হার্টবিট ডেস্ক
প্রতিটি দিন যেন দুঃস্বপ্ন হাতের আঙুল ‘পাথর’ হয়ে যাওয়া নুরুল আমিনের। এবার তার হাতের রোগ ছড়িয়ে পড়ছে চোখে। ধীরে ধীরে কালো হয়ে যাচ্ছে চোখের ভেতরে মণির চারপাশে। হাতের আঙ্গুলের মতো পাথর হতে শুরু করেছে তার চোখও।
কূল-কিনারাহীন এখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের রাজঘর গ্রামের বাসিন্দা নুরুল আমিন।
নুরুল আমিন পেশায় ছিলেন একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। বিভিন্ন দোকানে খাতা, কলমসহ স্টেশনারি মালামাল পাইকারি দামে বিক্রি করতেন। সেই ব্যবসাও বন্ধ হয়ে গেছে এক জটিল রোগে। দুই হাতের দুটি বৃদ্ধা আঙল ছাড়া বাকি ৮টি আঙুল পাথর হয়ে গেছে। ফলে হাতে ধরতে পারেন না কিছুই। এমনকি তার নিজের তিন সন্তানকেও প্রাণভরে ছুঁয়ে আদর করতে পারেন না।
অর্থের অভাবে পাথর হয়ে যাওয়া আঙুলের চিকিৎসাই চালাতে পারছেন না তিনি। এরই মাঝে যুক্ত হয়েছে নতুন যন্ত্রণা। আঙুলের রোগ ছড়িয়েছে চোখে। ফলে পাথর হতে শুরু করেছে তার চোখ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজঘর গ্রামের নুরুল আমিন গত ৫ ফেব্রুয়ারি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ধীরে ধীরে মাত্র দুই-তিন দিনের মধ্যে নুরুল আমীনের দুই হাতের ৮টি আঙুল পাথর হয়ে যায়। তিনি ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের রিউমাটোলজি বিভাগের প্রফেসর ডা. মো. আবু শাহীনের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন আছেন।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তার এই রোগটির নাম ‘রিউমাটয়েট আর্থাইসিস ভাস্যকুলাইটিস’। তার আক্রান্ত হওয়া ৮টি আঙুল কেটে ফেলতে হবে। এর চিকিৎসা খরচ অনেক বেশি। মানুষের সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।
এরই মাঝে গত এপ্রিল মাসের শেষ দিকে তিনি চোখে দেখতে পারছিলেন না। ধীরে ধীরে কালো হচ্ছে তার চোখের মণির চারপাশ। চিকিৎসকরা জানান, তার হাতের রিউমাটয়েট আর্থাইসিস ভাস্যকুলাইটিস রোগটি চোখে বিস্তৃত হচ্ছে। এনিয়ে এখন দুশ্চিন্তায় রয়েছেন নুরুল আমিন।
নুরুল আমিন জাগো নিউজকে জানান, আঙুলগুলোতে পচন ধরছে। চিকিৎসকরা ইতোমধ্যে জানিয়েছেন বিষয়টি অত্যন্ত জটিল হওয়ায় কয়েকটি ধাপে চিকিৎসা করার পর সিদ্ধান্ত নেবেন কবে আঙুলগুলো কাটবেন। মাসে দুবার ঢাকায় যেতে হচ্ছে চিকিৎসা নিতে। প্রতিবারই ঢাকায় গেলে অনেক টাকা ব্যয় হচ্ছে। এরই মাঝে এই রোগ চোখে বিস্তৃত হওয়ায় দুশ্চিন্তায় আছি। চিকিৎসক চশমা দেওয়ায় মোটামুটি ভালো দেখি, চশমা খুলে ফেললে ঝাপসা দেখি।
তিনি বলেন, শুধু আঙুলের চিকিৎসা চালিয়ে যেতে ৬ লাখ টাকা প্রয়োজন। দীর্ঘদিন যাবত কাজ-কর্ম করতে পারছি না। তিন সন্তান, স্ত্রী ও নিজের খাবার জুটানোই কষ্টসাধ্য।
তিনি বলেন, আগে আমার বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশের পর নজরে আসে সদর উপজেলা প্রশাসনের। এরপর জেলা প্রশাসন থেকে কিছু অর্থ সহায়তা করেছে। সাধারণ মানুষও আমাকে অর্থ সহায়তা করছে। চিকিৎসা চালিয়ে যেতে তাই সকল স্তরের মানুষের কাছে সহায়তা কামনা করেন তিনি।
এ বিষয়ে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ফাইজুর রহমান ফয়েজ জাগো নিউজকে জানান, রিউমাটয়েট আর্থাইসিস ভাস্যকুলাইটিস বিভিন্ন প্রকার আছে। এটি শরীরের বিভিন্ন স্থানে সংক্রমিত হতে পারে৷ নুরুল আমিনের হাত থেকে এই রোগটি চোখে ছড়িয়েছে। যদি সঠিক চিকিৎসা না দেওয়া হয় তাহলে শরীরের অন্যান্য অংশেও এটি ছড়িয়ে ক্ষতি করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, খুবই কম রোগীর এই রোগটি হয়। এরফলে রক্তনালিতে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায়। রগগুলি একেবারে শুকিয়ে যায়। এই রোগীর চিকিৎসক ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নেই।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, সম্প্রতি জেলা প্রশাসক মহোদয় নুরুল আমিনের চিকিৎসার জন্য ২০ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা করেছেন। উপজেলা প্রশাসন থেকে মাঝে তাকে খাদ্য সহায়তা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক তার চিকিৎসার খবরাখবর রাখছেন।সৌজন্যে-জাগো নিউজ
Discussion about this post