হার্টবিট ডেস্ক
রাজধানীসহ সারাদেশই কমবেশি দাবদাহে পুড়ছে। এই অবস্থায় পিপাসার্ত মানুষ যেখানেই পানি পাচ্ছেন, সেখানেই পিপাসা নিবারণের চেষ্টা করেছেন। সেক্ষেত্রে অনেকাংশেই দেখা হয় না যেই পানিটি তিনি পান করছেন, তা বিশুদ্ধ কি না। যার ফলে আক্রান্ত হচ্ছেন ডায়রিয়ায়।
ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের অন্যতম ভরসা কেন্দ্র আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) সূত্রে জানা গেছে, গরমের কারণে গত কয়েকদিনে বেড়েছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী, হাসপাতালে আসা রোগীদের অধিকাংশই শিশু।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডায়রিয়া পানিবাহিত রোগ। দূষিত পানি পান করার মাধ্যমে এ রোগ হয়। সাধারণত দিনে তিন বা এর চেয়ে বেশি বার পাতলা পায়খানা হতে শুরু করলে তার ডায়রিয়া হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়। গরম এলেই ডায়রিয়ার সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করে। বিশেষ করে শিশু-কিশোররা এই রোগে বেশি ভুক্তভোগী হয়।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শহরে ট্যাপের পানি সেপটিক ট্যাংক বা সুয়ারেজ লাইনের সংস্পর্শে দূষিত হয়। অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন জীবনযাপন, যেখানে-সেখানে ও পানির উৎসের কাছে মলত্যাগ, সঠিক উপায়ে হাত না ধোয়া, অপরিচ্ছন্ন উপায়ে খাদ্য সংরক্ষণ এবং ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে এ সময় দোকান, রেস্তোরাঁ বা বাসায় পচন ধরা ফ্রিজের খাবার গ্রহণ ডায়রিয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।
এগারো মাস বয়সী শিশু জান্নাত হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে হাসপাতালের বিছানায়। শারীরিকভাবে খুব বেশি দুর্বল হয়ে যাওয়ায় নড়াচড়াও করছে না তেমন। ছয়দিন ধরে অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে মঙ্গলবার (১২ জুলাই) হাসপাতালে আসেন শিশুর মা। তিনি বলেন, প্রথমে মেয়ের জ্বর আসে, তারপর শুরু হয় পাতলা পায়খানা আর বমি। গতকাল থেকে হাসপাতালে ভর্তি আছি, এখন পর্যন্ত বমিটা শুধু থেমেছে, পাতলা পায়খানা ভালো হয়নি। ডাক্তার বলেছে স্যালাইন খাওয়ালে ঠিক হয়ে যাবে।সামনের দিনে রোগীর সংখ্যা আরো বাড়বে। কারণ যখনই গরমকাল শুরু হয় তখনই এই রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়তে শুরু করে। আমরা চেষ্টা করছি সব রোগীকেই সাধ্যমতো সেবা দেওয়ার জন্যআইসিডিডিআর,বির ক্লিনিক্যাল ফেলো ডা. সাজ্জাদুল হক
দেরি করে হাসপাতালে আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে স্থানীয় এক ডাক্তারকে দেখিয়ে ওষুধ খাইয়েছি। শেষ পর্যন্ত ওই ওষুধে ভালো না হওয়ায় প্রতিবেশীদের পরামর্শে এখানে এসেছি।
মুন্সীগঞ্জ থেকে গত ৯ জুলাই শিশু সন্তান তাহসিনকে নিয়ে আইসিডিডিআর,বিতে আছেন এক মা। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, বাচ্চকে নিয়ে গত তিন-চার দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছি। তার শারীরিক অবস্থা কিছুটা ভালো হয়, পরে আবার খারাপ হয়। সাধারণত রাতে পাতলা পায়খানা কিছুটা কমে, আবার সকাল হতেই বেড়ে যায়।
মঙ্গলবার (১২ জুলাই) দিবাগত রাত একটা থেকে আজ (বুধবার) সকাল নয়টা পর্যন্ত আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালে ৮৯ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার ৩৯১ জন, সোমবার ৩৭১ জন, রোববার ২৯০ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। তার আগে গত ৯ জুলাই ৩৫৫ জন, ৮ জুলাই ৩৬৯ জন এবং ৭ জুলাই ৪১৬ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়।
হাসপাতালে আসার পর বাচ্চার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, উন্নতি তো এখনও বুঝতে পারছি না। ছেলের চোখ বসে গেছে, ওজন অনেক দ্রুত কমে যাচ্ছে, সারাক্ষণ কান্নাকাটি করছে।
শুধু জান্নাত আর তাহসিন নয়, এরকম শতাধিক শিশু ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে আইসিডিডিআর,বিতে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন। এছাড়াও ভর্তি রয়েছেন বিভিন্ন বয়সের নানা পেশার ডায়রিয়া আক্রান্ত তিন শতাধিক রোগী।
