মাস্কের সুফল সবাই পাবেন। ভিড়ের মধ্যে চলাফেরায় অন্যরা তো পাবেনই, আমি নিজেও বাড়তি কিছু সুফল পাব। এ বিষয়ে গবেষণায় কিছু নতুন দিক উন্মোচিত হয়েছে। মেডিকেল নিউজ টু-ডের নিউজ লেটারে (২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১) টিমোথি হুজারের একটি তথ্যবহুল লেখায় বিস্তৃত ব্যাখ্যা ছাপা হয়েছে। বায়োফিজিক্যাল জার্নালে গবেষকদের লেখায় মাস্কের গুরুত্ব বিশেষ স্থান পেয়েছে।
বলা হয়, বাইরে ও জনবহুল এলাকায় সবাইকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। কিন্তু কেন? মাস্কের এত গুরুত্ব কেন? আমরা এর আগে এই কলামে এ সম্পর্কে লিখেছি, মুখে মাস্ক থাকলে নিজের সুরক্ষা মোটামুটি হবে, কিন্তু এর পাশাপাশি চারপাশের মানুষও সুরক্ষা পাবে। কারণ, আমি যদি করোনায় আক্রান্ত হয়ে থাকি এবং এর লক্ষণ না থাকে, তাহলে বাইরে চলাফেরায় মুখে মাস্ক থাকলে আমার হাঁচি-কাশির সঙ্গে করোনাভাইরাসবাহী ড্রপলেটগুলো মুখের বাইরে বেশি দূর যেতে পারবে না। হয়তো দুই-চার ইঞ্চি দূরে গিয়েই মাটিতে পড়ে যাবে। এভাবে অন্যদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমবে। এখন নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, অন্যরা তো কিছু সুরক্ষা পাবেই, কিন্তু নিজেও অনেক সুরক্ষা পাব। কারণ, মাস্ক পরিহিত অবস্থায় আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস মাস্কের ভেতরের বাতাসের আর্দ্রতা বাড়ায়। এর ফলে করোনাভাইরাসের ক্ষতি সাধনের সক্ষমতা কমে। ফলে করোনায় আক্রান্ত হলেও এর তীব্রতা কমে যায়। এটা মাস্ক পরার একটি উল্লেখযোগ্য সুবিধা।
গবেষকেরা দেখেছেন, মাস্কের কারণে কম ভাইরাস শ্বাসতন্ত্রে ঢুকতে পারে। এর ফলে করোনার তীব্রতা কম হয়। অবশ্য অনেক গবেষক এই ব্যাখ্যার সঙ্গে একমত নন। বিতর্ক আছে।
তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় বলা হয়েছে, ঠান্ডা আবহাওয়ায় অনেক সময় শ্বাসতন্ত্রের ভেতরের অংশ শুষ্ক হয়ে যায়। এ সময় মাস্কের ভেতরের আর্দ্র বাতাস প্রশ্বাসকে আর্দ্র করে। এই আর্দ্রতা শ্বাসনালিকেও আর্দ্র করে। এই প্রক্রিয়া ভাইরাস সংক্রমণ রোধে সহায়ক।
দেখা গেছে, কাপড়ের মাস্ক এ ক্ষেত্রে ভালো ফল দেয়। তবে দেখতে হবে, কাপড়ের মাস্ক যেন মুখের ত্বকের সঙ্গে ভালোভাবে মিশে থাকে। আবার সে কারণে যেন ত্বকের ক্ষতি না হয়, সে ব্যবস্থাও থাকতে হবে। এন-৯৫ ধরনের মাস্ক সেদিক থেকে ভালো।
টিকা নেওয়ার পরও কেন মাস্ক?
এখন দেশে টিকার প্রথম ডোজ চলছে। কিন্তু এ রকম ধারণা যেন না হয় যে টিকা নেওয়ার পর মাস্কের দরকার নেই। এটা ভুল চিন্তা। কারণ, টিকার সুফল পেতে বেশ কিছু সময় লাগে। অন্যদিকে টিকা নেওয়ার পরও প্রশ্বাসের সঙ্গে আমি ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারি। এর ফলে হয়তো আমার করোনা হবে না, কিন্তু কিছু সময় পর্যন্ত আমার নিশ্বাসের সঙ্গে ভাইরাস ছড়াতে পারে। তাই টিকার পরও বেশ কিছু সময় পর্যন্ত মাস্ক পরে চলা দরকার।
সতর্কতা অব্যাহত রাখতে হবে
দেশে হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করার জন্য অন্তত ১০ কোটি মানুষকে টিকা নিতে হবে। এটা সময়সাপেক্ষ। আবার এই সময়ে বাইরের দেশ থেকে প্রবাসী বা বিদেশিরা আসবেন। তাঁদের টিকা গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। তাই খুব শিগগির একেবারে স্বাভাবিক অবস্থায় যাওয়া সম্ভব নয়। কাজকর্ম চলবে। কিন্তু হাত ধোয়া, মাস্ক পরা প্রভৃতি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাও অব্যাহত রাখতে হবে। এটা আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন প্রণালির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে নিতে পারলেই কেবল আমরা করোনাভাইরাস আবার ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা কমিয়ে আনতে পারব।
আব্দুল কাইয়ুম, মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক
Discussion about this post