হার্টবিট ডেস্ক
চিকিৎসক হবেন স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের বেতনভুক্ত কর্মচারী। তারা কোনোভাবেই রোগীদের কাছ থেকে সরাসরি টাকা নিতে পারবেন না। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানের মোট রোগীর সংখ্যার ওপর চিকিৎসকের মাসিক আয়ও সম্পর্কযুক্ত হবে না। একই সঙ্গে চিকিৎসকের সব আয় প্রদর্শিত হতে হবে ব্যক্তির ‘ট্যাক্স ফাইলে’।
গত ১ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে স্বাস্থ্য খাতের সংস্কারবিষয়ক প্রতিবেদনে উল্লিখিত এসব সুপারিশ বাস্তবায়নের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সেবা বিভাগের উপসচিব ড. বিলকিস বেগম স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘স্বাস্থ্য খাতে সংস্কার বিষয়ক প্রতিবেদনে বর্ণিত নিম্নোক্ত সুপারিশসমূহ যথাযথভাবে বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ এবং গৃহীত কার্যক্রমের বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগকে অবহিতকরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউসের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত ‘স্বাস্থ্য খাতের সংস্কারবিষয়ক’ মতবিনিময় সভায় এসব সুপারিশ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, দেশীয় বাস্তবতায় যেহেতু বিপুল সংখ্যক জনসংখ্যাকে সেবা প্রদান এবং চিকিৎসকগণের ব্যক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধি কল্পে ‘প্রাইভেট প্র্যাক্টিস’র প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, সেহেতু চিকিৎসকগণকে ‘প্রাইভেট প্র্যাক্টিস’ করতে হলে কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠান/হাসপাতাল/ক্লিনিকের সাথে মাসিক নির্দিষ্ট বেতনের চাকরিজীবী হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হবার শর্ত প্রদান করা যেতে পারে।
এককভাবে বা দুই বা ততোধিক ব্যক্তি একটি কোম্পানি/হাসপাতাল/ক্লিনিক হিসেবে সরকারি কর্তৃপক্ষ এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়ে ব্যবসা করতে পারবে এবং সেখানে কেন্দ্রীয়ভাবে ক্যাশ রেজিস্ট্রেশন অনুযায়ী অর্থ সংগ্রহ করা হবে এবং সে অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি কর প্রদান করবে।
সুপারিশে বলা হয়েছে, কোনোভাবেই চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী কোনো চিকিৎসক সরাসরি সেবা গ্রহিতার নিকট হতে অর্থ গ্রহণ করতে পারবেন না এবং হাসপাতাল বা ক্লিনিক বা প্রতিষ্ঠানের মোট রোগীর সংখ্যার ওপর চিকিৎসকের মাসিক আয় সম্পর্কযুক্ত হবে না। চিকিৎসক হবেন পূর্বনির্ধারিত বেতনভুক্ত কর্মচারী; কোনোভাবেই চিকিৎসা সেবায় একই প্রতিষ্ঠানে নিজে ব্যবসায়ী এবং চিকিৎসক হতে পারবেন না। চিকিৎসকের সব আয় ব্যক্তির ‘ট্যাক্স ফাইলে’ প্রদর্শিত হতে হবে।
এতে আরও বলা হয়েছে, সরকারি চিকিৎসকদের ‘প্রাইভেট প্র্যাক্টিসের’ ব্যবস্থা একই হাসপাতাল/প্রতিষ্ঠানে সরকার নির্ধারিত মূল্যে ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ করা যেতে পারে, ভারতে সরকারি চিকিৎসকগণ ‘প্রাইভেট প্র্যাক্টিস’ করতে পারেন না। সে জন্য তারা সরকার নির্ধারিত হারে (১৫ থেকে ২০ শতাংশ) ভাতা পেয়ে থাকেন।
চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত সবাই সবসময় সেবা প্রদানের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকলেও বিশেষ অবস্থার উদাহরণ ব্যতিত নির্ধারিত পেশায় ব্যয়িত সাধারণ সময় দৈনিক ১২ ঘণ্টার বেশি হওয়া উচিত নয় বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়।
সুপারিশে বলা হয়, মেডিকেল পেশায় নিয়োজিত পেশাজীবীগণের নৈতিকতা রক্ষার্থে, দেশে সমমান সম্মত ওষুধ উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে তোলার স্বার্থে, অবিলম্বে ওষুধ শিল্প ও মেডিকেল ইকুইপমেন্ট সরবরাহকারীগণের সুস্পষ্ট বিপণন পদ্ধতি প্রণয়নের প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সরাসরি চিকিৎসকের কাছে গিয়ে প্রচারের ব্যবস্থা বন্ধ করা প্রয়োজন এবং কোম্পানিগুলোকে বার্ষিক উৎপাদন, বিপণন এবং অন্যান্য ব্যয়সমূহ জনসম্মুখে প্রকাশে বাধ্য করার বিধান রাখা যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের আইন রয়েছে।
Discussion about this post