ডা. জি এম জাহাঙ্গীর হোসেন
কাঁধ শরীরের তিনটি হাড়, চারটি জোড়া ও ত্রিশটি পেশির সমন্বয়ে তৈরি। শরীরের জোড়াগুলোর মধ্যে কাঁধের জোড়া বেশি নড়াচড়া করে। দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা, দুর্ঘটনা ইত্যাদি কারণে আঘাত পাওয়া ছাড়াও কিছু রোগের কারণেও কাঁধ জখম বা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে থাকে। আবার পেশাগত কারণ, যেমন ছবি আঁকা, গ্লাস পরিষ্কার করা, ওজন তোলা, বোর্ডে লেখা, দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারে কাজ করা ইত্যাদি কাঁধকে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকে। এ ছাড়া বয়স্ক ব্যক্তিদের ব্যবহারজনিত হাড় ক্ষয় হতে পারে।
প্রাথমিক করণীয়
- হঠাৎ আঘাত পেলে জোড়াকে পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে। তাতে কোষের ক্ষতি ও ব্যথা কম হবে।
- বরফের টুকরো বা ঠান্ডা পানি কাপড়ে বা প্লাস্টিকের ব্যাগে নিয়ে প্রতি ঘণ্টায় ১০ মিনিট বা ২ ঘণ্টা পরপর ২০ মিনিট করে লাগালে ব্যথা ও ফোলা কমে আসবে। এই প্রক্রিয়া আঘাতের পর ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত চলবে।
- জোড়ায় ইলাসটো কমপ্রেশন, আর্ম সিলিং বা স্পিলিন্ট ব্যবহারে ফোলা ও ব্যথা কমে আসে।
- চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যথানাশক ওষুধ খেতে হবে।
- ব্যথা ও ফোলা সেরে উঠলে জোড়া নমনীয় ও পেশি শক্তিশালী করার ব্যায়াম করতে হবে।
- জোড়া স্থানচ্যুত হলে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
চিকিৎসা
অল্প আঘাতপ্রাপ্ত রোগীরা প্রাথমিক চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে যান। তবে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির ক্ষেত্রে রোগের ইতিহাস বুঝে এবং জোড়ার বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে ক্ষতি ও তার তীব্রতা নির্ণয় করতে হবে। কখনো কখনো এক্স-রে ও এমআরআইর সাহায্য নিতে হবে। প্রয়োজন হলে লিগামেন্ট, জোড়ার আবরণ ও পেশির ক্ষতি, জোড়ার ডিসপ্লেসমেন্ট, আর্থ্রাইটিস ও জোড়ায় অতিরিক্ত হাড়ের চিকিৎসা নিতে সক্ষম বা অভিজ্ঞ আর্থ্রোস্কোপিক চিকিৎসক দেখাতে হবে।
- লিগামেন্ট ও জোড়ার আবরণ এনকোর সুসার দিয়ে সেলাই করে, হাড়ের সঙ্গে সংযুক্ত করে জোড়া ছুটে যাওয়া রোধ করা হয়।
- পেশির আঘাতের আকৃতি ও অবস্থান নির্ণয় করে এনকোর সুসার দিয়ে সেলাই করে হাড়ের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয়।
- আর্থ্রাইটিসের কারণে অতিরিক্ত হাড় সেভিং বা বের করা হয়।
- বার্সাইটিস ও আর্থ্রাইটিস হয়ে জয়েন্টে জায়গা কমে গেলে বিসংকোচন করা হয়।
- কখনো কখনো বড় ধরনের আঘাতের ক্ষেত্রে পেশি প্রতিস্থাপন করা হয়।
হাড় ও তরুণাস্থি ক্ষয় এবং অস্টিওআর্থ্রাইটিস হয়ে জয়েন্ট নষ্ট হলে তা প্রতিস্থাপন করতে হবে। প্রাথমিক বা শল্যচিকিৎসার পর নিয়মিত ও উপযুক্ত পরিচর্যা করে জোড়ার স্বাভাবিক অবস্থা দ্রুত ফিরিয়ে আনতে হবে।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগ, হাড় ও জোড়া বিশেষজ্ঞ এবং আর্থ্রোস্কোপিক সার্জন, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর), ঢাকা
Discussion about this post