হার্টবিট ডেস্ক
শুধু দূষণজনিত কারণে ২০১৯ সালে ৯০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যা ওই বছর বিশ্বের মোট মৃত্যুর ছয়ভাগের একভাগ। দূষণজনিত ৯০ লাখ মৃত্যুর প্রায় ৭৫ শতাংশেরই কারণ ছিল বায়ু দূষণ। দূষণের কারণে ২০১৫ সালেও মৃত্যুর সংখ্যা ছিল একই পরিমাণ।
মঙ্গলবার (১৭ মে) ল্যানসেটের ‘কমিশন অন পলিউশন অ্যান্ড হেলথ’ রিপোর্টের নতুন সংস্করণে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পারিপার্শ্বিক বায়ু দূষণের কারণে ২০১৯ সালে ৪৫ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যা ২০১৫ সালে ছিল ৪২ লাখ এবং ২০০০ সালে ২৯ লাখ। বিপজ্জনক রাসায়নিক দূষণের কারণে ২০০০ সালে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৯ লাখ, সেই সংখ্যা ২০১৫ সালে বৃদ্ধি পেয়ে ১৭ লাখ এবং ২০১৯ সালে ১৮ লাখে এসে দাঁড়ায়। এই নিত্যনতুন ধরনের দূষণে গত দুই দশকে ৬৬ শতাংশ মৃত্যু বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০০ সালে এসব দূষণে আনুমানিক ৩৮ লাখ মৃত্যু হয়, যা ২০১৯ সালে ৬৩ লাখে এসে ঠেকেছে।
বিশ্বে রোগব্যাধি বিস্তার এবং অকালে মৃত্যুর সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হিসেবে দূষণকে চিহ্নিত করে প্রতিবেদনে বলা হয়, বছরে ১৮ লাখেরও বেশি মানুষ মারা যান সিসা দূষণসহ বিভিন্ন বিষাক্ত রাসায়নিক দূষণের শিকার হয়ে। ২০০০ সালের পর থেকে রাসায়নিক দূষণ বৃদ্ধি পেয়েছে ৬৬ শতাংশ। পানি দূষণের কারণে ১৩ লাখ ৬০০ হাজার, সিসা দূষণে ৯ লাখ অকাল মৃত্যু এবং পেশাগত বিষক্রিয়ায় ৮ লাখ ৭০ হাজার প্রাণ অকালে ঝরে গেছে।
২০০০ সাল থেকে প্রথাগত দূষণ (ঘরের ভেতরে জ্বালানি ব্যবহারের মাধ্যমে সৃষ্ট বায়ু দূষণ এবং অনিরাপদ পানি) থেকে মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি কমেছে আফ্রিকায়। এর কারণ হিসেবে উন্নত স্যানিটেশন ও পানি সরবরাহ, অ্যান্টিবায়োটিক, চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতিকে ধরা হচ্ছে।
প্রতিবেদনটির প্রধান লেখক রিচার্ড ফুলার বলেন, জনস্বাস্থ্যের ওপর দূষণ ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলে। আর এই মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাবের বোঝা নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলো বয়ে বেড়াচ্ছে। এতসব মারাত্মক স্বাস্থ্যগত, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক মহলের দূষণ নিরসনের বিষয়ে সেরকম কোনো নজর নেই।
তিনি বলেন, ২০১৫ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত দূষণ প্রতিরোধ করে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় অর্থ বরাদ্দ ও নজরদারি খুব সামান্যই বেড়েছে। দূষণের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে শঙ্কা বৃদ্ধির বিষয় নানান গবেষণায় উঠে আসা সত্ত্বেও তা নিরসনে যথেষ্ট উদ্যোগের ঘাটতি রয়েছে।
গ্লোবাল পাবলিক হেলথ প্রোগ্রাম অ্যান্ড গ্লোবাল পলিউশন অবজারভেটরি- বোস্টন কলেজের পরিচালক ও প্রতিবেদনটির সহ-লেখক অধ্যাপক ফিলিপ ল্যান্ডরিগান বলেন, মানব ও জীবজগতের স্বাস্থ্যের ওপর বিদ্যমান সবচেয়ে বড় হুমকি হচ্ছে দূষণ, যা টেকসই আধুনিক সমাজকে বিপন্ন করে তুলছে। দূষণ প্রতিরোধ করা গেলে জলবায়ু পরিবর্তন বিলম্বিত করা যেতে পারে। যা জীবজগতের জন্য দ্বিগুণ উপকারিতা বয়ে আনবে।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারী লেখকরা ল্যানসেট কমিশন অন পলিউশন অ্যান্ড হেলখের ওপর ভিত্তি করে পরিবেশ দূষণরোধে ৮টি পরামর্শ দিয়েছেন। সেগুলো হলো- আইপিসিসির মত দূষণের জন্য একটি স্বাধীন, আন্তঃসরকারি বৈজ্ঞানিক/নীতিনির্ধারণী কমিটি গঠন করা। একইসঙ্গে দূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকার, স্বাধীনখাত এবং দাতাদের কাছ থেকে অর্থসাহায্য সংগ্রহ করা। দূষণ পর্যবেক্ষণ ও তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতি উন্নত করা। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোরও বিজ্ঞান এবং নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, দূষণের কারণে অস্বাভাবিক মাত্রার মৃত্যু আমাদের আর্থিক ক্ষতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ২০১৯ সালে ৪ দশমিক ৬ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়েছে। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ৯২ শতাংশ দূষণজনিত মৃত্যু এবং দূষণের কারণে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলো।
Discussion about this post