জমাট বাঁধার জন্য কালো দাগ দেখা দিলে
- আঘাতের চিহ্ন থাকলে
- খাবারে তীব্র অরুচি বা প্রতিনিয়ত ওজন কমে যেতে থাকলে
- শিশু দৈনন্দিন কাজ করতে না পারলে বা অতিরিক্ত দুর্বল হয়ে গেলে।
চিকিৎসা
ভিটামিন ডির অভাব থাকলেও অনেক শিশুর গ্রোয়িং পেইনের মতো উপসর্গ হয়। তাই শিশুর হাত-পায়ের ব্যথায় একবার চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ঘরোয়া কিছু ব্যবস্থা নিলে শিশুরা এই গ্রোয়িং পেইন থেকে আরাম পায় এবং ব্যথা কমে যায়।
- হালকা ম্যাসাজ করা
- কাপড় কুসুম গরম পানিতে দিয়ে সেঁক দিলে শিশু আরাম পায়
- ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল-জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা যাবে
- এসপিরিন, ব্যথা কমানোর স্প্রে বা মলম ইত্যাদি চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
ডা. নূরজাহান বেগম, স্পেশালিস্ট, পেডিয়াট্রিক আইসিইউ, এভারকেয়ার হাসপাতাল, ঢাকা
Discussion about this post