গরম এলে সব বয়সীরাই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। গরমের কারণে স্বাভাবিকভাবে সবাই পিপাসার্ত থাকে, যার ফলে যেখানেই সে পানি পায় সেটিই পান করতে চায়। কিন্তু আমাদের তো প্রয়োজন সুপেয় পানি। আর সেই পানিটা আমরা অনেক সময়েই পাই না, যে কারণে বাধ্য হয়েই রাস্তার পাশের ময়লাযুক্ত পানিই পান করতে হয়আইসিডিডিআর,বির সিনিয়র সায়েনটিস্ট ডা. মো. ইকবাল হোসেন
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার (১২ জুলাই) দিবাগত রাত একটা থেকে আজ (বুধবার) সকাল নয়টা পর্যন্ত আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালে ৮৯ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার ৩৯১ জন, সোমবার ৩৭১ জন, রোববার ২৯০ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। তার আগে গত ৯ জুলাই ৩৫৫ জন, ৮ জুলাই ৩৬৯ জন এবং ৭ জুলাই ৪১৬ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়।
আইসিডিডিআর,বির ক্লিনিক্যাল ফেলো ডা. সাজ্জাদুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঈদ উপলক্ষে আমাদের হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কিছুটা কম থাকলেও এখন আবার রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। আমরা দেখেছি আইসিডিডিআর,বিতে গতকাল (১২ জুলাই) নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে ৩৯১ জন, এর আগের দিন (১১ জুলাই) ৩৭১ জন, ঈদের দিন (১০ জুলাই) ২৯০ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
তিনি বলেন, সামনের দিনে রোগীর সংখ্যা আরো বাড়বে। কারণ যখনই গরমকাল শুরু হয় তখনই এই রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়তে শুরু করে। আমরা চেষ্টা করছি সব রোগীকেই সাধ্যমতো সেবা দেওয়ার জন্য।
রোগীরা কোন পর্যায়ে হাসপাতালে আসছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে ডায়রিয়া নিয়ে কিছুটা সচেতনতা বেড়েছে। যে কারণে রোগী যারা আসছে তারা কিন্তু আগের মতো একেবারে সিভিয়ার কন্ডিশনে আসছে না। সর্বশেষ যখন আমাদের আউটব্রেক হয়েছিল, তখন আমরা অনেক বেশি সিভিয়ার পেশেন্ট পেয়েছিলাম। এমনকি সেই সময়ে আমাদেরকে হাসপাতালের বাইরেও আরও দুটি তাঁবু টানাতে হয়েছিল। এই মুহূর্তে আমাদের এখানে যারা আসছেন, তাদের অধিকাংশই পানি শূন্যতা নিয়ে আসছেন, তবে ওই পরিমাণ সিভিয়ারিটি নেই।
হাসপাতালে আসাদের মধ্যে যাদের প্রয়োজন, তাদেরকে আমরা মুখে খাওয়ার স্যালাইন দিচ্ছি। ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের জন্য এটাই বেস্ট ট্রিটমেন্ট। ওটা দিলেই রোগীর যে পানিশূন্যতা রয়েছে, সেটা কেটে যায়। এমনকি একজন রোগীকে যদি বাসাতেই স্যালাইনটা বানিয়ে খাওয়ানো যায়, তাহলে তাকে নিয়ে আর হাসপাতালেই আসা লাগে না।
হাসপাতালে আসা রোগীদের মধ্যে শিশুদের হারই বেশি। কারণ তারা অতিদ্রুতই দুর্বল হয়ে যায়। আর তারা যেহেতু নিজেদের অসুস্থতার কথা বড়দের মতো বলতে পারে না, সেক্ষেত্রে তাদের অবস্থা কিছুটা তীব্রতর হয়ে থাকে। এজন্য মা-বাবাকে সবসময়ই সচেতন থাকতে হবে।
আইসিডিডিআর,বির সিনিয়র সায়েনটিস্ট ডা. মো. ইকবাল হোসেন বলেন, গরম এলে সব বয়সীরাই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। গরমের কারণে স্বাভাবিকভাবে সবাই পিপাসার্ত থাকে, যার ফলে যেখানেই সে পানি পায় সেটিই পান করতে চায়। কিন্তু আমাদের তো প্রয়োজন সুপেয় পানি। আর সেই পানিটা আমরা অনেক সময়েই পাই না, যে কারণে বাধ্য হয়েই রাস্তার পাশের ময়লাযুক্ত পানিই পান করতে হয়।
আরেকটি বিষয় হলো, আমাদের সবার বাসাতেই তো ফ্রিজার নেই, খাবার তৈরি করার পর সেটি তো আমরা বেশ কিছুক্ষণ বাইরে রাখি। কিন্তু এই গরমে শীতের মতো তো আর খাবার অনেক্ষণ ভালো থাকে না। যে কারণে খাবারে অল্পপরিমাণ জীবাণু থাকলেও সেটি এই গরমে অনেক মাল্টিপ্লাই (সংখ্যা বৃদ্ধি) করে। এবং তাদের শরীর থেকে রস বের হয়, যা খাবারের ভেতরে থাকে। সে কারণে অল্প পরিমাণ খাবার খেলেও আমাদের ডায়রিয়া হয়ে যায়।
করণীয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডায়রিয়া আক্রান্ত হলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ পানি এবং লবণ বেরিয়ে যায়। কিন্তু অনেকক্ষেত্রেই বিষয়টা অভিভাবকরা গুরুত্বের সঙ্গে নেয় না। তবে এর চিকিৎসা খুবই সহজ। যতবার পাতলা পায়খানা হবে, ততবার একটি করে খাবার স্যালাইন ৫০০ মিলিলিটার সুপেয় পানিতে গুলিয়ে খেতে হবে। এভাবে চলতে থাকলে এমনিতেই রোগী সুস্থ হয়ে যাবে, তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসারও প্রয়োজন হবে না। সৌজন্যে-ঢাকা পোস্ট
Discussion about this post