হার্টবিট ডেস্ক
বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত ১ কোটি ৩১ লাখেরও অধিক মানুষ। এছাড়াও প্রি-ডায়াবেটিসে ভুগছেন আরও প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ। অর্থাৎ সবমিলিয়ে দেশে ৩ কোটিরও বেশি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রয়েছে।
এদিকে দেশের প্রতিটি পরিবার ডায়াবেটিসের পেছনে প্রতি বছর ৮৬২ ডলার খরচ করে। প্রতি বছর ১ কোটি ৩১ লাখ লোকের জন্য ১ লাখ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়। ডায়াবেটিস রোধ করা গেলে এ টাকা দিয়ে প্রতি বছর দেশে ৪টি পদ্মা সেতু তৈরি করা সম্ভব বলে দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) প্রিভেনশন অব ডায়াবেটিস মেলিটাস নিয়ে আয়োজিত এক সিম্পোজিয়ামে এসব তথ্য উঠে আসে।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, ডায়াবেটিস একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা। ৪৬ কোটির বেশি লোক এ রোগে ভুগেন। আরও প্রায় ৪৬ কোটি লোক প্রি ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন। বিশ্বে ২০০ মিলিয়ন লোক অর্থাৎ ২০ কোটি লোক এখনো আনডায়াগনোসড হিসেবে রয়ে গেছেন।
বক্তারা বলেন, ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। প্রাণীর শরীরের আইপি এনজাইম কম হলে ডায়াবেটিস হয়। মানুষের এই আইপি এনজাইম স্টুল এলকালাইন ফসফেট পরীক্ষার মাধ্যমে বের করা যাবে বলে সেমিনারে জানানো হয়।
সিম্পোজিয়ামে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান প্রশাসন গবেষণায় আরও অগ্রগতি ও উন্নতি করে ইতিহাস হতে চায়। ইতিমধ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয় করোনাভাইরাসের জেনোম সিকোয়েন্সিং করেছে। করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে কি-না এই বিষয়ে গবেষণা চলমান রয়েছে। এমনকি যৌথভাবে করোনাভাইরাস পরীক্ষার কিট তৈরি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় যদি স্টুল এলকালাইন ফসফেট টেস্টের মাধ্যমে দেশের মানুষের ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে পারে তবে দেশে ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধ করতে পারবে। এ পরীক্ষার মাধ্যমে মানুষের ডায়াবেটিসের আগাম ও পরবর্তী পর্যায় যদি প্রকাশ করা যায় তবে ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্ড্রোক্রাইনোলজি বিভাগের অনারারি প্রফেসর ডা. মধু এস মালো। প্রবন্ধে তিনি বলেন, তখন আমি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করছিলাম। আমি কিছু মাউস (ইঁদুর) মডেল নিয়ে কাজ করেছি। যে মাউস মডেলগুলোতে একটি এনজাইম কম ছিল। এর নাম ইন্টেসটিনাল এলকালাইল ফসফেটস। ইন্টেসটিনাল এলকালাইল ফসফেটসের কাজ হচ্ছে অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াল টক্সিনকে ধ্বংস করা। এই টক্সিনগুলো যদি রক্তে যায় তবে প্রদাহ সৃষ্টি করে। প্রদাহ যদি প্যানক্রিয়াসের বিটাসেলে আক্রান্ত হয় এটি টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস। আর প্রদাহ যদি ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয় তবে তা হচ্ছে টাইপ টু ডায়াবেটিস।
তিনি আরও বলেন, আমি যে মাউসগুলোর কথা বলছিলাম তাদের ইন্টেসটিনাল এলকালাইল ফসফেটস ছিল না। তখন আমার থিউরি হলো এই মাউসগুলো টক্সিনকে ধ্বংস করতে পারবে না। এদের ডায়াবেটিস হওয়া উচিত। এদের পরীক্ষা করে দেখতে পেলাম এদের ডায়াবেটিস আছে। এদের কোলেস্টেরল লেভেল হাই, টাইগ্রিস লেভেল হাই, এসডিএল লো, এলডিএল লেভেল হাই। এদের লিভার ডেমেজও হয়ে গেছে।
মধু এস মালো বলেন, অ্যানিমাল স্টাডির পর হার্ভার্ড থেকে চলে আসি। এখানে হিউম্যান স্টাডি শুরু করি। হিউম্যান স্টাডিতে যাওয়ার আগে আমার মনে হলো ডায়াবেটিস আক্রান্ত ইঁদুরে যদি ইনজামইম কম তবে ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষেরও এই এনজাইম কম থাকে। পরীক্ষা করে এর সত্যতা পেলাম। যারা ডায়াবেটিস আক্রান্ত তাদের ওই এনজাইমও প্রায় ৫০ শতাংশ কম। এ তথ্য পাওয়ার পর আমার থিউরি হলো, আইপি এনজাইম ডেফিসিয়েন্সি সম্ভবত ডায়াবেটিস তৈরি করছে। এটিই ডায়াবেটিস রোগের কারণ। তখন আমি দুটো গ্রুপকে নিলাম। এক গ্রুপের আইপি এনজাইম বেশি এবং অন্য গ্রুপে আইপি এনজাইম কম। এদের আমি পাঁচ বছর পর্যবেক্ষণ করি। পর্যবেক্ষণে দেখলাম যাদের আইপি এনজাইম কম তাদের ১৪ গুণ বেশি ডায়াবেটিস হচ্ছে।
তিনি বলেন, এই আবিষ্কারের ভিত্তিতে টেস্ট ডেভেলপ করেছি। যার নাম স্টুল এলকালাইন ফসফেট টেস্ট। এই এনজাইমটা স্টুলে পাওয়া যায়। এই এনজাইম স্টুল এলকাইল ফসফেটের পরীক্ষার মাধ্যমে ডায়াবেটিস বের করতে পারি। যাদের স্টুলে স্টুল এলকালাইন ফসফেট কম থাকে তাদের ডায়াবেটিস বেশি। তাই ৩০-৬০ বছর বয়সী মানুষদের ডায়াবেটিস স্ক্রিনিং করতে হবে। তাদের মধ্যে আইপি এনজাইম কম থাকলে স্বাস্থ্য শিক্ষা দিতে হবে। এর মাধ্যমে আমার মতে বিশ্ব থেকে ডায়াবেটিস দূর হবে।
সিস্পোজিয়ামে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সালেকুল ইসলাম। সিম্পোজিয়ামে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্ড্রোক্রাইনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এমএ হাসনাত। এ সিম্পোজিয়ামটি সঞ্চালনা করেন এন্ড্রোক্রাইনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. তাহনিয়া হক।
Discussion about this post