হার্টবিট ডেস্ক
বাংলাদেশে প্রতি পাঁচজনে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে। আক্রান্ত নারীদের অর্ধেক এবং দুই তৃতীয়াংশ পুরুষ জানেনই না তাঁর উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে। অথচ এ কারণে হৃদ্রোগ ও হৃদ্রোগজনিত মৃত্যুঝুঁকি বহুগুণে বেড়ে যায়। এ কারণে এ বিষয়ে গণসচেতনতা তৈরি, ওষুধ এবং চিকিৎসাসেবা সহজলভ্য করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীতে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় বিশেষজ্ঞরা এ তথ্য তুলে ধরেন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অনেক বেড়ে গেলে তাকে বলে হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ। অর্থাৎ রক্তচাপের মাত্রা দুইটি ভিন্ন দিনে ১৪০ / ৯০ মিলিমিটার পারদ চাপ বা তার বেশি হলে বুঝতে হবে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে। তবে বয়স ভেদে রক্তচাপ কিছুটা কম বা বেশি হতে পারে।
অধিকাংশ সময় উচ্চ রক্তচাপের নির্দিষ্ট কোন লক্ষণ এবং উপসর্গ থাকে না। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সকালের দিকে মাথাব্যথা, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, হৃৎপিণ্ডের অনিয়মিত স্পন্দন, দৃষ্টিশক্তিতে পরিবর্তন এবং কানে গুঞ্জন অনুভূতি প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা করা না হলে বুকে ব্যথা বা অ্যানজাইনা, হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইল এবং হার্ট বিট অনিয়মিত হওয়ার পাশাপাশি স্ট্রোক হতে পারে। এ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপের কারণে কিডনির ক্ষতি হয়।
কর্মশালায় জানানো হয়, দেশে প্রাপ্তবয়স্কদের ২১ শতাংশই উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। তবে উদ্বেগের বিষয় হলো—উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ৫১ শতাংশ নারী এবং ৬৭ শতাংশ পুরুষ এ বিষয়ে জানেনই।
বাংলাদেশ এনসিডি স্টেপস সার্ভে, ২০১৮-এর তথ্যের বরাত দিয়ে কর্মশালায় জানানো হয়, আক্রান্তদের মধ্যে ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন প্রতি সাতজনে একজনেরও কম। গ্লোবাল বারডেন অব ডিজিস স্টাডি, ২০১৯-এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে মৃত্যু এবং পঙ্গুত্বের প্রধান তিনটি কারণের একটি উচ্চ রক্তচাপ। যেখানে দেশে মাত্র ২৯ শতাংশ স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে উচ্চ রক্তচাপ বিষয়ে প্রশিক্ষিত কর্মী রয়েছেন।
কর্মশালায় জানানো হয়, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সরকারের বেশ কিছু নীতি ও কর্মপরিকল্পনা থাকলেও এ বিষয়ে দেশব্যাপী উল্লেখযোগ্য কোনো কর্মসূচি নেই। সরকার বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা অনুসরণ করে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে ২০২৫ সালের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের প্রাদুর্ভাব ২৫ শতাংশ কমানোর (রিলেটিভ রিডাকশন) জাতীয় লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এ লক্ষ্য অর্জন করতে হলে সঠিক নিয়মে উচ্চ রক্তচাপ পরীক্ষা, চিকিৎসা সেবা গ্রহণ এবং উচ্চ রক্তচাপজনিত হৃদ্রোগ ও অন্যান্য অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বিষয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। সব হাসপাতাল এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা এবং ওষুধ নিশ্চিত করতে এ খাতে সরকারের বাজেট বাড়াতে হবে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বিশেষজ্ঞরা কিছু পরামর্শ তুলে ধরেন। তাঁরা বলেন, অতিরিক্ত লবণ খাওয়া পরিহার করা, ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা, তামাক ও মদ্যপান পরিহার করা, অতিরিক্ত ওজন কমানো এবং নিয়মিত ব্যায়াম ও শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকার বিষয়ে সবাইকে সচেতন করতে হবে।
উল্লেখ্য, বিশ্বে প্রতিবছর ১ কোটিরও বেশি মানুষ উচ্চ রক্তচাপের কারণে মারা যায়, যা সকল সংক্রামক রোগে মোট মৃত্যুর চেয়েও বেশি।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স কনফারেন্স রুমে দুই দিনব্যাপী এ সাংবাদিক কর্মশালায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এসব তথ্য তুলে ধরেন।
আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের (জিএইচএআই) সহায়তায় গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) কর্মশালার আয়োজন করে।
কর্মশালায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন—সরকারের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জনস্বাস্থ্য অনুবিভাগ) সৈয়দ মজিবুল হক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির (এনসিডিসি প্রোগ্রাম) লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের রোগতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশের ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার (এনসিডি) ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ব বিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. খালেকুজ্জামান, ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্টস স্কুল অব পাবলিক হেলথের সেন্টার ফর নন কমিউনিকেবল ডিজিজ অ্যান্ড নিউট্রিশন বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মলয় কান্তি মৃধা, জিএইচএআই বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মো. রূহুল কুদ্দুস, এনটিভির হেড অব নিউজ অ্যান্ড কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স জহিরুল আলম এবং প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের।
Discussion about this post