হার্টবিট ডেস্ক
ক্যারি অন পুনর্বহাল ও জিপিএ পদ্ধতি বাতিলের দাবি জানিয়ে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা আজ অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছে। সকাল ১০ টা থেকে কলেজ চত্বরে প্রতিবাদ সভায় সমবেত হন সদ্য ভর্তি হওয়া ১ম বর্ষের ( ৬০ তম ব্যাচ)এমবিবিএস ও বিডিএস (১১তম ব্যাচ) শিক্ষার্থীরা। তারা বলেছেন, বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) নতুন সিদ্ধান্তের কারণে মেডিকেল শিক্ষা ব্যাহত হবে, হুমকির মুখে পড়বে শিক্ষার্থীদের জীবন।
ক্যারি অন বহাল চাই, সিজিপিএ বাতিল চাই , আর নয় ডিপ্রেশন, বহাল চাই ক্যারি অন স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে কলেজ চত্বর। পোস্টারে লিখা ছিলো we heal people but who will heal us? CGPA cannot measure intelligence! মানুষ আমরা দাস নই, বেঁচে থাকার সাহস কই? ইত্যাদি।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানায়, আমাদের পাস মার্ক হচ্ছে ৬০, বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৩। এ ছাড়াও সুনির্দিষ্ট নিয়মের ভেতর দিয়ে আমাদেরকে পাস করতে হয়। অ্যানাটমি, ফিজিওলজি, বায়োক্যামিস্ট্রির মধ্যে অ্যানাটমির ফার্স্ট পার্ট, সেকেন্ড পার্টের ভাইভা হয়। এতে দুই পার্ট মিলিয়ে ৬০ মার্ক থাকতে হবে এবং লিখিত পরীক্ষায় ৬০ থাকতে হবে। একইভাবে ফিজিওলজির ভাইভাতে ৬০ ভাগ এবং লিখিত পরীক্ষায় ফার্স্ট পার্ট ও সেকেন্ড পার্ট মিলিয়ে ৬০ ভাগ নম্বর থাকতে হবে। বায়োক্যামিস্টিতেও একই পদ্ধতি। এই তিনটার পরে আবার অসপি ও প্র্যাক্টিক্যাল মিলিয়ে ৬০% থাকতে হবে। ফলে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের ব্যাপক একটি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এসব চ্যালেঞ্জের কারণে প্রফ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া খুবই স্বাভাবিক বিষয়।
কোনো কারণে কেউ অকৃতকার্য হলে, ব্যাচের সঙ্গে আর যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবে না। তার এমবিবিএস কোর্স আরও প্রলম্বিত হবে। তার ব্যাচমেটরা অন্য ইয়ারে যাবে, তখন স্বাভাবিকভাবেই অকৃতকার্য শিক্ষার্থীর হীনমন্যতা বাড়বে। এ অবস্থায় ক্যারিঅন পদ্ধতি বাতিল হয়ে গেলে তাদের হতাশা বহুগুণ বেড়ে যাবে।’
অন্য এক শিক্ষার্থী জানান, এ পদ্ধতি চালু হলে মেডিকেলগুলোতে পক্ষপাতিত্বের চর্চাও বাড়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। কারণ মেডিকেলে পছন্দ না হলে প্রায়ই শিক্ষার্থীকে ফেল করিয়ে দেওয়া হয়। নতুন পদ্ধতির ফলে সে আর উপরের ক্লাসে উঠার সুযোগ পাবে না। জুনিয়রদের সঙ্গে ক্লাস করতে হবে, এতে সে হতাশ হয়ে যাবে। মেডিকেল শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য একজন শিক্ষার্থীকে মানসিক চাপে ফেলার দরকার নেই। এর অনেক বিকল্প আছে, সেগুলো অনুসরণ করা যেতে পারে।
সি জিপিএ গ্রেডিং এর বিরোধিতা করে তারা জানান, ভালো চিকিৎসক হওয়ার সঙ্গে সিজিপিএ’র কোনো সম্পর্ক নেই। মার্ক ভালো হলেই ভালো রোগী দেখতে সক্ষম হবো, বিষয়টি এ রকমও না। তাই মেডিকেল শিক্ষার সঙ্গে গ্রেডিং কিছুতেই যায় না। কেউ পাস করলো মানে, আমি তাকে স্বীকৃতি দিচ্ছি যে, সে সাধারণ রোগীদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য সে যোগ্য। এখানে ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’ হওয়া উচিত না। এ পদ্ধতি যথেষ্ট ন্যায্য নয়। যেখানে আমাদের পরীক্ষা ব্যবস্থা যথেষ্ট ন্যায্য না। প্রশ্ন ফাঁস হয়ে যায়, অসপিগুলো ফাঁস হয়ে যায়। সেখানে গ্রেডিং দিয়ে ভালো কিছু হবে না। শিক্ষার্থীরা অবমূল্যায়নের শিকার হবে।’
অন্যদিকে বিএমডিসি বলছে, কে কী ভাবছেন, সেটাকে অগ্রাধিকার দিয়ে কারিকুলাম তৈরি হয় না। এটা প্রস্তুত করা হয়, সার্বিক বিবেচনা থেকে, অর্থাৎ যে চিকিৎসা শিক্ষা সবার জন্য ভালো হবে, সেভাবেই তৈরি করা হয়। শিক্ষার্থীদের চিন্তা-ভাবনাকে অগ্রাধিকার দিয়ে তো কারিকুলাম তৈরি করা সম্ভব না।এমবিবিএসের নতুন কারিকুলাম ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্টদের হাতে পৌঁছে গেছে। ২০২১-২২ সেশন থেকে এ কারিকুলাম কার্যকর হবে। শুধুমাত্র নতুন সেশনের শিক্ষার্থীরাই এ কারিকুলামের অধীনে পড়াশোনা করবে।
Discussion about this post