মাহমুদা আক্তার রোজী
হঠাৎ করে কোনো এক সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলেন আপনার মুখ একদিকে বেঁকে গেছে। কুলি করতে গেলে পানি ঠোঁট বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে। চোখ বন্ধ করতে পারছেন না। ফেসিয়াল নার্ভ আংশিক বা সম্পূর্ণ প্যারালাইজড হয়ে গেলে এই ফেসিয়াল প্যারালাইসিস বা বেলস পলসি হয়। এতে মুখের পেশিগুলো দুর্বল হয়ে যায় বা এক পাশ প্যারালাইজড হয়ে যায়।
কাদের বেশি হয়
এটি যেকোনো বয়সের নারী ও পুরুষের হতে পারে। তবে পুরুষের তুলনায় নারীদের এ রোগটি বেশি দেখা যায়। এ ছাড়া গর্ভাবস্থায়, ফুসফুসের সংক্রমণে, ডায়াবেটিস ও পরিবারিক ইতিহাস থাকলে ফেসিয়াল পলসি হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
কেন হয়
- ভাইরাস সংক্রমণের কারণে
- মধ্যকর্ণে সংক্রমণের কারণে
- ঠান্ডাজনিত কারণে
- আঘাতজনিত কারণে
- মস্তিষ্কের স্ট্রোকজনিত কারণে
- ফেসিয়াল টিউমারের কারণে
- কানের অপারেশন-পরবর্তী ফেসিয়াল নার্ভ ইনজুরি ইত্যাদি কারণে এ রোগ হতে পারে।
লক্ষণ
- রোগীর মুখ সাধারণত একদিকে বেঁকে যায়। তবে শতকরা এক ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে মুখের দুই পাশ আক্রান্ত হয়ে থাকে।
- মুখের আক্রান্ত পাশের চোখ বন্ধ হয় না। চোখ দিয়ে পানি পড়ে। অনেক সময় চোখ খুলতে কষ্ট হয়।
- চোখ জ্বালা-পোড়া করতে পারে। অনেক সময় ‘ড্রাই আই’ সমস্যা দেখা দেয়।
- কুলি করতে গেলে পানি গড়িয়ে পড়ে যায়। গালের মাংসপেশি ঝুলে যেতে পারে।
- খাবার চিবোতে এবং গিলতে কষ্ট হয়।
- মুখের হাসি বেঁকে যায়।
- লালা ঝরতে থাকে।
- জিভ শুকিয়ে যায়।
- জিভের সামনের অংশের স্বাদের অনুভূতি কমে যেতে পারে।
- রোগী কপাল ভাঁজ করতে পারে না।
- মুখের আক্রান্ত পাশে ব্যথা হয়; বিশেষ করে চোয়াল ও মাথায় ব্যথা হয়ে থাকে।
অনেক সময় কথা বলতে কষ্ট হয়।
চিকিৎসা
কোন কারণে ফেসিয়াল প্যারালাইসিস হয়েছে, তার ওপর নির্ভর করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অনেক সময় কিছু প্যাথলজিক্যাল ও রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষা করার প্রয়োজন পড়ে। তবে সব ক্ষেত্রে মূল চিকিৎসা হলো ফিজিওথেরাপি।
সাধারণত এই রোগের জন্য
- স্টেরয়েড-জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়।
- ড্রাই আই প্রতিরোধে আই ড্রপ দেওয়া হয়।
- চোখ একেবারে বন্ধ না হলে ঘুমানোর সময় সার্জিক্যাল টেপ দিয়ে চোখ বন্ধ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
- মাসল এক্সারসাইজ, স্পিচ রি-এডুকেশন, বেলুনিং এক্সারসাইজ, ইলেকট্রো থেরাপি দেওয়া হয়।
নার্ভ কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার ওপর নির্ভর করে ফেসিয়াল পলসি সাধারণত দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে ভালো হতে শুরু করে। যদি নার্ভ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে, তাহলে রোগী সুস্থ হতে তিন থেকে ছয় মাস সময় লেগে যায়।
ঘরোয়া চিকিৎসা
- চোখের জ্বালা-পোড়া ও ব্যথা কমাতে নরম তোয়ালে গরম পানিতে ভিজিয়ে চোখে সেঁক দেওয়া যায়।
- ফেসিয়াল ম্যাসাজ করলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে।
- একটা গ্লাসে অল্প পানি নিয়ে নলের মাধ্যমে বুদবুদ তুলুন। এতে ঠোঁটের চারপাশের মাংসপেশি শক্তিশালী হবে।
- কথা বলুন। তাতে কথা বলার জড়তা কমে আসবে।
- নির্ভার থাকতে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম বা যোগব্যায়াম করুন।
- নিয়মিত ফিজিওথেরাপিস্টের শেখানো ব্যায়াম করুন।
- নিয়মিত ৮ ঘণ্টার ঘুম, স্বাস্থ্যকর খাবার ও প্রচুর পানি পান করুন। এগুলো রোগ
- থেকে আরোগ্য লাভে সহায়তা করে।
লেখক: ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্ট অ্যান্ড জেরোন্টলজিস্ট, এক্সট্রা মাইল এইজ কেয়ার
Discussion about this post