উম্মে শায়লা রুমকী
‘আপা, কয়েক মাস ধরে কাঁধের এই জয়েন্টে ব্যথা। কিছুদিন হলো হাত ওপরে তুলতে পারি না, চুল খোঁপা করতে পারি না।’ কথাগুলো বলছিলেন ৪৫ বছরের জোবেদা খাতুন। এ রকম অনেকেই কাঁধের ব্যথা অথবা কাঁধের জয়েন্ট স্টিফ বা জড়তা বোধ করেন কোনো কারণ ছাড়াই। তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করি, ‘ওটা অসুখ। জ্বরের মতো, মাথাব্যথার মতোই স্বাভাবিক ওটা। চিকিৎসায় ঠিক হয়।’
পরীক্ষা করলে দেখা যায় তাঁদের ফ্রোজেন শোল্ডার বা কাঁধের জয়েন্ট শক্ত হয়েছে। ফ্রোজেন শোল্ডার নামটি শুনেই বোঝা যায় শোল্ডার বা কাঁধের জয়েন্ট শক্ত বা জমাট বেঁধেছে। এটি হলে সাধারণত কাঁধের জয়েন্টে তীব্র ব্যথা করে, হাত নাড়াচাড়া করতে কষ্ট হয়, বিশেষ করে হাত ওপরে ওঠানো যায় না। মেয়েদের ক্ষেত্রে চুলে খোঁপা করা বেশ কষ্টকর এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে পেছনের পকেটে মানিব্যাগ রাখা, পিঠ চুলকানো কঠিন হয়।
কেন হয়
- কোনো আঘাত বা অপারেশনের পর হাত নড়াচড়া না করলে।
- শোল্ডার জয়েন্ট অতিরিক্ত ব্যবহার হলে।
- ডায়াবেটিস থাকলে।
- স্ট্রোক হলে।
- ইউরিক অ্যাসিড বেশি থাকলে।
- কোনো উপযুক্ত কারণ ছাড়াও ফ্রোজেন শোল্ডার হয়ে থাকে। এটি কেন হয় তা এখনো সঠিকভাবে জানা যায়নি।
সঠিক চিকিৎসা না নিলে এ সমস্যা দুই থেকে তিন বছর পর্যন্ত থাকতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, ৯০ শতাংশ ফ্রোজেন শোল্ডার হালকা ব্যথার ওষুধ এবং ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। বেশির ভাগ ফ্রোজেন শোল্ডারের রোগী এক মাসেই ভালো হয়ে যায়।
কারও কারও ক্ষেত্রে বেশি সময় লেগে যায়।
যেসব রোগীর ডায়াবেটিস আছে তাঁদের ক্ষেত্রে ফ্রোজেন শোল্ডার খুব স্বাভাবিক। তাই সেসব রোগীর নিয়মিত হাতের ব্যায়াম করা দরকার। বিশেষ করে, যখন হাঁটবেন, অবশ্যই হাত সামনে পেছনে ঝুলিয়ে হাঁটার চেষ্টা করবেন। ডায়াবেটিস সব সময় নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
চিকিৎসা
একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক মূলত প্রথমে রোগীকে অ্যাসেসমেন্ট করে সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকেন।
সাধারণ কিছু ব্যায়াম
- হাত পেন্ডুলাম মুভমেন্ট করুন (নৌকা বাওয়ার মতো)।
- ভালো হাত দিয়ে ব্যথা হাতকে যথাসম্ভব ওপরে তুলুন। হাত মাথার পেছনে নেওয়ার চেষ্টা করুন।
- হাত দিয়ে বৃত্ত তৈরি করুন।
- দেয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে ব্যথা হাতকে দেয়াল ঘষে ওপরে ওঠানো ও নামানোর সময় বৃত্ত তৈরি করে নামান।
- টাওয়েল দিয়ে পেছনের পিঠ পরিষ্কার করার মতো করে ব্যায়াম করুন।
পরামর্শ
- প্রতিটি ব্যায়াম ১০ থেকে ২০ বার করে করুন, দিনে অন্তত একবার।
- প্রতিবার ব্যায়াম শুরু করার আগে ১৫ মিনিট গরম পানির সেঁক দিন।
- যদি ব্যথা বেশি হয় তবে ব্যায়াম না করে প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে ব্যথা কমিয়ে নিতে হবে।
- ব্যথা কমে গেলে ব্যায়াম করে হাতের মুভমেন্ট বা নাড়াচাড়া করে কাঁধের জয়েন্ট সচল রাখতে হবে।
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
লেখক: ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্ট, ফিজিক্যাল থেরাপি অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার (পিটিআরসি)
Discussion about this post