হার্টবিট ডেস্ক
মা শব্দটার মাঝে আছে পৃথিবীর সব ভালোবাসা। সন্তানের মা হওয়ার যে আনন্দ, তা মনে হয় না অন্য কোথাও আছে। মা হওয়া এক স্বর্গীয় অনুভূতি।
তবে সেই সন্তান জন্ম দেওয়ার বা মা হওয়ার রয়েছে অনেকগুলো উপায়।
ভেজাইনাল বা যোনি ডেলিভারি
সন্তান জন্ম দেওয়ার সবচেয়ে আদিম উপায় হচ্ছে ‘ভেজাইনাল ডেলিভারি’। এই উপায়ে সন্তান ‘বার্থ ক্যানেলের’ মাধ্যমে, মানে যোনিনালী দিয়ে মাতৃগর্ভ থেকে বেরিয়ে আসে। অবশ্য ঠিক কখন প্রসব হবে, তা সঠিকভাবে জানা যায় না। অধিকাংশ নারী এই প্রক্রিয়াতেই গর্ভধারণের ৩৮-৪১ সপ্তাহের মধ্যে সন্তান প্রসব করেন। এই পদ্ধতিতে জন্ম নেওয়া শিশুর রোগবালাই সংক্রমণের প্রবণতা কম থাকে। তবে সন্তান প্রসবের সময় মায়ের প্রচণ্ড ব্যথা হয়।
সিজারিয়ান সেকশন বা সি-সেকশন
সব শিশুর জন্ম ভেজাইনাল বার্থের মাধ্যমে হয় না। জন্মদানের সময় জটিলতা সৃষ্টি হলে ‘সি-সেকশন’, অর্থাৎ নারীর তলপেট এবং জরায়ুর চামড়া কেটে বাচ্চা বের করে আনতে হয়। কেউ কেউ প্রসব বেদনা এড়াতে এবং যোনির প্রসারতা ঠেকাতেও সিজারিয়ান অপশন বেছে নেন। আবার অনেকে বিশ্বাস করেন, যোনিপথে সন্তান জন্ম দিলে পরবর্তীতে যৌনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পরতে পারে।
সিজারিয়ানের পর ভেজাইনাল বার্থ
একটা সময় মনে করা হতো, একবার সি-সেকশনের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিলে সেই নারী পরবর্তীতে আর প্রাকৃতিক উপায়ে, অর্থাৎ যোনিনালীর মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিতে পারবেন না। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এই ধারণায় পরিবর্তন এসেছে। সিজারিয়ানের পর ভেজাইনাল বার্থ অবশ্যই সম্ভব। আর সিজারিয়ানে বাচ্চা জন্মদানের পর কোনো কোনো ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদে নারীর নানারকম শারীরিক জটিলতা সৃষ্টির নজিরও রয়েছে।
ভ্যাকুয়াম এক্সট্রাকশন
ভেজাইনাল ডেলিভারির সময় কোনো কারণে নবজাতক বার্থ ক্যানেলে আটকে গেলে ভ্যাকুয়াম পাম্পের মাধ্যমে তাকে বের করে আনা হয়। এই পদ্ধতিতে একটি নরম, অনমনীয় কাপ শিশুর মাথায় আটকে দেওয়া হয়। এরপর ভ্যাকুয়ামের মাধ্যমে নবজাতককে টেনে বের করে আনা হয়।
ফোরক্যাপস ডেলিভারি
এটাও ভেজাইনাল বা নর্মাল ডেলিভারির সময় জটিলতা তৈরি হলে ব্যবহার করা হয়। এই উপায়ে বড় দু’টি চামচের মতো দেখতে ফোরক্যাপস শিশুর মাথা আটকে বার্থ ক্যানেল থেকে তাকে সহজে বের করে আনা হয়। সাধারণত গর্ভধারিণী প্রসবের সময় পর্যাপ্ত চাপ দিতে না পারলে এই পন্থা অবলম্বন করা হয়।
ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ)
অনেক নারীর জন্য গর্ভধারণই জটিল। এক্ষেত্রে সন্তান জন্ম দেওয়ার একটি আধুনিক পন্থা হচ্ছে আইভিএফ। এ পন্থায় চিকিৎসক নারীর ডিম্বাণু সূচের মাধ্যমে বের করে আনেন এবং ল্যাবরেটরিতে তা শুক্রাণুর সঙ্গে মেলান। পরে ভ্রুণ সৃষ্টির করে সেটা ক্যাথিটার ব্যবহার করে নারীর জরায়ুতে প্রবেশ করানো হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এরপর ভ্রুণটি নিজে থেকেই মাতৃগর্ভে প্রতিস্থাপিত হয়। দাতার ডিম্বাণু ও শুত্রাণুর মাধ্যমেও এভাবে মা হওয়া যায়।
সারোগেসি
যেসব নারী একেবারেই সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম বা সন্তান জন্ম দেওয়া যাদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, তাদের ক্ষেত্রে মা হওয়ার একটি উপায় হচ্ছে সারোগেসি বা অন্য নারীর গর্ভ ভাড়া নেওয়া। এক্ষেত্রে আইভিএফ পদ্ধতিতে গর্ভ ভাড়া দেওয়া নারীর জরায়ুতে ভ্রুণ বা শুক্রাণু প্রবেশ করানো হয়।
Discussion about this post