হার্টবিট ডেস্ক
করোনা মহামারি এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি। এরই মধ্যে হাজির হয়েছে আরেক ভাইরাস- মাঙ্কিপক্স। নতুন এই ভাইরাসটি মানুষকে উদ্বিগ্ন করেছে।
মাঙ্কিপক্স এক ধরনের ভাইরাল ইনফেকশন, যে ভাইরাস পশ্চিম আফ্রিকা ও মধ্য আফ্রিকার জঙ্গলের ছোট আকারের স্তন্যপায়ী প্রাণী ও ইঁদুর জাতীয় প্রাণীর মধ্যে থাকে।
গত ৭ মে যুক্তরাজ্যে নাইজেরিয়া ফেরত এক ব্যক্তির দেহে মাঙ্কিপক্স ভাইরাস শনাক্ত হয়। ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে।
অল্প সময়ের মধ্যে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে মাঙ্কিপক্সের বিস্তার বিজ্ঞানী, সরকার এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের ভাবনায় ফেলেছে। বড় আকারে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও করছেন অনেকে। তবে বিজ্ঞানীরা এ কথাও বলছেন যে, আমাদের এখনই খুব বেশি চিন্তা করার দরকার নেই।
এখানে তার কিছু কারণ রয়েছে
মাঙ্কিপক্স একটি পরিচিত ভাইরাস
মাঙ্কিপক্স ভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় ১৯৫৮ সালে। তখন এটা বানরের শরীরে পাওয়া গিয়েছিল। ১৯৭০ সালে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোতে প্রথম মানবশরীরে এ ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের দ্রুত মিউটেশন হয় না
মাঙ্কিপক্স ভাইরাস তুলনামূলক বড় ডিএনএ ভাইরাস। করোনাভাইরাস বা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের মতো আরএনএ ভাইরাসের তুলনায়, এটা ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয় এবং এর মিউটেশন সনাক্তের ভালো উপায় আছে। যে ভাইরাসের মিউটেশন দ্রুত হয় মানুষের মধ্যে তার সংক্রমণের হার উচ্চ হয়। এর মানে এটাও দাঁড়ায় যে, এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে গেলে, রোগীর দীর্ঘমেয়াদী ভাইরাসের প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে। এখন মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের দুটি জিনগত শাখার কথা জানা যাচ্ছে। একটি পশ্চিম আফ্রিকান শাখা এবং অন্যটি মধ্য আফ্রিকান শাখা।
অনেকেরই এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম
মাঙ্কিপক্স, গুটিবসন্ত এবং ভ্যাক্সিনিয়া এগুলো সবই একই গ্রুপের ভাইরাস। সফলবাবে গুটিবসন্তের টিকাদানের ফলে ১৯৮০ সালে গুটিবসন্ত নির্মূল হয়েছে। গুটিবসন্তের টিকাও মাঙ্কিপক্সের বিরুদ্ধে প্রায় ৮৫ শতাংশ সুরক্ষা দেয়। যাদের মাঙ্কপক্সের টিকা দেওয়া আছে তাদের বয়স এখন ৪০ বছরের বেশি। তাদের মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম। ১৯৮০ সালের পর থেকে ধীরে ধীরে গুটিবসন্তের গণ টিকা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
মাঙ্কিপক্স কিভাবে ছড়ায় সেটা আমাদের জানা
বিশেষজ্ঞদের মতে, মাঙ্কিপক্স ভাইরাস খুব সহজে মানুষের মধ্যে ছড়ায় না। সংক্রমিত প্রাণীর সরাসরি সংস্পর্শে এলে বা সংক্রমিত প্রাণীর মাংস ভালোভাবে সেদ্ধ না করে খাওয়ার কারণে মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। আক্রান্ত প্রাণীর আঁচড় থেকেও মানুষ সংক্রমিত হতে পারে। যেহেতু সংক্রমণের পথ আমাদের জানা, তাই এটা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব।
মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় কম
এ ভাইরাস সহজে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। গণ সংক্রমণের ঝুঁকিও খুব কম। এর আগে আফ্রিকার বাইরে এ ভাইরাস দেখাও যায়নি। ইউরোপে সংক্রমিতদের বেশিরভাই তরুণ। তাদের মধ্যে বেশ ক’জন সমকামীও ছিলেন। যৌনসঙ্গমের মাধ্যমে সংক্রমণের সম্ভাবনা বেড়ে যায় কারণ যৌনতার সময় ত্বকের সাথে ত্বকের ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়।
মাঙ্কিপক্সের উপসর্গ হালকা
মাঙ্কিপক্সে তেমন গুরুতর উপসর্গ খুব একটা দেখা যায় না। এই রোগের প্রাথমিক উপসর্গ হচ্ছে- জ্বর, মাথাব্যথা, হাড়ের জয়েন্ট এবং মাংসপেশিতে ব্যথা এবং দেহে অবসাদ। জ্বর শুরু হওয়ার পর দেহে গুটি দেখা দেয়। এসব গুটি শুরুতে দেখা দেয় মুখে। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে হাত এবং পায়ের পাতাসহ দেহের সব জায়গায়। এই গুটির জন্য রোগী দেহে খুব চুলকানি হয়। পরে গুটি থেকে ক্ষত দেখা দেয়। গুটি বসন্তের মতোই রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠলেও দেহে এসব ক্ষত চিহ্ন রয়ে যায়।
এ রোগে বিরল কিছু ক্ষেত্রেই কেবল মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে। পশ্চিম আফ্রিকার একটি ধরনে মৃত্যুহার ১ শতাংশ। এটি যুক্তরাজ্যে ছড়িয়েছে। তবে কঙ্গো অঞ্চলের একটি ধরনের মৃত্যুহার ১০ শতাংশ।
মাঙ্কিপক্স শনাক্ত করা সহজ
করোনা ভাইরাসের তুলনায় মাঙ্কিপক্স ভাইরাস শনাক্ত করা সহজ। কারণ করোনা ভাইরান উপসর্গহীনভাবে সংক্রমিত করে। অন্যদিকে মাঙ্কিপক্স ভাইরাসে আক্রান্ত হলে এর লক্ষণগুলো স্পষ্ট হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে দেহে গুটি দেখা দেয়। এসব গুটি শুরুতে দেখা দেয় মুখে। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে হাত এবং পায়ের পাতাসহ দেহের সব জায়গায়।
ভ্যাকসিন ভালো কাজ করে
গুটিবসন্তের প্রথম প্রজন্মের ভ্যাকসিন আর নেই, তবে ভ্যাক্সিনিয়া ভাইরাসের ওপর ভিত্তি করে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় প্রজন্মের ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়েছে; যা গুটিবসন্ত এবং মাঙ্কিপক্স দুটির বিরুদ্ধেই কার্যকর।
অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ ভালো কাজ করে
বিভিন্ন অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের বিরুদ্ধে ভালো কাজ করে বলে দেখা গেছে।
এখনও সতর্ক থাকা দরকার
এই সমস্ত ইতিবাচক খবর সত্ত্বেও, আমাদের এখনও সতর্ক এবং সজাগ থাকতে হবে। কারণ মাঙ্কিপক্স সম্পর্কে এখনও অনেক কিছু জানা যায়নি। মাঙ্কিপক্স কি অতীতের তুলনায় আরও সংক্রামক হয়ে উঠেছে বলেই হঠাৎ এর সংক্রমণ বেড়েছে? এমন নানা প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা।
এ দফায় সংক্রমণের যে ঘটনাগুলো ঘটছে এর উৎস কি একই না কি একাধিক উৎস থেকে এসব সংক্রমণ হচ্ছে- এসব বিষয় জানার চেষ্টা চলছে।
Discussion about this post