বিশেষ প্রতিবেদক
সমাজসেবায় গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ‘স্বাধীনতা পদক-২০২১’ এর জন্য মনোনীত হয়েছেন অর্থোপেডিক সার্জন অধ্যাপক ডা. এম আমজাদ হোসেন ।তিনি একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, একজন মানবিক চিকিৎসক। মুক্তিযুদ্ধকাল থেকে সারাজীবন কাটিয়েছেন দেশ ও জনগণের সেবায়।
রোববার (৭ মার্চ) মন্ত্রিপরিষদের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কমিটি ও অর্থনৈতিক) ড. শাহিদা আকতার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, নয় জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠান ২০২১ সালের স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি সমাজসেবা/জনসেবা ক্যাটাগরিতে মনোনিত হন।
এই অসাধারণ অর্জনের প্রতিক্রিয়ায় অধ্যাপক ডা. এম আমজাদ হোসেন বলেন, অনুভূতি প্রকাশ করার ভাষা নেই। আমি কাজ করে গেছি, আমি একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। বঙ্গবন্ধু সরকার আমাকে বৃত্তি দিয়ে মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ করে দিয়েছে। চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত অবস্থায় ডা. আর জে গাস্টের সাথে কাজ করার সময় আমি মানুষের কল্যাণে কাজ করার সুযোগ পাই। তাঁর পর থেকে আমি কাজ করে যাচ্ছি।’
সমাজসেবামূলক কাজেও অগ্রণী এই চিকিৎসকের জন্ম দিনাজপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চল চিরিরবন্দর উপজেলায়।েএই পিছিয়েপরা জনপদে গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেছেন স্কুল-কলেজ । তিনি বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই আমি পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রকে (সিআরপি) অনুরোধ করেছি ওইখানে শাখা খুলতে। ডায়াবেটিস সেন্টার ও কারিগরি স্কুল বানানোর চেষ্টা করছি। এর পাশাপাশি মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে গেছি।’
দিনাজপুরের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ও সমাজসেবামূলক কাজ করার জন্য তিনি এবি ফাউন্ডেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান করেছেন। উত্তরের জেলা দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে গড়ে তুলেছেন বেশকিছু স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান।এ ছাড়া উত্তরবঙ্গের তথা দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীন অন্যতম প্রতিষ্ঠান আমেনা-বাকী রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ডা. এম আমজাদ হোসেন।
তাঁর পদক বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধুর পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে উৎসর্গ করে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ছাড়া যেমন বাংলাদেশ হতে পারতো না, তেমনই বঙ্গবন্ধু তাঁর পরিবার ছাড়া হতে পারতেন না। আমরা যে সম্মানটা পেয়েছি তা আসলে বঙ্গবন্ধু এবং এদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের পাওয়া উচিত। এ দেশের জন্য যাঁরা অবদান রেখেছেন এ সম্মাননা আসলে তাঁদেরই।’
অধ্যাপক ডা. আমজাদ হোসেন বর্তমানে ল্যাবএইড হাসপাতালের অর্থোপেডিক ও আর্থোপ্লাস্টি সেন্টারের চিফ কনসালট্যান্ট ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন। এছাড়াও তিনি সার্কভুক্ত ৮টি দেশের অর্থোপেডিক সার্জনদের সংগঠন অর্থোপেডিক অ্যাসোসিয়েশন অব সার্ক কান্ট্রিজের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন ।
অধ্যাপক ডা. এম আমজাদ হোসেন একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় উরুতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ভারতের সামরিক হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধুর আমন্ত্রণে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা দিতে দেশে আসা আন্তর্জাতিক বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জন ডা. আর জে গাস্টের অধীনে অর্থোপেডিক চিকিৎসা শুরু করেন।
তাঁর নেতৃত্বে দেশে কোমর ও হাঁটু প্রতিস্থাপন (হিপ অ্যান্ড নি রিপ্লেসমেন্ট) সার্জারিতে এসেছে বৈপ্লবিক সাফল্য। আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে এ পর্যন্ত সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি এ ধরনের সার্জারি সম্পন্ন করেছেন এ চিকিৎসক।
Discussion about this post