হার্টবিট ডেস্ক
কিটোজেনিক ডায়েট মৃগীরোগের চিকিৎসায় নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, কিটোজেনিক ডায়েট হলো কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের পরিবর্তে প্রোটিন ও ফ্যাট জাতীয় খাবারে গুরুত্ব দেওয়া। তবে এই বিষয়ে আরো গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
রোববার (২৯ মে) হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত শিশু নিউরোলজি বিভাগের উদ্যোগে ‘কিটোজেনিক ডায়েট ইন পেডিয়াট্রিক এপিলেপসি: কারেন্ট অ্যান্ড ফিউচার পারসপেক্টিভ ইন বিএসএমএমইউ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএসএমএমইউর সার্বিক উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব ধরণের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন চিকিৎসা বিজ্ঞানের নতুন নতুন ইউনিট, ডিভিশন চালু করেছে এবং এই ধারা অব্যাহত রয়েছে। গবেষণা কার্যক্রম পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবা দিতে যন্ত্রপাতিসহ যা যা প্রয়োজন হবে তার সবই নিশ্চিত করা হবে।
শিশু নিউরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. গোপেন কুমার কুন্ডুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সম্মানিত উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, উপ-উপাচার্য (একাডেমি) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, শিশু অনুষদের ডিন ও ইপনার ডাইরেক্টর অধ্যাপক ডা. শাহীন আকতার, নিউরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবু নাসার রিজভী। গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. কানিজ ফাতেমা, কনসালটেন্ট ডা. সানজিদা আহমেদ।
অনুষ্ঠানে নবজাতক বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. সঞ্জয় কুমার দে, শিশু কিডনি বিভাগের অধ্যাপক ডা. রণজিত রঞ্জন রায়, শিশু হেমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. চৌধুরী ইয়াকুব জামাল, সহযোগী অধ্যাপক ডা. সৈয়দা তাবসসুম আলম, সহযোগী অধ্যাপক ডা. সুভাষ কান্তি দে, সহযোগী অধ্যাপক ডা. আহসান হাবীব হেলাল, সহযোগী অধ্যাপক ডা. শহীদুল্লাহ সবুজ, সহযোগী অধ্যাপক ডা. মানিক কুমার তালুকদার প্রমুখসহ শিশু অনুষদভুক্ত বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক এবং নিউরোলজি, শিশু নিউরোলজি বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে শিশু নিউরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. গোপেন কুমার কুন্ডু বলেন, সারা বিশ্বে প্রায় পাঁচ কোটি লোক মৃগী রোগে আক্রান্ত। বাংলাদেশে এই সংখ্যা প্রায় ২০ লক্ষ। বিশ্বের উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশে মৃগীরোগের আধিক্য রয়েছে। শিশুদের মধ্যে মৃগী রোগীর হার বড়দের তুলনায় বেশি পরিলক্ষিত হয়।
তিনি বলেন, ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মৃগীরোগ বিভিন্ন ওষুধের মাধ্যমে সহজে নিরাময়যোগ্য বা নিয়ন্ত্রণযোগ্য। কিন্তু ২০ থেকে ৩০ শতাংশ মৃগী রোগ আছে যা শুধুমাত্র ওষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ যোগ্য নয়। যাকে অনিয়ন্ত্রিত মৃগীরোগ বা রিফ্রাক্টরি এপিলেপসি বা ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স এপিলেপসি বলা হয়। একজন শিশু নিউরোলজিস্টের জন্য এই ধরনের মৃগীরোগ নিয়ন্ত্রণ করা একটি বড় চ্যালেঞ্জও।
ডা. গোপেন কুমার বলেন, কিটোজেনিক ডায়েট এই ধরণের অনিয়ন্ত্রিত মৃগীরোগের ক্ষেত্রে একটি বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি। এটি কম শর্করা এবং উচ্চমাত্রার চর্বির সমন্বয়ে একটি খাবার পদ্ধতি। এই খাবার পদ্ধতি মৃগীরোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
জানা গেছে, সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু নিউরোলজি বিভাগ এবং ইপনাতে অনিয়ন্ত্রিত মৃগীরোগে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে কিটোজেনিক ডায়েট চিকিৎসা পদ্ধতি শুরু করেছে। যদিও এখনও এই বিষয় নিয়ে অনেক গবেষণা করার সুযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র রেসিডেন্টরা এই বিষয়ে গবেষণা শুরু করেছেন। এই কিটোজেনিক ডায়েট চিকিৎসা পদ্ধতি শুরু হলে, খিঁচুনি বা মৃগী রোগের রোগের চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা অনেকাংশেই কমে যাবে।
Discussion about this post